কোরআন শপথ করে বললেও প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করি না: নুরুল হক নুর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ০২ ২০২৩, ০৫:০৮

দেশের বিরোধী দলগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইলেও সরকার তা চায় না। এ কারণেই বিরোধীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে। ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ও বাংলাদেশের সংকট’–শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর। এ সময় তিনি বলেন, ‘কোরআন শপথ করে বললেও প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করি না।’

গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গণ অধিকার পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভায় নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। কিন্তু সরকার তা দিতে চাচ্ছে না। এই দাবিতে যখন আন্দোলন হচ্ছে তখন পুলিশ গুলি করছে, মামলা-হামলা করছে। অনেককে জেলে নিয়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে। এখানে যদি একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকে, তাহলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কিন্তু সরকার তা চাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যদি কোরআন শপথ করেও বলেন সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন, তা-ও বিশ্বাস করি না।’

সরকার দেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে খাদের কিনারায় নিয়ে এসেছে দাবি করে নুর আরও বলেন, ‘আমেরিকার ছয়জন কংগ্রেসম্যান বাইডেনের কাছে বাংলাদেশিদের জন্য পিস কিপিং বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছেন। আজকে শেখ হাসিনার অবৈধ শাসনের কারণে কেন পিস কিপিং বন্ধ হবে? নগর পুড়িলে দেবালয় রক্ষা হয় না। দেশ সংকটে পড়লে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমাদের এখন নাইজেরিয়া, নিকারাগুয়ার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।’

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেকেই ভিসা নীতি নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে। কিন্তু এটা খুবই লজ্জার। যারা হাসিঠাট্টা করছে, তাদের দুই কান কাটা গেছে। যে সমস্ত দেশে নির্বাচন নিয়ে ভিসা নীতি প্রণয়ন হয়, সেগুলো নির্বাচনের পরে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনের আগেই এসেছে। কারণ, ইতিমধ্যে দুবার ভোট চুরি হয়েছে। ভোট চুরির প্রমাণ আর দরকার নেই।’

আমীর খসরু বলেন, ‘কিছু লোক লোভ সামলাতে পারছেন না। আবার অনেকেই ভয়ে সরকারের পক্ষে কাজ করছেন। বিচার বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য মাধ্যমের যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যেভাবেই যুক্ত থাকেন, আটকে যাবেন।’

শেখ হাসিনার অধীনে আর কেউ নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে সবাইকে নিয়ে ওয়াদা করেছিলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। কিন্তু সেবার দিনেও ভোট চুরি হয়েছে, রাতেও হয়েছে। আবারও একই সুর। কাউকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু এসব বলে আর লাভ নাই।’

সভায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে আজ দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। ভিসা নীতিতে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, এ দেশে কী ধরনের নির্বাচন হয়।’

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের লবিস্ট বা কনসালট্যান্টরা চেষ্টা করছেন, এই যে প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা থেকে ঘুরে আসলেন সেখানে হোয়াইট হাউস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা কংগ্রেসে দেখা করা যায়। গত ৫২ বছর আমরা স্বাধীন হয়েছি, এরশাদের মতো নেতাও আমেরিকা গিয়ে কারও সঙ্গে দেখা না করে ফেরেননি। এই প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে।’

সভায় গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকারিয়া পলাশের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসিন রশীদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রমুখ।