ইসলামের দৃষ্টিতে ভুমিকম্প কেন হয় এবং ভুমিকম্প হলে করনীয় কী ?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ২৯ ২০২১, ১৯:০৯

ভুমিকম্প কেন হয় ? 

আবু হুরাইরা (রা.) কতৃক বর্ণিত, আল্লাহর নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খিয়ানত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না), জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু তার মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে,মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে, জাতির সবচেয়ে দূর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রুপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হয়ে যাবে, মদ পান করা হবে (বিভিন্ন নামে মদ ছড়িয়ে পড়বে), শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দিবে,  এমন সময় আসবে যখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে তখন একটি ভূমিকম্প সেই ভূমিকে তলিয়ে দিবে (ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে বা পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে)। [তিরমিযি কতৃক বর্ণিত, হাদিস নং – ১৪৪৭] 

এই হাদিসের মাঝে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ-পাকের পক্ষ থেকে জমিনে কখন ভুমিকম্পের আজাব প্রদান করা হয় এবং কেন প্রদান করা হয়।

আসুন জেনে নিই ভুমিকম্প হলে কী কী করনীয় ?

যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষদের উচিত মহান আল্লাহর নিকট অতি দ্রুত তওবা করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা, যেভাবে রাসূল (সা.) সূর্য গ্রহণ দেখলে বলতেন, যদি তুমি এরকম কিছু দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। [বুখারি ২/৩০ এবং মুসলিম ২/৬২৮]

ভুমিকম্পের মুহূর্তে যা করতে হবে …

• ভুমিকম্প হচ্ছে এমনটা জানতে পারার সাথে সাথে ফাকা ও উম্মুক্ত স্থানে চলে আসুন।

• উচু বিল্ডিং এ থাকলে এবং বের হতে না পারলে, শক্ত কোন বীম বা সিড়ির নিচে অবস্থান করুন।

• মানসিক চাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

• তাড়াহুড়া করে প্রবেশ/ প্রস্থান পথে ভিড় করবেন না এবং ভিড় ঠেলে যাবেন না।

• বহুতল ভবনে এক স্থানে অনেক মানুষ জমা থাকবেন না এবং ভবন থেকে দ্রুত নেমে যাওয়ার সময়ে অপেক্ষাকৃত কম ঝাকুনি দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন।

• আপনার উপস্থিতি ও অবস্থান উদ্ধারকারীদের সাথে সাথে জানাতে আপনার সেল ফোনে অবশ্যই উদ্ধারকারী ফাইয়ার সার্ভিস অথবা অন্যান্য উদ্ধারকারী দলের হেলপ লাইনের নাম্বার সংরক্ষন করুন এবং দুততার ভিত্তিতে জানাতে চেষ্ঠা করুন।

• স্নায়ুবিক দুর্বলতা বেশি হলে মাটিতে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন।

•  এই সময়ে কোন প্রকার গুজোবে প্রচার করে জনমনে আরো বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবেন না।

• এই সময়ে উচু বিল্ডিং থেকে লাফানোর মত ঝুকিতে যাওয়ার চেষ্ঠা করবেন না।

• সম্ভব হলে মাথার উপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোন শক্ত বস্তু (কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুন্ডলি)ধরে রাখুন।

ভুমিকম্প হলো কেয়ামতের আলামত

আবূল ইয়ামান (রহ.) আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি [সা.] বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইল্‌ম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভুমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। (হারজ অর্থ খুনখারাবী) তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে। [সহিহ বুখারি, অধ্যায় : ১৫/ বৃষ্টির জন্য দুআ, হাদিস নাম্বার : ৯৭৯]

আসুন আমরা আল্লাহ-পাকের নিকট ক্ষমা চাই…

সামান্য এই ভূমিকম্পেই সম্পদের মায়া ছেড়ে আমরা রাস্তায় নামছি। এটা যখন আরো বাড়বে, তখন সম্পর্কের মায়াও ছেড়ে দেবো আমরা। নিজেকে বাচানোর চেষ্ঠায় ব্রতী হবো সবাই। যখন তার চাইতেও আরো বাড়বে তখন যেই মা দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনিও তার বাচ্চাকে ছুড়ে ফেলে দেবেন, গর্ভের শিশুকেও বের করে দেবেন। ভূমিকম্পের সময় কে কি বস্থায় ছিলাম, কে টের পেয়েছে, কে টের পায়নি, চেয়ার টেবিল নড়ছিলো কিনা, ফ্যান দুলছিলো কিনা- এই সব গবেষণা পরে করলেও হবে। আগে করা দরকার তওবা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

সবচেয়ে বড় কথা হল, এটি আল্লাহ কর্তৃক একটি নিদর্শন। যাতে করে মানুষ স্বীয় অপরাধ বুঝতে সক্ষম হয়। ফিরে আসে আল্লাহর পথে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সাথে খাটি তওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।