ইসলামী ছাত্র সংগঠন ও রাজনীতি সময়ের অপরিহার্য এক অবহেলিত অংশ- মুফতি ওযায়ের আমীন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ২৭ ২০১৮, ০১:২০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইশা ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জমিয়ত সহ আরো বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ইসলামী রাজনীতির বিকাশ ও জনমত গঠনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আমরণ স্বপ্ন- এদেশের সবুজ চত্ত্বরে একদিন ইসলামের বিজয়ের পতাকা পতপত করে উড়বে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ছাত্র জমানায় এধরনের রাজনৈতিক সাপোর্টেড ছাত্র সংগঠনে অংশগ্রহন একজন ছাত্রের জন্য কতোটুকু সমিচিন।

এবিষয়ে আমরা গভীরভাবে লক্ষ করছি। সবশ্রেণীর ওলামাগণ মনে করেন এবং বলে থাকেন: শিক্ষাজীবন শেষে একজন ছাত্র যেসব কর্মসূচী বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করবেন, ছাত্র জীবনেই তার প্রশিক্ষণ নিতে হবে, নেয়া উচিৎ।

এজন্য সব মাদরাসায় ছাত্রদেরকে দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে জোড়ানো হয়ে থাকে। ছুটির সময়ে চিল্লা দেয়ানো হয়ে থাকে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কেন্দ্রীক সাপ্তাহিক ও মাসিক ছাত্র জামাত বিভিন্ন মসজিদে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।

খানকা ও পীর সাহেব কেন্দ্রীক ছাত্রদের নফল জিকির ও শোগলের আমলি মশকের জন্য বায়আত নেয়া হয়ে থাকে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার জুমা কেন্দ্রীক, ছুটি ও রমজান কেন্দ্রীক খানকাহে সময় দেয়া হয়ে থাকে। বয়ান ও খোৎবা, লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চাও হয়ে থাকে সরবে গৌরবে।

এতসব আমল চলতে পারে। চলতে হবে। কর্মজীবনে বাস্তবায়নের প্রশিক্ষণ হিসেবে। এর মধ্যে অনেক আমল নফলের পর্যায়ে। কিন্তু রাজনীতির প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই, এটা এমনিতেই হয়ে যাবে, শিখে ফেলবে এজাতীয় কথা শুধু রাজনীতির ব্যাপারেই বলা হয়ে থাকে।

অথচ আল্লাহর নবী আগমনের প্রধান লক্ষ্য ছিল দ্বীন কায়েম। এলায়ে কালিমাতুল্লাহ। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ ও থানাভবনের সম্মুখ সমরে সাময়ীক ব্যর্থতার পর দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ ছিল ইসলামী সিপাহসালার তৈরী করা। তখন শিক্ষাবিস্তারের বিকল্প অন্য কোন পথ ছিলনা।

তাই কেউ কেউ মনে করেন, ইসলামী শিক্ষায় বিরাজনীতিকরন ইহুদী খৃস্টানদের নীল নকশা। এর পেছনে পাশ্চাত্যের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। আর কিছু ওলামা সরল মনে সেই ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছেন। আকাবের ও আসলাফের পথ থেকে সরে এসেছেন।

অবশ্য অনেক ওলামা মনে করেন, ইসলামী শিক্ষাকে কোনক্রমে বিরাজনীতিকরন করা যাবে না। সচেতন সেসব ওলামাদের অন্যতম হাফেজ্জী হুজুর রাহ. বলেন, পড়ালেখা করাই ছাত্রদের বড় রাজনীতি। এবং তাঁর সংগঠনেও ছাত্র খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শায়খুল হাদীস, মুফতী আমিনী, চরমোনাইর পীর, মহিউদ্দীন খান ও খতীবে আজম সিদ্দিক অাহমদ রাহিমাহুমুল্লাহ তারা সবাই ছাত্রদের রাজনীতর প্রশিক্ষণে তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।

ইসলামী ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে? এবিষয়ে ফখরে মিল্লত আল্লামা মুহিউদ্দীন খান রহ. বলেন- ইসলামী ছাত্র সংগঠন হলো, আগামী দিনের নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করার জন্য প্রশিক্ষণ মূলক সংগঠন। আমীরে মজলিস অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক বলেন, একজন ছাত্রকে ছাত্র জমানায়-ই ইসলামের সব আমলী তাকাজার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ সা. এর সাহাবী ছাত্ররা ছাত্র জীবনেই জিহাদসহ সব আমল করেছেন। আমি নিজেও ছাত্রজীবনে একহাতে বাসের রড ধরে ঝুলে অন্য হাতে বই খুলে পড়েছি। এভাবে পড়তে পড়তে ছাত্রদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করেছি। ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্বে দিয়েছি। এ ছাত্র রাজনীতির পথধরেই অল পাকিস্তানের মন্ত্রী হয়েছি। মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস হাফিজাহুল্লাহ বলেন, ইসলামী ছাত্র সংগঠন হলো রাজনীতি শেখার জন্য। রাজনীতি করার জন্য নয়।

তাই লেখা পড়াই হলো মূল মাকসাদ। পাশাপাশি শেখার জন্য অধ্যয়ন করা, প্রশিক্ষণ নেয়া, মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহণ করা। ইলম আহরনে ব্যঘাত ঘটিয়ে রাজনীতি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এটাই আমাদের মুরব্বিদের মানহাজ। তাই আমাদের বুঝে শুনে চলা উচিত।

আজ এ ইসলামী ছাত্ররাজনীতির প্রতি যে অবহেলা তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা হচ্ছে, অদূরদর্শী এ মনোভাবের কারনে অদূর ভবিষ্যতে বামরামপন্থী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজনীতিকদের মোকাবালায় বিদগ্ধ ইসলামী রাজনীতিক খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাবে। দন্তনখরহীন সিংহ, বিষদাঁত বিহীন সর্প যেমন কোন ভীতির সৃষ্টি করেনা। ঠিক তেমনি মন ও মানস থেকে রাজনীতি উচ্ছেদ করা বিশাল জনগোষ্ঠী ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কোন ভুমিকা রাখতে পারেনা। বিরাজনীতিক মহাসমাবেশ বাতিলের মনে বিন্দু পরিমানে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়না।