গ্রেফতার-নির্যাতন সমস্যা সমাধানের রাজপথ নয় – আল্লামা আবদুর রব ইউসুফি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ২৫ ২০২১, ০০:৪৬

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নায়বে আমীর,
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সহসভাপতি,
মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি বলেছেন,গ্রেফতার নির্যাতন করা সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
একুশে জার্নালে পাঠানো একটি বিবৃতির মাধ্যমে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন- একটি সরকারের পক্ষে সমাজের কোন একটি বিশেষ অংশকে বা মতাদর্শের লোকদেরকে গ্রেফতার,নির্যাতন কঠিন কোন কাজ নয়; সেই মতাদর্শের অংশটি যত শক্তিশালীই হোক না কেন! ইতোমধ্যেই মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব ও মাওলানা মামুনুল হককে দুইটি সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপদে গ্রেফতার, মাওলানা মাঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও মাওলানা আজীজুল হক ইসলামাবাদীসহ শত শত নেতা-কর্মীকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রেফতার এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। বিষয়টি এ কথাও প্রমাণ করে যে, হেফাজত কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী নয়, বরং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে বিশ্বাসী।

যদিও দুয়েকটি জায়গায় হালকা বাধার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সরকার চাইলে সে বাধাকে উপেক্ষা করে সেখানেও গ্রেফতার অভিযান চালাতে পারতো। তবে এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থেকে সরকার সাময়িকভাবে পিছু হটেছে। এটা সরকারের ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় এবং কৌশলগত আচরণ।

বিশ্বের কোন একটি অঞ্চলে অধিকতর শক্তিধর কোন রাষ্ট্র তার প্রতিবেশী তুলনামূলক দুর্বল ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের উপর সামরিক আগ্রাসন না চালিয়ে অনেক সময় বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালায়। সরকারও এক্ষেত্রে শক্তি এবং ক্ষমতার দাপট না চালিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থা অবলম্বন করতে পারে। সম্প্রতি চলমান ইস্যুতে হেফাজতের কয়েকজন শীর্ষনেতার সরকারের উচ্চপর্যায়ে সাক্ষাত এবং হেফাজতের অভিভাবক আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী তাঁর দলের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণের প্রস্তাব সরকার সমস্যা সমাধানের ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। তাঁর এ বক্তব্য অভিভাবকসুলভ বটে।

মুসলমানদের কোন এক যুদ্ধে মূল কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া একটি ক্ষুদ্র অংশ রোম সম্রাটের সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তাদের উপর বিভিন্ন ধরণের জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু ইসলাম ধর্মে থেকে বিচ্যুতির প্রস্তাব মেনে নিতে তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় সম্রাট তাদের কাছ থেকে একটা প্রতীকী সম্মান পাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তাব দেয় যে, গ্রেফতারকৃত দলপতি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফাহ রা. যদি সম্রাটের কপালে চুম্বন দেন, তাহলে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফা রা. নিজের অনুসারীদের জীবন বাঁচানোর জন্য তাতে রাজি হয়ে গেলেন এবং কৌশল অবলম্বন করে নিজের জামার আস্তিনের অংশ সম্রাটের কপালে রেখে তার উপর চুমু খেলেন। এই সম্মানপ্রাপ্তিকে পুঁজি করে গ্রেফতারকৃত কাফেলাকে সম্রাট মুক্তি দিয়ে দেয়।

আমাদের সরকারপ্রধানও হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের পক্ষ থেকে যে আচরণ পেয়েছেন, তাতে ইতিবাচক দিক বিবেচনা করতে পারেন। তবে এটাই বাস্তব, জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে কোন একটি মতাদর্শের লোককে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে প্রতিশোধের স্পৃহা থেকে যায়। এতে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।