ঐতিহাসিক বুদ্ধ ধ্বংসস্তুপ পাহারা দিচ্ছে তালেবান

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ০৮ ২০২১, ১৯:৩৭

আগেরবার ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তানের বিখ্যাত বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তালেবান। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বামিয়ান বুদ্ধমূর্তির সেই ফাঁকা পাথুরে গুহায় পাহারা দিতে তালেবান নিয়োগ করেছে সশস্ত্র পাহারাদার! খবর এফপি’র।

আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশের বুদ্ধস্তম্ভগুলো প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে উপমহাদেশের বৌদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কঠোর ইসলামি শরিয়া আইন জারির নামে ২০০১ সালে এসবের অধিকাংশই ধ্বংস করেছিল তালেবান। এসব মূর্তি ধ্বংস করতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলো শত শত তালেবান কর্মী। এখানে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায় টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে।

সে সময় এ নজিরবিহীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংসের ঘটনা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন ও নিন্দার সৃষ্টি করেছিল। বামিয়ানে এখন গেলেও সেখানকার ফলকে লেখা থাকতে দেখা যাবে, ২০০১ সালে তালেবানের হাতে বুদ্ধকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্টের পেনসিলভানিয়ার পেন স্টেট অ্যাবিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ আলী ওলোমির মতে, বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ।

বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শনসমূহকে এভাবে ধ্বংস করা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ তালেবান সদস্য বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। এ তালেবান সদস্য সম্প্রতি বামিয়ান প্রদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক কার্যালয়ে নিযুক্ত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। যদি তারা তা এটা করেই থাকেন, তাহলে ইসলামিক আমিরাতের কাছে নিশ্চয়ই কোনো যুক্তি ছিল। কিন্তু এখন আমরা আমাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এ ব্যাপারে সম্প্রতি ইউনেস্কোর সাথেও কথা বলেছি।

উল্লেখ্য, বামিয়ান উপত্যকাটি হিন্দু কুশ পর্বতমালার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে উৎপত্তির পর বৌদ্ধধর্মের দূর পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছানোর নিদর্শন এখানে পাওয়া যায়। শতাব্দী ধরে ফরাসি, তুর্কি, চীনা এবং গ্রিক সংস্কৃতির প্রভাব এখানে লক্ষণীয়। এসব নিদর্শনের বেশির ভাগই অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।

আফগানিস্তানে অবস্থানরত ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক ফিলিপ মারকুইস বলেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখন খুবই নড়বড়ে। তালেবান হয়তো বুঝতে পারছে যে ঐতিহ্য রক্ষা তাদের আয়ের একটি উৎস হতে পারে। এখন আমাদের দেখতে হবে যে এ উদ্যোগ কীভাবে কাজ করে। তালেবান প্রশাসন চায় যেন আমরা একসাথে কাজ করি। প্রত্মতাত্ত্বিকদের জন্য এটা বেশ নিরাপদ বলেই মনে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর প্রায় ২ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে বামিয়ানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাদুঘর উন্নয়নে শ্রমিকেরা কাজ করছেন।