ওরা আমাকে যেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০৯ ২০২১, ১৩:৪৪

(গত পর্বের পর থেকে)

আমি গুম হই মঙ্গলবারে, এই কয়দিন এক রূমেই বন্দী থাকি। নামায-খাবার, ঘুম সবই এই রূমে, বাহির থেকে কোনো আওয়াজই পাই না, তিন দিনে দৈনিক পাঁচ বার করে পনের বার আযান হয়ে গেছে, এর কোনো আযানই আমি শুনি নি। তখন মনে হলো, হায়! আমি এ কোন জগতে বাস করছি? আযানের আওয়াজ যে এত মধুর এই তিন দিনে তা অনুভব হলো, এদিকে জামাতের সাথেও নামায পড়া হয় নি, জামাতে নামায যে কত শান্তি তাও স্মরণ হলো। আমরা যারা সর্বদা পাঁচ বার আযান শুনি, জামাতের সাথে নামায আদায় করি এরা হয়তো এ মধুর সুর আর শান্তির স্বাদ অনেকটা অনুভব করি, কিন্তু যখুনি এগুলো থেকে বঞ্চিত হব -এভাবে যেনো কারো না হয়- তখন বুঝতে পারবো আমরা কী হারিয়েছি। আমার আম্মা লন্ডনে যাওয়ার পর একদিন বলেন, লন্ডনে ঘরে তিনি আযানের আওয়াজ পান না, কারণ পাবলিক মাইকে ব্রিটেনে আওয়াজ দেওয়ার অনুমতি নেই। এদিকে তিনি মহিলা হওয়ার জন্যে মসজিদেও যাওয়া হয় না, এ জন্যে তিনি অনেক অশান্তি অনুভব করেন, এক ধরনের শূন্যতা সব সময় অন্তরে বিরাজ করে। সে দেশে আবার অন্য ব্যবস্থা আছে, যদি কেউ আযানের শব্দ শুনতে চায় তাহলে এক ধরনের স্পীকার ঘরে স্থাপন করলে শুনতে পাবে, মসজিদের মাইকের সাথে সে স্পিকারের কালেনশন দিয়ে দেওয়া হয়, এতে করে প্রতি ওয়াক্তের আযান ঘরে বসেই শোনা যায়। এভাবে একদিন আমাদের আম্মা-আব্বার ঘরেও এই স্পিকারটি স্থাপন করা হয়, এতে করে তিনি স্পিকারে প্রতি ওয়াক্তের আযানের আওয়াজ শুনতে পান। ওইদিন আম্মা ফোন দিয়ে বলেন, আজ মনে হচ্ছে তিনি অন্তরে শান্তি পাচ্ছেন।

আমিও যখন আযানের সুর থেকে বঞ্চিত হলাম, জামাতের নামায থেকে বঞ্চিত হলাম, তখন আম্মার ওই কথা স্মরণ হয়, আর নিজে ভেতরে এক ধরনের অশান্তি ও মনোকষ্ট অনুভব করি। এভাবে দেখতে দেখতে তিন দিন পর চলে আসে শুক্রবার। ওইদিন কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। এমনিতেই আযানের আওয়াজ শুনি নি, জামাতের সাথে নামায পড়া হয় না অনেক দিন হয়ে গেলো, এরমধ্যে আবার জুমআর নামায থেকেও বঞ্চিত হলাম। আহ! কী এক কষ্ট তখন অনুভব করি, এইতো মাত্র সপ্তাহ দিন আগেই মসজিদে জামাতের সাথে জুমআর নামায পড়ি, আজ মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে তা থেকে বঞ্চিত হলাম, না জানি এভাবে আর কতদিন বঞ্চিত হতে হবে।

.

যাইহোক, জুমআর নামায পড়ে অপহরণকারীদের দল নেতারা মাথায় টুপি গায়ে পাঞ্জাবি পরে আমার সাথে দেখা করতে আসতে, ওইদিন তেমন কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করে নি। প্রথম দু/তিন ঘুমে সমস্যা করলেও এরপরে আর করে নি৷

এখানে আমাকে কী কী জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো তা পুরোটা না হলেও কিছুটা আইডিয়া দেই।

আমাকে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করে, কিছু প্রশ্ন করে বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে আর কিছু করে আমার মনোভাব-আদর্শ জানা জন্যে। একবার আমাকে জিজ্ঞেস করে, শাতিমে রাসুল ব্লগারদের হত্যা করাকে আমি সাপোর্ট করি কিনা, আমি বলি, হ্যাঁ, করি। তারা বলে, এগুলো কেনো করি? এগুলোতো বাংলাদেশের আইন সাপোর্ট করে না। জবাবে আমি দু’টি উত্তর দেই, এরা হচ্ছে ডাকাতের মতন, ডাকাতকে যেভাবে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করলে কোনো অপরাধ হয় না, এমনিভাবে এদেরকে হত্যা করাও কোনো অপরাধ নয়, কারণ এরা ডাকাতের চেয়েও বেশি মারাত্মক।

তাদেরকে আমি আরেকটি উত্তর দিতাম, বলতাম, আপনারা দেশের আইনের কথা বলতেছেন, আপনারা যে আমাকে গুম করেছেন, এটা কোন আইনে আছে? এটাওতো দেশীয় আইনে নেই, আপনারাওতো আইন মানেন নি। তখন তারা আটকে যেতো।

এগুলো ছাড়া আমাকে জিজ্ঞেস করতো, তাগুত, জিহাদ, জিহাদের শর্তাবলী, ফেদায়ী হামলা, গণতন্ত্র, ইসলামি বিচার ব্যবস্থা, দেশের বিভিন্ন ইসলামি দল, বিশ্বের বিভিন্ন গ্লোবাল দল ও মানহাজ সম্পর্কে। আমি এগুলোর উত্তর অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে দিতাম, কোনো ধরনের ছলচাতুরী বা অপব্যাখ্যা না করেই দিতাম। তখন তারা জিজ্ঞেস করতো আমি এগুলো জানি কীভাবে? আমি বলতাম, আমি একজন আলিম মানুষ, মুফতি মানুষ, এগুলো তো আমার শাস্ত্রীয় বিষয়, এগুলো জানা তো শাস্ত্রের মধ্যেই পড়ে। আমি আরো বলতাম, আমি একজন লেখক, পাঠক। এজন্যে আমার অধ্যয়নের পরিধি মাদরাসার পাঠ্যক্রমের বাহিরেও বিস্তৃত। আমার পড়ালেখা আরো অনেক আছে, আমি বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন ধারা, বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়েও তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতাম। আমি বলতাম, বাংলাদেশের সংবিধান আমি নিয়মিত পাঠ করি, আমার ছাত্রদেরকে বলি, তারা দেশের সংবিধান ও আইন সম্পর্কে যেনো স্পষ্ট ধারণা রাখে, তাহলে দেশে বসবাসের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। এরপরে তাদের সামনে আমি বাংলা সাহিত্য নিয়েও আলোচনা করতাম, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম চন্দ্র, রবি ঠাকুর, বিভূতিভূষণ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ুন আহমেদ, আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদসহ বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীদের জীবনেতিহাস আলোচনা করে তাদেরকে বলতাম, দেখুন, আমি এগুলো পড়তাম আমার জানার আগ্রহ থেকে। তাই বিভিন্ন বিষয়ে আমার জানা-শোনা আপনাদেরকে অবাক করার মতো কোনো কান্ড নয়। তারাও বলতো হুজুর হয়ে এগুলো জানা অস্বাভাবিক। তবে এর কারণে কোনো নির্যাতন করতো না, করেও নি।

আমার কাছ থেকে এগুলো শুধু মুখে শুনে নি, বরং এগুলো লিখিয়ে নেয়। লেখার জন্যে কাঠপেন্সিল আর কাগজ দিত। কাঠপেন্সিলের ধার কমে গেলে ধার করিয়ে দিত। ধারাবাহিক এক সপ্তাহ পর্যন্ত তা লিখতে থাকি। কত পৃষ্ঠা লিখেছি তার সঠিক হিসেব নেই, তবে কম হলেও দেড়শ পৃষ্ঠা হবে এটা নিশ্চিত। লিখতে লিখতে আমার হাতে ব্যথা হয়ে যায়।

তাদের একাধিক দলনেতা আসতো, কিন্তু তাদের প্রশ্ন ছিলো একই ধরনের। একই প্রশ্ন একাধিক জন একাধিকবারই করতো। তাই আমি উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে উত্তর দিতাম, যাতে করে আমার উত্তরের মধ্যে কোনো ফাঁক-ফোকর না থাকে।

এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ক্রসেরও হুমকি দিত। এক দলনেতা সে আমাকে অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে, মাঝেমধ্যে সে আবার ক্রসের হুমকি দিত। একবার আমি অনেকটা উত্তেজিত কণ্ঠে তাকে বলি, আপনি বার বার আমাকে ক্রসের হুমকি দিচ্ছেন কেনো? আপনি কি মনে করেন আমি এগুলোকে ভয় পাই? আমি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখি, আল্লাহ চাইলে এখানে আপনি মারা যেতে পারেন আর আমি নিরাপদে বের হয়ে যেতে পারি। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না, আমি একমাত্র তার উপরই ভরসা রাখি।

আমার উত্তর শোনার পর পরবর্তীতে সে আর আমাকে কখনো হত্যার হুমকি দেয় নি, বরং আমার সাথে কোমল আচরণ করা শুরু করে। একবার সে আমাকে বলে তার দু’টি সন্তান আছে, আমি যেনো তার এই সন্তানদ্বয়ের জন্যে দোয়া করি। সে বলে, কী দোয়া করবে? আমি বলি, আমি দোয়া করবো, ‘আল্লাহ যেনো আপনার এই দুনো সন্তানকে মুজাহিদ আলেম হিসেবে কবুল করেন।’

এ কথা শুনে সে হেসে উঠে, এবং বলে আমি খারাপ হতে পারি, কিন্তু আমার সন্তান যেনো ভালো হয়।

একদিন সে রাতে আসে, এসে বলে, নিউজিল্যান্ডের একটি মসজিদে এক উগ্র খৃষ্টান মুসলিমদেরকে গণহারে গুলি হত্যা করে, এরপর সে গুলি করার ভিডিও তার মোবাইল দিয়ে দেখায়, এবং বলে দেখছো কীভাবে গেইমের মতো মুসল্লীদের হত্যা করতেছে?

দেখলাম, তার মনে হঠাৎ উম্মাহের জন্যে দরদ উতলে উঠছে।

এভাবে তাদের বিভিন্ন নেতারা আসতো, আমি বিভিন্নভাবে তাদের সাথে ফ্রি হতে থাকি। তাদের প্রত্যেক নেতাকে আমি একটিই আবেদন করতাম, যে, আপনার অন্তত একটি সন্তানকে আলেম বানান। কেউ কেউ বলতো, ইনশাআল্লাহ আপনার কথা রাখবো।

একবার একজন বললো, আলেম বানিয়ে কী করবো? সে বড় হয়ে জঙ্গি হয়ে যাবে। আমি বলতাম, আপনার ছেলে জঙ্গি কেনো হবে? তাকে ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের মতো আলেম বানাবেন, সে বড় হয়ে সরকারের হয়ে কাজ করবে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া লিখবে। তখন দেখতাম, তারা ফরীদ মাসউদ সাহেবের নাম অত্যন্ত রূঢ়ভাবে নিত। কখনো বলতো এই শুয়োরের নাম নিও না, কখনো সরকারী দালাল, কুত্তা ইত্যাদি। এভাবে অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথে তার কথা স্মরণ করতো।

মনে মনে ভাবলাম, হায়রে, দালাল হয়েও কোনো লাভ হল না, যাদের জন্যে তিনি কাজ করতেছেন তারাই তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করতেছে।

.

একদিন শুয়ে আছি, তখন শুনি পাশের রূমে কে জানি কী পড়তেছে। আমার কাছে মনে হলো, সে পত্রিকা পড়তেছে। পড়ার সময় শুধু এতটুকু মনে হল, মুফতি, মুহাদ্দিস ইত্যাদি। এতটুকু পড়ার পর সে বলতেছে তাহলে সে মুফতিও, মুহাদ্দিসও!! সাথে সাথে বিস্ময়ের সুর।

কিছুক্ষণ পর আমার বাথরুমে যাওয়া লাগলো, তখন এক ব্যক্তি বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার জন্যে আসলো, দেখলাম, তরুণ ছেলে, মুখে সামান্য দাড়ি, আমার কাছে মনে হলো, সে একজন নামাযি ছেলে। আলেম-উলামার প্রতি ভক্তি থাকতে পারে।

তখন সে আমাকে বাথরুমে নিতে নিতে বললো, ভাই, আপনি কি মুফতি? আপনি কি মুহাদ্দিস? আমি জবাবে বললাম, লোকে তো তাই বলে। তখন সে বলে, ভাই আপনি অনেক বড় মানুষ। আমি বললাম, আপনারা এই বড় মানুষকে বন্দী করে রাখছেন। তখন সে বলে, আপনি আমাদের বন্দী নন, মেহমান!

আমি তার কথা শুনে অবাক হলাম, যে আমি একজন মেহমান, আর মেহমানদের সাথে তাদের এই বিচিত্র মেহমানদারি!

যাইহোক, তার প্রশ্ন করার ধরণ দেখে মনে হলো সে আমার ব্যাপারে পত্রিকা থেকে জেনেছে। একটু পূর্বে আমি পত্রিকা পড়ার যে শব্দ শুনেছি এটা তারই শব্দ।

যাইহোক, এভাবে বাথরূমের কাজ শেষ হলো।

.

এরপর দেখি একদিন এক নেতা আসলো। অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে আমার সাথে কথা বললো, আমার কাছে মনে হলো, রাগে-গোস্বায় চুল ছিড়ে ফেলবে। আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। পরে সে বললো, আমার পরিবার আমাদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে ‘সংবাদ সম্মেলন’ করেছে।

আমি বুঝলাম না এতে তাদের রাগ করার কী আছে? মনে মনে ভাবলাম, হয়তো এই সংবাদ সম্মেলনের কারণে তারা আমার ব্যাপারে মারাত্মক কিছু করতে পারবো না এ জন্যে এরকম রাগ করতেছে।

আমি বললাম, আপনারা আমাদেরকে ছেড়ে দিলেই তো হয়৷ তাহলে পরিবার কিছুই করবে না, আর আপনাদের রাগ করা লাগবে না।

প্রথমে তারা বলতো আব্দুর রহীমকে দু’দিন পর ছেড়ে দিবে, পরে বলতো, আমাকে ও আব্দুর রহীম দুনোজনকে পাঁচ দিন পর ছেড়ে দিবে। এতে আমরা অনেক খুশি হই, কিন্তু তিন দিন, পাঁচ দিন যাবার পর তারা আবার নতুন করে তিন দিন, পাঁচ দিনের প্রলোভন দেখাতো। এভাবে প্রলোভন দেখিয়ে চলে যায় প্রায় দু’সপ্তাহ।

তখন আমি বুঝে নেই। তাদের আশ্বাস কোনো আশ্বাসই নয়। এগুলো মিথ্যার ফুলঝুরি।

তাদের আর কোনো কথায় বিশ্বাস করতে পারি নি, শুধু মনে মনে বলি, যে দিন তাকদীরে লিখা আছে সেদিনই বের হবো৷ জীবিত হয়ে বা লাশ হয়ে।

ইদানীং আবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদও কমে গেছে। পুরো দিনে একবার দুই বারের বেশি আসে না।

কোনো কোনো দিন পুরো দিনেও একবার আসে না।

তখন আমি তেলাওয়াতের মাত্রা বাড়াতে থাকি, কোনো কোনো দিন দশ/পনের পারা পর্যন্ত হয়ে যায়। আর বেচারা আব্দুর রহীম শুধু শুধু বসে থাকে। কোনো কথাই বলে না। তার সাথে আমার জীবনের প্রথম সাক্ষাতেই এত বড় উপাখ্যান রচিত হয়ে গেলো।

সে ভালোভাবে পড়তেও পারে না, লিখতেও পারে না, না পারে বাংলা, না আরবি, আর না পারে ইংরেজি। কষ্ট করে কোনোভাবে সে তার নামটা লিখতে পারে, তাও ভালোভাবে পারে না। লেখার সময় আব্দু-এর ব এবং দ এক হয়ে আবু হয়ে যায়। তার নাম আব্দুর রহীমের জায়গার ‘আবুর রহীম’ হয়ে যায়। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্লাস টু পর্যন্ত, এরপরে পারিবারিক দৈন্যতার কারণে জীবিকার্জনে লিপ্ত হয়ে যায়। যা পড়েছে তাও ভূলে যায়। কয়েক বছর আছে তাবলীগে গিয়ে কয়েকটি সূরা শিখেছে, মাথায় টুপি, থুতনিতে দাড়ি, গায়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা শিখেছে। শরীর-গতরে অনেক মোটা, প্রায় নব্বই কেজি তার ওজন। এই মোটা শরীরে পাঞ্জাবি-পায়জামার সাথে যখন পাগড়ী পরে তখন তাকে মনে হয় অনেক বড় আলেম। আলেম না হলেও দীন সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। আমিও তাই মনে করেছিলাম। তাই জামাতের সাথে নামায পড়তে গিয়ে তাকে একামত দিতে বলি। এখন দেখি তার একামতেও ভূল! শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার’ চার বারের জায়গায় আট বার বলে ফেলেছে, ‘ক্বাদ কা মাতিছ ছালাহে’ এর জায়গায় বলতেছে ‘ফাদ ফা মাতিছ ছলাহ’! এ ছাড়া রয়েছে সিফাত ও মাখরাজের ভূল!

আমিতো অবাক, তার বেহাল দশা দেখে।

তখন সে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা আমাকে বলে, ছোটকালে দু’বার মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়, এজন্যে কোনো কিছু সহজে শিখতে বা মুখস্থ করতে পারে না৷ দেখে কুরআন শরীফ পড়াতো দূরের কথা, সে আরবি কায়দা এমনকি আরবি অক্ষর পর্যন্ত চিনে না।

 তাকে দেখলে কি এভাবে মনে হয়?

তখন আমি মনে মনে ভাবি, যেহেতু এখানে থাকাই লাগতেছে, কতদিন থাকবো তাও জানা নেই, তাহলে সময়টা কাজে লাগাই। আমি কুরআন কারীম তেলাওয়াত করবো, আর তাকে এর ফাঁকে কায়দা শিখিয়ে কুরআন পড়া পর্যন্ত নিয়ে যাবো। যেহেতু কিডন্যাপাররা ব্যবহার ভালো করতেছে, তাই তাদেরকে বললে আশাকরি তারা তার জন্যে আরবি শেখার কায়দাও এনে দিবে। তার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলি, কিন্তু সে রাজী হয় নি। সে আশায় আছে যে, তাকে তারা খুব দ্রুত ছেড়ে দিবে। এজন্যে শিখতে আগ্রহী হয় নি, কিন্তু তাদের কথা যে, মিথ্যার ফুলঝুরি এ কথা সে মানতে নারাজ।

শুধু সে বসে টেনশান করে, আমার সাথে কোনো কথাই বলে না। দু’সপ্তাহে তার সাথে তিন/চার বারের উপর কথায়ই হয় নি। আমার প্রতি তার অনাগ্রহ দেখে নিজেকে কুরআন কারীম তেলাওয়াত ব্যস্ত রাখি।

প্রায় আঠার দিন পর তাদের দলনেতা এসে বলে তারা আমাদেরকে এখান থেকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিবে। কোন জায়গায় পাঠাবে তা বলে নি।

চলবে..

মিহনা’র আগের পর্বগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন