খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে আপত্তি নেই আ.লীগের

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ৩০ ২০১৮, ২৩:৫৯

একুশে জার্নাল ডেস্ক:দুর্নীতির মামলায় কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ বিদেশ পাঠানোর আলোচনা আওয়ামী লীগের মধ্যেও রয়েছে। চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশ যেতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলটির কোনও আপত্তি থাকবে না। বরং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তারা করবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করেন— খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো দল ও সরকার উভয়ের জন্য স্বস্তির হবে। এ কারণে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবি’র সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নিয়েছে সরকারি দল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন—উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনে বিদেশ পাঠানোসহ সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

শুক্রবার (৩০ মার্চ) সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলেন। এক্ষেত্রে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে ‘চিকিৎসার জন্য’ বিদেশে পাঠানোর একটি চিন্তা সরকারের মধ্যে আগেই ছিল। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে সরকারি দল মনে করে, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বিদেশ পাঠানো তাদের জন্য নিরাপদ হবে। এটা সম্ভব হলে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন বলে বিএনপি জোরালোভাবে আর দাবি তুলতে পারবে না। এছাড়া, তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দাবিও বিএনপির জন্য দুর্বল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি বিএনপির তরফ থেকে রাজপথে আন্দোলনের চাপও কমে আসবে। সরকারও ভার মুক্ত হবে। জনগণের দৃষ্টিও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হবে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে চাইলে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য এরই ইঙ্গিত বহন করে বলে সরকারি শিবিরের অভিমত।

এদিকে দলীয় চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে বিএনপি মহাসচিবের দাবিকে সরকারের তরফে নেওয়া উদ্যোগেরই ফসল বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে সপ্তাহ তিনেক আগে নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। বিএনপি ঘরানার একজন বুদ্ধিজীবী ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের একজন প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে পাঠানো প্রস্তাবে ওই সময় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনও সাড়া আসেনি বলে জানা গেছে। তবে অতি সম্প্রতি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসা এবং শুক্রবার বিএনপি মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি,বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবের এই প্রস্তাবকে বিদেশ যেতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন,‘অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার প্রাপ্য জামিন দিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া। চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
খালেদা জিয়া যে চিকিৎসাগুলো নিয়েছেন তার সবই বিদেশে উল্লেখ করে ফখরুল তার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা করারও দাবি জানান।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল তার বক্তব্য কিছুটা ঘুরিয়ে বলেন,‘আমি পরিষ্কারভাবেই বলেছি, তাকে মুক্তি দিতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা তিনি (খালেদা জিয়া) ভেবে দেখবেন। দেশেও করতে পারেন, দেশের বাইরেও করতে পারেন।’
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সত্য হলে, তার (অসুস্থতার) মাত্রা বুঝে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই সরকার নেবে। সুচিকিৎসা যদি দেশে হয় তাহলে দেশে, আর বিদেশে নেওয়ার দরকার হলে তাই হবে। চিকিৎসকরা যদি বোর্ড বসিয়ে বলেন যে, বিদেশে পাঠাতে হবে, তাহলে পাঠাবো। সেই পরামর্শ দিলে অবশ্যই পাঠানো হবে।’

সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে চায় এমন একটি আলোচনা বিভিন্ন মহলে রয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিব খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে দাবি তুলেছেন, বিষয়টি সমাঝোতা কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের এটিতে গুজব বলে উড়িয়ে দেন।