আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৮ ২০১৯, ০১:৩৮

তাওহীদুল ইসলাম
মাদিনাতু নাসর, কায়রো, মিশর থেকে

গত শুক্রবার জামিয়াতুল আযহারে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র সংগঠন ‘আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি মাদিনাতু নাসর, কায়রো’-এর উদ্যোগে সম্পন্ন হলো শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷

উক্ত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সোসাইটির মাদিনাতু নাসর ইউনিটের সভাপতি শাহেদুল ইসলাম ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কমিটির সেক্রেটারি ফরিদ আহমদ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল-আযহার ইউনিভার্সিটির কুল্লিয়াতু উসূলুদ্দীন অনুষদের ছাত্র মাওলানা আরিফ মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহহাব এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল-আযহার ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জনকারী মাওলানা মুহাম্মদ সালেম৷

উক্ত অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন, দেলোয়ার মাহমুদ ও নাত পরিবেশন করেন আরিফুল ইসলাম৷

প্রধান অতিথি মাওলানা আরিফ মুহাম্মাদ দীর্ঘ দিন যাবত মিসরে অধ্যয়ন করছেন৷ তিনি তার এই সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনে অর্জিত
বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে উপস্থিত ছাত্রদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও মূল্যবান নাসীহাহ পেশ করেন৷

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আরিফ মুহাম্মাদ বলেন-
১. জীবনে সফলতার জন্য দু’টি জিনিস অত্যন্ত জরুরী৷
ক.নিজের জীবনের হাদাফ (লক্ষ্য) স্থির করা৷
খ. সেই হাদাফ অনুযায়ী অধ্যবসায় ও অবিরাম সাধনা চালিয়ে যাওয়া৷
এই দুটি জিনিস কেউ গ্রহণ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কখনোই ব্যর্থ করবেন না ইনশা আল্লাহ৷

২. নবীন ত্বলাবাদের উচিত প্রবীণদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবনের পথ চলা৷ তাহলে তারা জীবনের কাংখিত সফলতার দ্বারে সহজেই পৌঁছতে পারবে৷

ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অনেক নবীন শিক্ষার্থীরা নিজের আসাতিযায়ে কেরাম ও মুরব্বীগণ থেকে বিমূখ হয়ে যাচ্ছে৷ তারা নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা শুরু করছে৷ এটা একটা আত্মঘাতী মানসিকতা৷ সফল জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে প্রবীণদের পরামর্শ, দিকনির্দেশনা গ্রহণের কোন বিকল্প নাই৷ তাই প্রতিটি তালিবে ইলমের উচিত নিজের পছন্দ অনুযায়ী কোন আলেমকে নিজের আইডল ও আইকন বানিয়ে নেয়া৷ তিনি দেশের হোক, বিদেশের হোক, জীবিত হোক মৃত হোক৷

৩. ‘ইখতিলাফুল উলামা রাহমাতুন’ এটা ঐ সময় প্রযোজ্য হবে যখন ইখতেলাফকে তার স্ব স্ব স্থানে বজায় রাখা হবে৷ নতুবা প্রতিটি ইখতেলাফ নতুন নতুন ইফতেরাককে জন্ম দেবে ৷ এ জন্য আমাদেরকে ফিকহুল ইখতেলাফের জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন৷

ইখতেলাফের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে
আমাদের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন ইখতেলাফ, যা জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন ইফতেরাক ৷ আমাদের আইম্মাদের মাঝে অনেক ইখতেলাফ ছিলো কিন্তু তাদের ইখতেলাফ কখনো ইফতেরাক জন্ম দেয়নি বরং রহমতে পরিনত হয়েছে৷ এর কারণ হলো, তাদের মাঝে তাফাক্কুহ ও জ্ঞানের গভীরতা ছিল৷ ছিল আদাবুল ইখতেলাফের চর্চা৷ ইলমের গভীরতা মানুষের মাঝে উদারতা সৃষ্টি করে৷ আর উদারতা থেকে অপরের প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়৷ আমাদের মাঝে তাফাক্কুহ নাই৷ নাই জ্ঞানের গভীরতা৷ নাই আদাবুল ইখতেলাফের চর্চা৷ নাই উদারতা৷ নাই অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ৷ তাই আমাদের ইখতেলাফগুলো আমাদের মাঝে ফাটল ও বিভেদ সৃষ্টি করছে ৷ সৃষ্টি করছে দূরত্ব৷

বিশেষ অতিথি মাওলানা মুহাম্মদ সালেম সোসাইটিকে শক্তিশালী করা, বড়দের সাথে পরামর্শ করে শিক্ষা জীবনের পথ চলা, পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা করা, মিশরীয় জীবনে আরবী ভাষায় উল্লেখযোগ্য দক্ষতা অর্জন করার প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনামূলক আলোচনা করেন ৷

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত সদস্যগণের আলোচনায় যে সব বিষয় উঠে আসে তা হলো- অপর ভাইকে যথাযথ ইহতেরাম করা, মুসলিম উম্মাহর মাঝে সৃষ্ট বিভেদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ এবং তাদের মাঝে ঐক্য গড়ে তোলার পন্থা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রের পবিত্রতা ও আখলাকের সৌন্দর্যতা, উলামায়ে কেরামের মাঝে উদারতা ও আলমী ফিকির নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা, দ্বীনী কাজে উলুয়্যুল হিম্মাহর সাথে করা এবং নিজের মাঝে সুপ্ত সুন্দর চিন্তা-চেতনাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা, উলামায়ে কেরামের ইত্বকান অর্জনের গুরুত্ব, আশআ‘রে জাহিলিয়্যাহতে মাহারাহ ও খিবরাহ (পান্ডিত্য ও দক্ষতা) অর্জনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি প্রভৃতি ৷

অনুষ্ঠানের কার্যক্রম বিকেল চারটা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা অব্দি অব্যাহত থাকে৷ পরিশেষে চমৎকার সান্ধ্য নাস্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়৷