কে আই ফেরদৌস: বাংলাদেশের সবচেয়ে তরতাজা ও চলমান রাষ্ট্রীয় জুলুম হচ্ছে মাওলানা মামুনুল হকসহ শীর্ষ আলেমদেরকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও প্রতিহিংসামূলকভাবে সাধারণ মামলায় হাতে পায়ে ডাণ্ডা-বেড়ি পড়িয়ে চোর ডাকাতদের মতো বারবার আদালতে আনা-নেয়ার মাধ্যমে মিডিয়া প্রদর্শনী করানো। কবে এসব জুলুম বহন থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ?

এসব জুলুমের মূল হোতারা অবশ্যই দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়ঙ্কর শাস্তির মুখোমুখি হবে এটা নিশ্চিত। কিন্তু সবচেয়ে লজ্জাজনক ও দু:খজনক বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে লাখ লাখ আলেম, মুরুব্বি, পীর-বুজুর্গ নেতা থাকা সত্ত্বেও কেউ তাঁদের মুক্তির ব্যাপারে এখন‌ও তেমন জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেন নাই।

আমার বিশ্বাস, যদি বর্তমান নেতৃত্বস্থানীয় মুরুব্বী উলামাগণ সম্মিলিতভাবে নিজেদের ঘরানা, নিজেদের গন্ডি পেরিয়ে পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে ডাণ্ডা-বেড়ি অবস্থায় এইসব মজলুম আলেমদের অসহায় মুখ দেখতে হতো না। সবাই শুধু ‘কৌশল কৌশল’ করে করে নিজেদের অনিচ্ছা ও অক্ষমতাকে লুকিয়ে রাখছেন। এটাই চরম বাস্তবতা।

বাংলাদেশের বড় বড় মুরব্বী শায়খদের দাওয়াতে তো দেখা যায় সরকারি আমলা ও মন্ত্রীরা অহরহ ছুটে যান, জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকেন। তাহলে এই নিরপরাধ আলেমরা যে বিনা কারণে জেলে নির্যাতিত হচ্ছেন এটা কি ওইসব আমলা ও মন্ত্রীদের বুঝানো যায় না?

চোখের সামনে অন্য আলেমদের অসহনীয় নির্যাতনেও কি আপনাদের ‘নরম’ দিলটা একটু নড়ে না? তাহাজ্জুদের জায়নামাজে আপনাদের দু’চোখ ভরে অশ্রু ঝরে শুনি, কিন্তু এইসব মজলুম আলেমদেরকে বারবার প্রকাশ্যে চোর ডাকাতের মতো ডাণ্ডা-বেড়ি পড়িয়ে, স্ক্রেচে করে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যায় জালিম বাহিনী, তখন কি আপনাদের চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রুও ঝরে না?

বিশ্বাস করুন, আলেমদের নতুন প্রজন্ম আপনাদেরকে কখনও ক্ষমা করবে না। তারা ভুলবে না আপনাদের এই নীরবতা। বিশ্বাস করুন, জালিম আর মজলুমের এই লড়াইয়ে আপনাদের রহস্যজনক ভূমিকা ইতিহাসে লেখা থাকবে।

এই লেখাটি যখন লিখছি, বার বার বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতিব মরহুম উবায়দুল হক রাহিমাহুল্লাহ-কে মনে পড়ছে। আমরা দেখেছি, কত বড় বড় জাতীয় সমস্যা তিনি কত সুন্দরভাবে সমাধান করেছেন শাসকদের সর্বোচ্চ মহলের সাথে আলোচনা করে। আমরা কি আর কোনো খতিব উবায়দুল হকের দেখা পাবো না প্রভু!

হে ‘তাওহিদী জনতা’!  

আপনাদেরকে বলছি। আপনারা যেভাবে আলেমদের ওয়াজ মাহফিলে “ঠিক! ঠিক!” করে গলা ফাটান, হাজার হাজার মানুষের সমাগমের আয়োজন করেন হুজুরদের ওয়াজ শুনাবেন বলে, লাখ লাখ টাকা হাদিয়া দিয়ে বক্তা আনেন হেদায়েতের ওয়াজ শুনাবেন বলে, হাজার কন্ঠে এক সাথে” সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার” তাকবির বলে প্রকম্পিত করেন আকাশ বাতাস। আপনাদের কি একটিবারও মনে হয় না, যেসব আলেমদের বয়ান শুনে আপনারা একসময় “ঠিক, ঠিক” বলে গলা ফাটাতেন, আজকে তাদেরকেই বিনা অপরাধে জেল নির্যাতন করা হচ্ছে, আদালতে হাজির করা হচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো! আপনাদের কাছে এসব কি অঠিক এবং জুলুম মনে হচ্ছে না?

যাদের ডাকে একসময় রাজপথে এসে অসত্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে রাজপথ কাঁপাতেন, সেই সব আলেমদেরকে আজ চরমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, আপনাদের মন কি একটুও প্রতিবাদী হয় না? এটাই আপনাদের ‘তাওহীদী ঈমান’?

কী লাভ হাজার হাজার ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে? যদি আলেমরা বিনা অপরাধে নির্যাতিত হোন প্রকাশ্যে! একটুও কি অপরাধ বোধ হয় না? কী জবাব দিবেন আল্লাহর কাছে এই ‘মুনাফেকি’ আচরণের জন্য?

জুলুমের শাস্তি কি জালিমরা একাই ভোগ করবে? আপনারা এর ভাগ পাবেন না? জুলুম সহ্য করাও জুলুম। অবশ্যই এসব জুলুমের শাস্তির ভাগ আপনারাও পাবেন। অপেক্ষায় থাকুন!

সম্পাদক, একুশে জার্নাল ডটকম