আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল: আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারীর মামলা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১১ ২০২১, ২২:১২

রাজধানীর সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে এক নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। সামাজিকভাবে সম্মানহানির ভয়ে এতোদিন চুপ থাকলেও আপত্তিকর ওই মুহূর্তের একটি দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর রাজধানীর সবুজবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে ওই নারী থানায় হাজীর হয়ে মামলা দায়ের করেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. মুরাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, একটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভুক্তভোগী নারী থানায় এসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। এই বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে নিজের দিকে ডাকছেন চিত্ত রঞ্জন দাস। কাছে গেলে ওই তরুণীকে টেনে বারবার জড়িয়ে ধরেছেন তিনি।

মামলার অভিযোগপত্রে ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি একজন গণমাধ্যমকর্মী। রাজারবাগ এলাকায় একজন দোকানদার তার দোকান সংস্কার করতে গেলে ডিএসসিসি’র ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস ৪০ হাজার টাকা দাবি করেছেন-এমন তথ্য পান তিনি। এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া সাতটার দিকে কাউন্সিলরকে ফোন দিলে কাউন্সিলর রাত নয়টার দিকে তার অফিসে যেতে বলেন ওই নারীকে। পরে ওই নারী তাঁর স্বামীসহ কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান। কাউন্সিলর কিছু কথা বলে তার রুমে বসতে বলেন।

‘রুমে বসার কিছুক্ষণ পর কাউন্সিলর ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন। এই সময় ওই নারীকে উঠে তার দিতে যেতে বলেন। পরে ওই নারী তার দিকে গেলে কাউন্সিলর তাকে জোরপূর্বক টেনে কাছে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন।’

এই সময় পরের দিন কাউন্সিলরের অফিসে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়ে সেখান থেকে নিজেকে রক্ষা করে বলে দাবি করেন ওই নারী। ‘শ্লীলতাহানির’ সময় তার স্বামী কোথায় ছিলেন সেই বিষয়ে অভিযোগপত্রে কোনো কিছু উল্লেখ করেননি ভুক্তভোগী নারী।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী  বলেন, আমার স্বামীসহ কাউন্সিলরের রুমে ঢুকার পর তিন-চারজন মহিলা সেখানে বসা ছিলেন। মহিলাদেরকে দেখে আমি আমার স্বামীকে বললাম, তুমি বাইরে গিয়ে বসো। আমি দাদার (কাউন্সিলর) সংগে কথা বলে আসছি। এরপর আমার স্বামী বাহিরে যাওয়ার পর আমি দাদাকে বললাম, আপনি নাকি ওমুক দোকানদারের কাছে টাকা চেয়েছেন? এটা শুনার পর তিনি বলেন, তুই পাশে রুমে গিয়ে বস। উনাদের সংগে কাজ সেরে তোকে ডাক দিচ্ছি। দুই মিনিটের মধ্যে আমাকে না ডেকে আমি যে রুমে বসা ছিলাম সেখানে তিনি ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম, দরজা বন্ধ করলেন কেন? তখন তিনি বললেন, তুই কাছে আয় কথা আছে। এরপর আমি কাছে গেলে যা করার তা তো ভিডিওতে দেখলেন।

ওই নারী জানান, ছোটবেলা থেকেই কাউন্সিলরের এলাকায় বড় হয়েছেন তিনি। তাই ওই নারীকে তুই সম্বোধন করতেন কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস। তবে ভিডিও কে করেছে এমন প্রশ্নে ওই নারী জানান, দোকানদার থেকে টাকা দাবি করেছিলো কি-না এটার প্রমাণ রাখার জন্য গোপন ক্যামেরা চালু রেখেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমার উচিত ছিলো কাউন্সিলরের বক্তব্য প্রমাণ হিসেবে রাখা। এই জন্য আমি আগে থেকেই ক্যামেরা চালু রেখেছিলাম। কিন্তু সেসময় যে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।

এই বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন দাস কল রিসিভ করেননি।