এই দেশ সবার জন্য সমান?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ১৪ ২০২১, ০৯:০১

আবুল কাসেম আদিল

তিনজন মাদরাসা-ছাত্রী একই সময় উধাও। আমাদের প্রশাসন তরিৎ মাদরাসার প্রিন্সিপালসহ চার শিক্ষককে গ্রেপ্তার করলেন এবং মাদরাসাটি বন্ধ করে দিলেন। পরে জানা গেল, মনের সুখে ছাত্রীরা বাড়ি ছেড়েছে; এতে শিক্ষকদের কোনো ভূমিকা নেই। কাছাকাছি সময়ে স্কুলের তিন ছাত্রী উধাও। কিন্তু এজন্য স্কুলের প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তার হতে হয় নি। তা না হওয়াই যৌক্তিক।

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কয়েকজন ছাত্রের চুল কেটে দিয়েছেন। এজন্য তাকে গ্রেপ্তার হতে হয় নি। পক্ষান্তরে কাছাকাছি সময়ে একজন মাদরাসার শিক্ষক কয়েকজন ছাত্রের চুল কেটে দিয়ে হাজতবাসী হয়েছেন—মাদরাসা বিশেষায়িত শিক্ষা, যেখানে দীক্ষাও শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও।

এরকম উদাহরণ দিলে অসংখ্য দেয়া যাবে। তারপরও বলবেন, এই দেশ সবার জন্য সমান?

কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কুরআনের অবমাননা হয়েছে। হতে পারে, এখানে কোনো ভুল বোঝাবুঝি আছে। কিন্তু যেভাবে ফেবু পণ্ডিতরা ‘কোনো হিন্দু এই কাজ করতে পারেন না’ বলে তদন্তের আগে রায় দিয়ে দিচ্ছেন, এরকম কি কোনো মুসলিমের বেলায় আপনারা করতে পারেন? ধরুন এর বিপরীত ধর্মী কাজ কোনো আলেম অথবা কোনো সাধারণ মুসলিম করেছেন বলে প্রচারিত হলো, তখন কি আপনাদেরকে এই ভূমিকায় দেখা যাবে? তখনও আপনারা তদন্তের আগে বিচার করবেন, এখন যেমনটা করছেন। এখন বলছেন—‘কোনো হিন্দু এই কাজ করতে পারেন না।’ তখন বলবেন, ‘ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী…।’ বিচার সবসময় তদন্তের আগে। শুধু রূপটা ভিন্ন।

কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে অথবা ঘটেছে বলে রটেছে, এর বিপরীত ধর্মী রটনা কোনো মুসলিমের বেলায় হলে আমি হলফ করে বলতে পারি, বিষয়ের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। কুমিল্লায় তা হয় নি। বরং আমি নিশ্চিত, এই ঘটনা সম্পর্কে যেসব প্রত্যক্ষদর্শী লাইভে বিবৃতি দিয়েছেন তাদের কপালে খারাবি আছে। গুজব ছড়ানোর দায়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার হবে।

পণ্ডিতবর্গ সবাইকে শান্ত থাকার উপদেশ দিচ্ছেন। শান্ত থাকার উপদেশ দেয়ার দরকার আছে, শান্ত থাকারও দরকার আছে। কিন্তু কিছু কিছু সময় শান্ত থাকার কথা বলা মানে অনুভূতিশূন্য হয়ে যাওয়ার কথা বলা। সীমাহীন নির্লিপ্ততা আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। আমরা অনুভূতিশূন্য হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। এভাবে আর কিছুদিন গেলে পণ্ডিতবর্গের উপদেশ ছাড়াই আমরা মূক ও বধির হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারব।