কে প্রকৃত আলেম কিংবা বুদ্ধিজীবি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০৮ ২০২১, ১১:৫০

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত:: ইমাম গাজালি তার সময়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও শিক্ষক বলে গণ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার আকলি জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা উপলব্ধি করতে পেরে ইয়াকিন অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদ ত্যাগ করে তাজকিয়া ও তাসাউফের পথে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। বেশ অনেক বছর লোকালয় থেকে দূরে থেকে তিনি এই ইয়াকিন অর্জন করে পুনরায় লোকসমাজে ফিরে এসেছিলেন। এভাবে তিনি শরিয়া, ফালসাফা, কালাম এবং তাজকিয়া ও তাসাউফে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তাকে মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে একজন প্রধান জ্ঞানতাপস হিশেবে বরণ করে নেয়া হয়েছে।

আজকের পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ডের অনুকারকরা যারা বুদ্ধিজীবি তকমাটিকে বিশেষ এক শ্রেণির জন্য সীমিত করে রাখতে চাইছে, আমার ধারণা তা্দের সামনে আজকে যদি ইমাম গাজালিও আসতেন, তাহলে তাকেও তারা বুদ্ধিজীবি বলে মানতে চাইত না।

ইলম বলেন, জ্ঞান বলেন—এসবকে কেন আমাদের বিভাজিত করে দেখতে হবে? এই বিভাজিত বিশ্ববীক্ষা হল একটি রেনেসাঁ, রিফর্মেশন ও এনলাইটেনমেন্ট উত্তর ইউরোকেন্দ্রিক সেক্যুলার ডিসকোর্স। ইসলাম এই বিভাজনকে ক্ষতিকর মনে করে। ইসলাম একটি বহুত্ববাচক কিন্তু একত্রীভূত বিশ্ববীক্ষা প্রস্তাব করে। যা একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ জীবনবীক্ষা। আংশিক কিংবা খন্ডিত নয়।

এজন্যে বিশ শতকের আশির দশক থেকে ইসমাইল রাজী আল ফারুকী, সৈয়দ আলী আশরাফ, মুঈনুদ্দীন আহমদ খান, সৈয়দ নাক্বিব আল আত্তাস, সৈয়দ হোসেইন নসর, জিয়াউদ্দিন সরদার, শাহ আবদুল হান্নান প্রমুখ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে ইসলামের পুনঃসংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তারা জ্ঞান ও শিক্ষার “ইসলামীকরণ” আন্দোলনের উদ্বোধন করেছিলেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা ইলম ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার মধ্যে যে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছে তা দূর করতে চেয়েছিলেন। তারা ইমান, ইলম এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে একটি সম্পূর্ণ এবং পরস্পর সংযোজিত কাঠামোতে গ্রথিত করতে চেয়েছিলেন। এই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন কার্যকর উসূল বা নীতিমালা প্রস্তাব করেছিলেন।

এই আন্দোলন বিভিন্ন কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তো আর শেষ হয়ে যায়নি। ইসলাম যে একটি মৌলিক ও উন্নততর সভ্যতা ও সংস্কৃতির সম্ভাবনা হাজির করে—তা যদি সফল ও বাস্তবায়িত করতে হয় তাহলে আধুনিক জ্ঞান ও শিক্ষার এই “ইসলামীকরণ”-ই বলি কিংবা ইসলামের “জ্ঞানায়ন” বলি—যাই বলি না কেন—ইমান, ইলম ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার একটি প্রসারিত, পূর্ণাঙ্গ এবং সংযোজিত কাঠামো এবং ডিসকোর্স আমাদের হাজির করতেই হবে। আর যারা এই ডিসকোর্সের সাবস্ক্রাইবার হবেন তারাই হবেন প্রকৃত আলেম বা বুদ্ধিজীবি।