আর কত আত্মকলহ?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ২৩ ২০১৯, ০০:৪৮

আলী হাসান তৈয়ব

গতকাল একটা ভিডিও দেখলাম এই তাহেরির। এক যুবক তার বসেন বসেন বিখ্যাত উক্তিকে ব্যঙ্গ করে নাচ-গান বানিয়েছে। পরে সে ইন্টার পরীক্ষায় ফেল করেছে জানিয়ে তিনি বললেন বুখারির ওই হাদিসে কুদসির অংশ : ‘মান আ-দালি ওয়ালিয়্যান ফাকদ আ-যানতুহু বিল হারবি।’ অর্থাৎ নিজেই নিজেকে মাহফিলে আল্লাহর অলি বলে জাহির করলেন! শুধু তাই নয়, আরও বললেন, এরপর যদি ওর শরম থাকে, তাহলে কোনোদিন বেয়াদবি করবে না। হায় এলেম! হায় তাকওয়া!

দুদিন ধরে দেখছি— অলিপুরী সাহেবের ছেলের বম ফাটানো বক্তব্য আর দল ও ব্যক্তির অনুচরবৃন্দ মিলে সেই তরুণ ইবনে অলির ইজ্জত উদ্ধার করছেন। তার কাজ যেন একটিই— ইসলামের মৌলিক ত্রুটি ছেড়ে গৌণ মাসআলায় ইলমের তাকত দেখানো। আমাদের কাজও একটিই আমাদের ভিন্নমতকারীর পিণ্ডি চটকানো।

এর আগে দেখলাম তাওবাতুন নাসুহ, তারও আগে কবিরা গুনাহ করলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম, সিক্স প্যাকসহ আরও কত উল্লম্ফন। এইসব হাইব্রিড বক্তাদের বাজার বিকাশে অবদান রাখা সবাই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবেন। তারা কারা জানেন? আপনি-আমিই। মাহফিল এলে এখন সবাই খোঁজে জমানো বক্তা। জনপ্রিয় বক্তা। ইউটিউবে ভাইরাল বক্তা। ইদানীং বড় বড় মাদ্রাসাগুলোও জনপ্রিয় বক্তাদের বানায় প্রধান অতিথি। পটিয়ার মতো জামেয়াতেও যখন দেখলাম তাওবা নাসুহ-মুফাসসির বক্তা, তখন থেকেই ভাবছি— এসব মাহফিল থেকেই তাওবা নাসুহ করতে হবে।

মাহফিলের আয়োজকদের ইখলাসের পারদ যে তলায়, আলোচক আর শ্রোতাদের ইখলাসের পারদ তারও নিচে। আপনি জাস্ট একটি মাহফিলের এ টু জেট পর্যবেক্ষণ করলে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। বক্তা আসে বাজার মাত করতে আর শ্রোতা আসে ইউটিউবে দেখা বিনোদন সরাসরি দেখতে। আয়োজকরা চায় মাহফিল শেষে কিছু রাখতে। মাঝখান দিয়ে শরমিন্দা হয় আল্লাহর মহত্তম দীন। নিহত হয় ইখলাস আর মুখলেস।

নিজের আইডির নিজেই নাম দেয় মুফতি শায়খ অমুক। নিজের আইডিতে নিজেই লেখে ওয়াজ ফরমাইবেন হজরত অমুক তমুক নিজে সাহেব! আমাদের যদি নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবায়ে কেরাম দেখতেন, হয়তো মুনাফিক নয় মুশরিকই গণ্য করতেন। এসব উলঙ্গ রিয়াকে তাঁরা শিরক বলতে বোধ হয় দ্বিধা করতেন না।

দেশ-জাতি-উম্মাহ ভেসে যায়, আমরা পড়ে থাকি আত্নপ্রশংসা, আত্মগর্ব, প্রতিপক্ষ তৈরি, ভিন্ন ঘরানার ভাইকে নাস্তানাবুদ করা, সহমতের দিক না খুঁজে ভিন্নমত খোঁজা, একটি মাসআলা না মিললেই ট্যাগ দেওয়া আর অপরের উন্নতি দেখে জ্বলে পুড়ে তাকে পেছন থেকে টেনে নামানোর পেছনে।

আমাদের লেখায়-বলায় সংকট উত্তরণের ভাবনা নেই। এগিয়ে যাবার স্বপ্ন ও সাধনা নেই। বৃহত্তর লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নেই, কমন শত্রু ও প্রকৃত দুশমন শনাক্ত করা এবং প্রতিরোধের প্রত্যয় নেই।

আমাদের আল্লাহ হলেন রব্বুল আলামিন। আমাদের নবীজি হলেন রহমাতুল্লিল আলামিন। আর আমরা হলাম উখরিজাত লিন্নাস। অথচ কী আফসোস, আমাদের মেহনত-মোজাহাদা প্রকৃত অর্থে শুধু নিজের হুজুর, নিজের মাসলাক, নিজের মানহাজ বাঁচাতে। যতটা কাঁদি যতটা প্রতিবাদী হই এইসব ‘নিজের’ জন্যে, ততটা হই না করি না বৃহত্তর উম্মতের জন্য পূর্ণাঙ্গ দীনের জন্যে।

আমরা কী জবাব দেব আল্লাহর কাছে? কোন মুখে হাজির হব নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে? তাঁর ভালোবাসা ছাড়া যে ঈমান পুরো হয় না। আর উম্মতের জন্য দিলে দরদ ছাড়া যে তাঁর ভালোবাসা পুরো হয় না।