এসপিসি ওয়ার্ল্ড: নতুন বোতলে পুরনো মদ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ০৫ ২০২১, ১৭:৩২

আবদুল হক: এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস একটি ধূর্ত লুটেরা প্রতিষ্ঠান। এরা ‘ফ্রিল্যান্সিং’ ও ‘ই-কমার্স’-এর নামে সরল লোকদেরকে ঠকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। নিবন্ধন ফির নামে নতুন গ্রাহকদের থেকে এরা যে টাকা নেয়, তারই কিছু অংশ কমিশন হিসেবে দেয় প্ররোচক গ্রাহকদেরকে। কিন্তু বলে, এটা দেওয়া হচ্ছে কোম্পানি থেকে। বর্তমানে আমার এলাকায়ও বহু লোক এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে থাকি বলে প্রায়শই প্রশ্নের সম্মুখীন হই। লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা এর সদস্য হবে কি না। কাজেই আমার প্রতিবেশী কিছু স্বজনদের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক এ প্রসঙ্গে আমি সবিনয়ে আমার মতামত তুলে ধরছি।

সর্বপ্রথম আমি এসপিসি ওয়ার্ল্ডের নাম শুনি হাফিয মাওলানা মা’সূমের মুখে। তিনি তাঁর অ্যাকাউন্ট সেটআপে সহযোগিতা নিতে আমার কাছে গিয়েছিলেন। এটা গত বছরের কথা, তখনও এসপিসির প্রতিষ্ঠাতা আলামিন বাইশ লাখ মানুষের থেকে তিন শো কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয় নি। আমি মা’সূম সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এর সদস্য হলে তিনি যে টাকা পাবেন সেটা কার টাকা এবং কীসের বিনিময়ে তিনি তা পাবেন। তিনি এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন নি, তার বদলে আমেরিকায় অবস্থানকারী একজনকে ফোনে ধরিয়ে দিয়ে আমাকে কথা বলতে অনুরোধ করেন। আমি সেই লোককেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তর না পেয়ে হতাশ হই।

আসলে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর কারও কাছে নেই। সেজন্যেই নেট ঘেঁটেও আমি এর কোনো ব্যাখ্যা যোগাড় করতে পারি নি। তাই আমি আমার বন্ধু মাওলানা মা’সূমকে বুঝাতে চেষ্টা করি যে, এটা স্রেফ এক ভুয়া প্রতিষ্ঠান। আপনার টাকাপয়সা মেরে দিয়ে হঠাৎ পাততাড়ি গুটিয়ে পালাবে। কিন্তু তিনি আমার কথায় আস্থা রাখতে পারছিলেন না। অগত্যা আমি ধর্মীয় নীতির কথা বলি। বলি যে, দেখুন, ইসলামের দৃষ্টিতে পণ্য বা শ্রমের বিনিময়ে মূল্য পেতে হয়। এখানে তো সেটা নেই। আপনি যে মুনাফা নেবেন, সেটা তো নিশ্চয়ই অন্য কারো-না-কারো টাকা। আপনি তা নেবেন কীসের বিনিময়ে?

আসলে এসপিসি হলো সরকারিভাবে অবৈধ ঘোষিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের ডিজিটাল সংস্করণ। ডেসটিনি বন্ধ হবার পর ডেসটিনির সাবেক কর্মকর্তা ও এসপিসির বর্তমান সিইও ডেসটিনির ধারণাকে ভিত্তি করে এরই ডিজিটাল রূপ হিসেবে দাঁড় করায় এসপিসি ওয়ার্ল্ড। প্রক্রিয়াটা সেই পিরামিড আকৃতিরই। এরা প্রথমে পুরনো কোনো সদস্যের সূত্রে একজনের কাছে ১২০০ টাকার বিনিময়ে একটি অ্যাকাউন্ট বিক্রি করে। পরে সেই অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা ফেরত দেয়। তারপর বলে, তাদের অ্যাপে প্রতিদিন ৫টি অ্যাড দেখলে ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে যোগ হবে ১০ টাকা। কাজেই আপনি যদি ১০০টি অ্যাকাউন্ট কেনেন, তাহলে প্রতিদিন আপনার অ্যাড ভিউ বোনাস ১০০০ টাকা। তারপর রয়েছে রেফার‌্যাল হিসেবে আপনার অধীনস্থ প্রতি ১০টি আইডি থেকে ২০ টাকা করে ২০০ টাকা। এভাবে এসপিসি থেকে আপনার প্রতিদিন আয় হবে ১২০০ টাকা। অর্থাৎ আপনার মাসিক আয় ৩৬,০০০ টাকা।

মা’সূম সাহেব আমাকে গতকাল ইনবক্সে এসপিসি থেকে তাঁর পাওয়া ‘স্টার’ ব্যাজের ছবি পাঠিয়েছেন। স্টার হতে হলে কারো অধীনে কি ৩০০ সদস্য থাকতে হয়? জানতে ইচ্ছে করছে না। যদি তা-ই হয়, তাহলে তাঁর মাসিক আয় ১ লাখ ৮ হাজার টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি হবার কথা। আমার বন্ধু অনেক টাকা আয় করছেন, এটা আমার জন্যে আনন্দের ব্যাপার। তবে শুধু এটুকু বলি, আপনি যা করছেন তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে না, ই-কমার্সও নয়। আরেকবার বলে রাখি, আপনি একটি প্রতারকচক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আপনি কী অ্যাড দেখেন আমি জানি না, তবে শুনেছি এসপিসির নিজেদের নিম্নমানের কিছু পণ্য রয়েছে, অন্য কেউ এদেরকে বিজ্ঞাপন দেয় না। কাজেই বিজ্ঞাপন দেখা বাবৎ টাকাও দেয় না কেউ। এরা কইয়ের তেলে কই ভাজছে। হঠাৎ দেখবেন, ভাজা মাছটি মুখে নিয়ে বেড়ালের মতো দৌড় দিয়েছে!

ক্রিকেটার মাশরাফি এসপিসির বিজ্ঞাপক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গতকাল তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করে এদেরকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ বিকাশ, নগদ প্রভৃতি অর্থ হস্তান্তরের মাধ্যমগুলিকে এসপিসির সবরকম লেনদেন নিষিদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করি খুব শিগগির সরকারও এসপিসি ওয়ার্ল্ড এবং এরকম অন্যসব প্রতারকচক্রকে অবৈধ ঘোষণাপূর্বক এগুলোর পরিকল্পকদের আটক করে দেশের সহজ-সরল জনগণকে বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে।

ট্যাগ: #SPC, #SPC_world, #SPC_WORLD_EXPRESS, #এসপিসি।