গীবত; তাঁরা এবং আমরা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ০১ ২০২০, ১৮:৪২

।। কে আই ফেরদৌস ।।

একদিন ইমাম বোখারী রহ. তার হাদিসের ক্লাস শেষ হবার পরও অপেক্ষা করছিলেন। সব ছাত্র ক্লাস থেকে চলে যাবার পর তার এক অন্ধ ছাত্র আবু আশ’আরকে বললেন,-তোমার কাছে আমি তো একটি অন্যায় করে ফেলেছি। তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে?

একদিন ক্লাসে আমি হাদিস পড়াচ্ছিলাম। একটা প্রসঙ্গে তুমি মনের খুশিতে হাত এবং শরীর নাড়িয়ে কিছুটা নাচের ভঙ্গি করেছিলে। সেটা দেখে ক্লাসের বাকি ছাত্ররা তোমার দিকে চেয়ে মুচকি হেসেছিলো।
তখন আমিও মুচকি হেসেছিলাম।

কিন্তু পরে মনে হলো, যেহেতু তুমি অন্ধ। আমাদের হাসি তুমি দেখোনি। তোমার দিকে আমার এই মুচকি হাসিটাও গীবতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ছাত্র বললেন, ইয়া শায়খ। এতটুকুই?
শায়খ ইমাম বোখারী বললেন, হা, এতটুকুই।
ছাত্র বললেন, আল্লাহর কসম! আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।

অন্যের গীবতের ব্যাপারে কতো সতর্ক ছিলেন আমাদের আকাবিরগণ! আর আমরা, প্রতি দিনই অন্যের গীবতের পাহাড় গড়েও হৃদয়ে অনুশোচনা আসে না। এখন তো এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে,  কোরআন হাদিসের ওয়াজের মাঝখানে হাজার হাজার শ্রোতার সামনে মাইক ফাটিয়ে এক বক্তা আরেক বক্তার গীবত করেন।

এক আলেম আরেক আলেমের গীবত করছেন প্রকাশ্যে, তাও আবার বুক ফুলিয়ে! এক সেলেব্রিটি আরেক সেলেব্রিটিকে নিয়ে প্রকাশ্যে গীবত করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! আর রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের কথা না-ই বা বললাম।

গীবত হচ্ছে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো নিকৃষ্ট। যার গীবত করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছ থেকে ক্ষমা পাবে না, স্বয়ং আল্লাহও গীবতকারীকে ক্ষমা করবেন না। এমন কি হাশরের কঠিন বিচার দিনেও!

নতুন বছরের আমাদের অন্যতম প্রতিজ্ঞা হোক ‘গীবত বর্জন’। আল্লাহ যেনো আমাদের সবাইকে ভয়ঙ্কর গীবত থেকে রক্ষা করেন। আমিন।

লেখক: সম্পাদক, একুশে জার্নাল ডটকম; ফাজেল, আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।