করোনাকালে ইসলামী ধারার নিউজ পোর্টাল এবং আর্থিক প্রণোদনা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৮ ২০২০, ২৩:২৭

।। মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ ।।

আমি গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে টুকটাক লিখি৷ আগে মাসিক পত্রিকায় লিখতাম৷ লিখতাম সাপ্তহিক মুসলিম জাহানসহ পাক্ষিক মুক্ত আওয়াজেও৷ দৈনিকে ইসলামী পাতায় কখনও কখনও৷ সংবাদপত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ৷ দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিনে যার পদচারণা অভিভাবক পর্যায়ে৷ আমাদের অগ্রপথিক৷ তিনি সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক ও প্রদায়কও৷ অনলাইন পোর্টালেও এগিয়ে তিনি৷ বর্তামানে ইসলামটাইমস সম্পাদক৷ আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে মাওলানা শরীফ মুহাম্মদের গদ্যশৈলীর ভক্ত ৷ লেখালেখি অঙ্গনে আরও অনেকই রয়েছেন ৷ আমি মাওলানা শরীফ মুহাম্মদের নামটি অন্য কারনে বিশেষভাবে লিখলাম৷ একটি স্মৃতির কথা মনে হলো তাই৷ তিনি তখন দৈনিক আমার দেশের সাব -এডিটর৷ আমি তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্দালভীর টঙ্গি ময়দানে প্রদত্ত বয়ান অনুবাদ করে পাঠালাম দৈনিক আমার দেশে৷ তিনি ছাপলেন৷ আরেক বার ছোট একটি লেখা পাঠালাম তিনি সেটিও ছাপলেন আ্মার দেশের ইসলামী পাতায়৷ আমি উৎসাহিত হলাম৷ তিনি আমাকে আরেকটু অনুপ্রাণিত করতে লেখক সম্মানী বিল পাঠালেন৷ একটি চেক৷ দস্তখত লড়াকু লেখক মাহমুদুর রাহমানের৷ আমার একটি একাউন্ট আছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে৷ সঞ্চয় জমা না দেওয়ায় সেটি বার বার বন্ধ থাকে৷ আবেদন বা প্রক্রিয়া করে সেটি আবার চালু করি৷ তিনি যখন চেক দিলেন তখন আমার হিসাব অকেজু! আবেদন করে আবার চালু করতে হবে৷ আমি চেক না ভাঙ্গিয়ে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিলাম যেহেতু মাহমুদুর রহমানের দস্তখত এবং শরীফ মুহাম্মদের উদারতা সেই চেকে৷ যাক আমি এই গল্পও বলার জন্যও লিখছি না আজ৷

আজ আমি ছোট একটি লেখা লিখেছিলাম গত রাতে৷ বোশেখের বৃষ্টিমুখর গভীর রাতে লেখা৷ তখন বাসায় বিদ্যুৎ নেই৷ বাইরে বৃষ্টি৷ মশার আক্রমণে ঘুম হয় নি৷ করোনাকালে শেষ রাতে জাগতে চেষ্টা করি৷ না জাগলেও নানা চিন্তায় ঘুম কম হয়৷ বাসায় আমি চায়ের কথা বলতে ভয় পাই৷ যদিও কফি ও চা থাকে৷ চিনির দাম বাড়তি৷ ডাল বিশ টাকা বেড়েছে৷ পিঁয়াজের মুল্যও বেড়েছে৷ এই ফিরিস্ত লম্বা৷ এখন চা চিনির টাকাও বাঁচিয়ে চলতে হয়৷ কেন চলতে হয় যারা অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না তারা ছাড়া অন্যরা এইসব বোঝবেন না৷
আজ সকালে আলুর দমে রুটি খেলাম৷ কিছু না বলতেই এক কাপ চা হাজির দস্তরখানে৷ বউকে শুকরিয়া জানালাম চায়ের জন্য৷ না বলতেই মনের ভাব ধরতে পেরেছে৷ করোনাকালে বাসায় বলেছি কৃচ্ছতা সাধন করতে৷ প্রতিবেশীর প্রতি খেয়াল রাখতে৷ গতকাল বিকেলে ডিম ও দুধ সংমিশ্রণে পুডিং তৈয়ার করল বউ সাহেবা ৷ প্রতিবেশী এক নিসঙ্গ বয়স্কের জন্য৷ হাতে তৈয়রি বরইয়ের আচার ও আট টুকরা পুডিং দিয়ে পৌঁছে দিতে বলল৷ আমার ভাগে দুই টুকরা ছিলো৷ বউয়ের এই উদারতায় আমি তৃপ্ত৷ করোনাকালে এই পুডিং এর চেয়ে সেই নিসঙ্গ মুরব্বীর কিছুক্ষণ সঙ্গ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ৷

যাক লেখার সময় চা কফির প্রয়োজন পড়ে৷ রাতে মশার কামড় খেয়ে খেয়ে তৈয়রি লেখাটি নিউজ পোর্টাল আওয়ারইসলাম ও পাথেয় টুইয়েনেটিফোরে দিয়েছে৷ প্রিয় হুমায়ূন আইয়ূব ও প্রিয় মাসউদুল কাদির আমাকে ইনবক্সে লেখার লিংক দিয়েছেন৷ আমি ইনবক্সে কথা বললাম৷ করোনাকালে এই জাতীয় নিউজ পোর্টালের হাল হাকিকত নিয়ে৷ আমি নিজেও অনুসন্ধানে নিয়মিত লেখক বা উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে সম্পাদক মাহফুজুর রহামান হোসাইনীর কথা জানি৷ ভেতরের কথা৷ হাড়ির খবর বলা যেতে পারে৷ এই মিডিয়া সংগ্রামীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন৷ পাবলিক ভয়েস, ইনসাফ, একুশে জার্নাল আরও অনেকগুলো জার্নাল৷ ইসলামটাইমসের কথা পৃথকভাবে বললাম না৷ সেই অভিজ্ঞ সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদের পোর্টালে বিজ্ঞাপন কয়টি তা তো প্রকাশ্যেই দেখা যায়৷ অনুসন্ধানে একটি বিজ্ঞাপন রয়েছে৷ কত টাকার সেটি আমি জানি৷ করোনাকালে এইসব নিউজপোর্টালে কর্মরতরা তো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারবেন না৷ বলার মানসিকতাও নেই৷
লেখক জহির উদ্দিন বাবর ভাই, মুফতি এনায়েতুল্লাহ ভাই তো এইসব দৈনিকের পাতা ও নিউজ পোর্টালে দীর্ঘ এক যুগের উপরে কাজ করেন৷ আমার চায়ের চিনি বা চায়ের পাতা না থাকার খবর তারা ভালো বলতে পারবেন৷ লেখক সম্মানী কে কত কীভাবে পান তা তাদের ভালো করে জানা৷ এই অঙ্গনে এই দুই সংগ্রামীর অবদান অনেক৷ যদি সংগ্রামী রোকনে রাইয়ানের কথা বলি তাহলে লেখাটি লম্বা হবে৷ আমার কাছের প্রিয় আলী হাসান তৈয়ব ভাইয়ের সংগ্রামের কথা জানি৷ জানি সৈয়দ শামসুল হুদা ভাইয়ের নুরবিডির কথা৷ আলী হাসান তৈয়ব ভাইয়ের দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ মনে হয় বন্ধ হয়েছে! নাম না জানা সংবাদপত্রে যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের অবস্থা কাছাকাছি করোনাযুগে৷

আপনার কি মনে হয় যাদের নাম বললাম তারা করোনাকালে আর্থিক সংকটের কথা কেউ বলবেন? পোর্টালে কর্মরত সংবাদকর্মীদের বাস্তব হালত বলবেন৷ স্টাফদের হালত জানাবেন? কেউ বলবেন না সংকট ও সমস্যার কথা৷

দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহ ভাই মনে হয় ভালো ক্যামেরার মালিক৷ তিনি লাইভ করলে ভিউ হয় লাখ লাখ৷ কথা বলেন গুরুত্বপূর্ণ৷ করোনাকালে লাশ দাফন কফন ও অবহেলার একটি ভিডিও দেখলাম আজ সকালে বাচ্চাসহ৷ যেন আমি এই সময়ে মরলে বাচ্চা কমপক্ষে লাশের কাছে থাকে৷
দাঈ আহমাদুল্লাহ গোপনে বা প্রকাশ্যে সম্মান বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন৷ আমাদের সমাজে আমাদের লেখক প্রকাশক ও মিডিয়াকর্মীদের জন্য কয়েক ডজন আহমাদুল্লাহ প্রয়োজন৷ লেখকরা লেখকদের জন্য৷ লেখকরা প্রকাশের জন্য৷ প্রকাশকরা লেখকের জন্য৷ দাঈ অপর দাঈর জন্য এগিয়ে আসবেন সুখে দুঃখে৷ থাকবেন পাশে৷ সবটা মিলে একটি সমাজ৷ এক কমিউনিটি৷ সহমর্মিতা ও সহযোগিতামূলক সমাজ৷ লক্ষ্য দীন প্রচারে কাজ করে যাওয়া৷ মানুষের দীন দুনিয়ার কল্যাণচিন্তা করা৷

আমি শুধু ইসলামী ঘরাণার কথা বলছি না৷ লেখক হিসেবে করোনাকালে সবার পাশে থাকতে অনুরোধ করতেই পারি৷ আ্মার এই লেখাটি লেখকদের অপমান বা অসম্মানের জন্য নয়৷ আমি যাদেরর নাম বললাম সবাই দান করতে, উপহার দিতে ভালোবাসেন৷ তবে এই সময়ে সম্মান বজায় রেখে প্রণোদনা প্রয়োজন অনেকের৷ পোর্টালের প্রয়োজন অক্সিজেন বেঁচে থাকতে৷ শ্বাস প্রশ্বাস যেন নিতে পারে সুন্দর পরিবেশে৷

সম্মান বজায় রেখে দেওয়া যেতে পারে সম্মানী৷
যারা সম্মানের সঙ্গে প্রনোদণা দিতে জানেন তারা পাঠক হিসেবে বা মুহিব্বিন হিসেবে৷ ভক্ত বা ভালো লাগার মানুষ হিসেবে পোর্টালে বিজ্ঞাপনও দিতে পারেন৷ তাদের হাতে কিছু টাকা থাকলে অন্যদের সহযোগিতার সুযোগ পাবেন এই হিসেবেও দিতে পারেন৷ আপনার প্রিয় লেখককে আপনার ভালোলাগা ও ভলোবাসা প্রকাশের সুযোগ৷ এই ভালোবাসা হতে পারে নানা উপহারে৷
লেখকদের সংবেদনশীল, অনুভপতিপ্রবন মন থাকে৷ টাকা থাকলে অভাবীকে কিছু দিতে মন চায়৷

লেখাটি লেখার সময় একটি চড়ুই পাখি তার বাচ্চার জন্য খাবার সংগ্রহ করছে দেখছি৷ আমি এক মুঠো ভাত দেয়ালে রেখে আসবো এখন৷ আমার এখন কফি বানাবে আমার ছেলে বা আমার মেয়ে ৷ দেখি চিনি, দুধ ও কফির সব সামগ্রি রান্না ঘরে আছে কি না!
আল হামদুলিল্লাহ চা বা কফি তৈয়ার হচ্ছে৷ লেখকদের করোনাকালেও বা পরেও দাওয়াত৷

লেখক লেখকের জন্য৷ মানুষ মানুষের জন্য৷
আমি বাসায় করোনাকালে চুড়ই পাখির কলরব শুনতে পাচ্ছি৷ আনন্দের কলরব৷ কিচিরমিচির৷ সংসারে সুখের কলরব৷ চড়ইয়ের সংসারে দুটি বাচ্চা৷ তৃণলতার ঘরে তারা সুখেই আছে৷

লেখার শেষে করোনাকালে বন্দী লেখকের কথা বলি৷
তিনি ঢাকায় বাসা ভাড়া থাকেন৷ আছেন লকডাইনে৷ চা কফি তো বিলাসী খাবার৷ সেটি তো আগেই শেষ৷ প্রয়োজণীয় খাবর আছে কি না মুখ ফুটে আমাকে বললেন না৷ বললেন জুররি পাঁচ শত টাকা পাঠাতে৷ হয়তো কোনো অভাবীকে দেবে বা নিজেই খাদ্য সংকটে৷ আমি জীবনসাথীকে বললাম, আমাকে করজ দাও টাকা থাকলে পাঁচ শ টাকা৷ পরেরটা থাক গল্পের৷ এটি আবার গল্প নয় জীবনের গল্প এবং বাস্তব৷
এই লেখার সময় মুহতারম সাইমুম সাদী ভাইয়ের কথা স্মরণ করছি৷
তিনি আমার কাছে ফোনে খবর নিলেন৷ আমি এই সময়ে ফোন কম ধরি তবে অন্যকে যদি উপকার করতে পারি তাহলে ধরি৷ সাদী ভাই জানেন তাকে একজন নওমুসলিমের নম্বর দিয়ে বলেছি তিনি এই সময়ে রোযা রাখেন যখন ঘরে… ৷ থাক সব তো বলা যায় না৷
করোনাকালে তৈয়ার হচ্ছে কষ্টের গল্প, সংগ্রামের কবিতা এবং চেপে রাখা জীবনের উপন্যাস৷ বদলে যাওয়া পৃথিবীতে সব ধারার লেখকের জীবন হোক সুখময়৷ কফি ও চায়ের আসর প্রানবন্ত হোক তাদের গল্পে৷ আলাপে৷ তৈয়ার হোক নতুন পৃথিবীর কথা৷

মানুষকে সুখ দাও হে রাব্বুল আলামীন৷