“এইডস দিবস ও আমাদের সচেতনতা”

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০১ ২০২২, ১৮:০৬

“বিশ্ব এইডস দিবস” সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এইচআইভি এইডস একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয় এবং জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানবদেহকে প্রতিরোধহীন করে দেয় এবং মানবদেহকে নিরাময়হীন অবস্থায় নিয়ে যায়, যা মূলত এইডস নামে পরিচিত।

এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য

বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য শিশু এবং তরুণদের লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছিল। এই প্রতিপাদ্যটি বেছে নেওয়ার সময় কিছু ঘটনা উপেক্ষা করার কারণে এর সমালোচনা করে বলা হয়েছিল যে সমস্ত বয়সের লোকেরা এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারে, প্রতিপাদ্যটি রোগটিকে ঘিরে থাকা কিছু কালিমা মোচন করতে এবং পারিবারিক রোগ হিসাবে সমস্যাটির স্বীকৃতি বাড়াতে সহায়তা করেছিল।রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা এইচ.আই.ভি আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এমন কি ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী এইডস পর্যায়ে পৌছে যাওয়া আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা গড়ে ৫ বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব এই চিকিৎসার মাধ্যমে। রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা ছাড়া সাধারনত একজন এইডস আক্রান্ত রোগী ১ বছরের মধ্যে মারা যেতে পারেন।

এইচ.আই.ভি ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় যার ফলে নানা প্রকারের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ে। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর অনাক্রম্যতা কমতে কমতে এইডস ঘটাবার মত অবস্থায় পৌছতে অনেক বছর লাগে। তবে শরীরে এই ভাইরাস একবার সংক্রমিত হলে তা কমানো সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ দূর করে এখনো সম্ভব নয় তাই শেষপর্ষন্ত সেই রোগীর এইডস হওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বিশ্বের খুব অল্প সংখক কিছু অঞ্চলের কিছু লোকেদের শরীরে কয়েকটি জীনে খুঁত থাকে যার ফলে এইডস ভাইরাস তাদের শরীরে সফল ভাবে সংক্রমণ করতে পারেনা। তাদের এইচআইভির বিরুদ্ধে জন্মগত প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে বলা যায়।

এইচ.আই.ভি-১ দ্বারা আক্রান্ত এবং এর চিকিৎসা না হওয়া বেশিরভাগ মানুষ এইডস রোগের শিকার হন। তাদের বেশিরভাগ মারা যায় অনুজীব দ্বারা সংক্রমণ অথবা ম্যালিগন্যানসির (Malignancy) দ্বারা যা ক্রমশ কমতে থাকা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ফলাফল। এইচ.আই.ভি সসংক্রমণ থেকে এইডস হওয়ার হার নির্ভর করে ভাইরাস, পোষক এবং পরিবেশ প্রভৃতি প্রভাবকের উপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারনত এইচ.আই.ভি সংক্রমণ থেকে এইডস হতে ১০ বছর সময় লাগে তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম বা বেশি সময় লাগতে পারে।

বায়ু,পানি, খাবার অথবা সাধারণ ছোঁয়ায় বা স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। মূলত এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে (রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ) বেশি থাকে। ফলে মানব দেহের এই তরল পদার্থগুলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে তা হচ্ছে

১. ব্লাড টান্সফিউসনের মাধ্যমে।এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।

২. আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সূঁচ বা সিরিঞ্জ অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে।

৩. আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।

৪. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে)।

৫. অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে (যৌন মিলন কতটা স্থায়ী কিংবা বীর্যপাত হলো কি না তার উপরে এর সংক্রমণ নির্ভর করে না। অরক্ষিত যৌন মিলনে অধিকাংশ সময়ে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে)।

এইডস সংক্রমণ থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায়

এইচআইভি রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ ‘নেভিরাপিন’’। সচেতনতাকেই এর একমাত্র প্রতিরোধক বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এইচআইভি সংক্রমণের কিছু উপায় জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো

১. অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া ।

২. ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।

৩. অনিরাপদ এবং অবৈধ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।

৪. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ।

৫. কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

৬. ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলা।

৭. অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড, ব্রাশ এসব ব্যবহার না করা।

 

ডা. রিফাত আল মাজিদ

জনস্বাস্থ্য গবেষক এবং চিকিৎসক 

সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ