আজ ঐতিহাসিক লংমার্চ দিবস

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৬ ২০১৮, ১১:৩৯

    একুশে জার্নাল ডেস্ক :
    আজ ৬ এপ্রিল ২০১৮। ঐতিহাসিক লংমার্চ দিবস।অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের ৫ম বর্ষপূর্তি। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়।

    পরে ওই মঞ্চে নেতৃত্বদানকারী রাজিব নামে এক  ব্লগার সন্ত্রাসী আক্রমণে খুন হলে ব্লগে ইসলাম ও মহানবীকে কটূক্তি করে তার লেখার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। একইভাবে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পর্কিত আরো কয়েকজন ব্লগারের ইসলাম বিদ্বেষী লেখার বিষয়েও খবর প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

    ঢাকার শাপলাচত্বর সহ আশপাশের সকল রোড ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ


    একপর্যায়ে বেফাকের সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম ৯ মার্চ হাটহাজারীতে উলামা সম্মেলন করে ১৩ দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ শেষে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ধর্মপ্রাণ মানুষের অংশগ্রহণে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ থেকেই ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল।

    ২০১৩ সালের এই দিনে ইসলামের হেফাজতে ঐতিহাসিক মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল বাংলাদেশে। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননাকরী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ (লংমার্চ) অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। দেশের আপামর তাওহিদী জনতা,  আলেম-উলামা, মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী নয়, স্কুল-কলেজ ভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষ সেদিন হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কাফেলা ও ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

    হেফাজতে ইসলামের ডাকে উত্তাল ঢাকা

    লংমার্চ ও মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পথে পথে হামলা ও বাঁধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তখন লংমার্চমুখি জনতাকে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক, রেল ও নৌপথ বন্ধ করে ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। সমাবেশের দিন বাম ঘরানার ২৭ সংগঠন আচমকা হরতালের আহবান করে বসে।

    সমাবেশ ও লংমার্চ বাধাগ্রস্ত করইে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে হরতাল পালন করা হয়। সরকারি ছুটির দিনে এবং রাতের বেলা এ ধরনের হরতাল পালনের ঘটনা নিকট-অতীতে ঘটেনি। অপরদিকে একই দাবিতে শুক্রবার সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করে জাগরণ মঞ্চ।

    ৬ এপ্রিলের লংমার্চ ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ‘নতুন ইতিহাস’

    শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী দা.বা. আহুত হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ বানচাল করতেই শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা থেকে শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে গণ জাগরণ মঞ্চ এবং বিভিন্ন বাম দলগুলো হরতাল পালন করে ।
    হামলা মামলা গুলি, কারাবরণসহ বহুমুখী বাধার সারাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগ দেয় হেফাজতের শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে।

    শত বাধা পেরিয়ে সারা দেশ থেকে মানুষ জড়ো হয়েছিলো শাপলাচত্বরে


    ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকা পুরোটাই ছিল ধর্মপ্রেমিক মুসল্লিদের দখলে। রাজধানী বা শহরতিলই শুধু নয়; সুদুর কুমিল্লা, নরসিংদী, গাজিপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হেঁটে হেঁটে ধর্মপ্রাণ জনতা যোগ দেয় শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে। ওইদিনের এমন জনমহাসমুদ্র এ যাবৎকালে কখনো কেউ দেখেনি।

    শুধু মানুষ আর মানুষ । দৃষ্টিসীমা যেখানে খেই হারায়, তারপরও মানুষ আর মানুষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু টুপি আর টুপি। ঢাকার রাজপথ-অলিগলি সব যেন মানুষের প্লাবনে একাকার হয়ে গিয়েছিল।

    সেদিন পুরো ঢাকা ছিলো মুসল্লিদের দখলে


    শাপলা চত্বরের ঐতিহাসিক লংমার্চ ও গণজমায়েতে কত লোক অংশ নিয়েছে এ প্রশ্নের জবাব কারও পক্ষে সহজে দেয়া সম্ভব নয়!
    তবে একটি কথা সবার মুখে মুখে, “এত লোক রাজধানী ঢাকায় এর আগে কেউ দেখেনি”। ঢাকায় যেন নেমেছিলো জনসমুদ্রের জোয়ার।

    ঢাকার মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, তোপখানা, আরামবাগ, ফকিরের পুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা ফকিরের পুল-বঙ্গভবন সড়কটিতেও মানুষের সমুদ্র। শাপলা চত্বর থেকে যে সড়ক গেছে ইত্তেফাকের দিকে সেটিও কানায় কানায় পূর্ণ। এছাড়া অলিগলি চত্বরে কোথাও মানুষের তিল ধারণের ঠাই ছিল না।

    ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ বলতে হলে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চকেই ঐতিহাসিক বলতে হয় ।
    এ সমাবেশের সঙ্গে আগের কোন সমাবেশ, মহাসমাবেশ কিংবা জনসমুদ্রের তুলনা চলে না। হেফাজতে ইসলামের এ সমাবেশস্থলসহ অন্য এলাকাগুলো ৫০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। -(ইনকিলাব, আমার দেশ).।
    আবার কেউ কেউ বলেন ৩০-থেকে ৩৫ লাখের কম হবে না । পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, হিসাব করে মানুষের সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে না। লমার্চ কাফেলায় অগণিত মানুষের উপস্থিতি যে মহাসমুদ্রে রুপ নিয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্মরণকালে কোন সমাবেশে এত লোকের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

    হেফাজতে ইসলাম এর অফিসিয়াল লগো


    কেন এই লংমার্চ:

    গুটি কয়েক নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক ইসলাম ও রাসুল সা. অবমানাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতেই হেফাজত লংমার্চের আহবান করে। ব্লগার, আহমদ রাজিব হায়দার (ওরফে থাবা বাবা), আসিফ মহিউদ্দিন, ইব্রাহিম খলিলসহ (সবাক পাখি) একটি গোষ্ঠী পবিত্র কুরআনুল কারীম, রাসুল্লাহ সা., সাহাবায়ে কেরাম, রাসুলের বিবি হযরত খাদিজা রা, ইসলামের বিভিন্ন পরিভাষা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, ঈদ, অজু-গোসল, মসজিদসহ নানা বিষয়ে জঘন্য ভাষায় ব্লগে বিষোদ্গার করে মুসলমানদের ঈমানী আকিদায় গভীর আঘাত হানে।

    মনগড়া কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে আল্লাহ রাসুল সাহাবী ও খাদিজাকে অপমানিত করে আসছে দীর্ঘ ধরে। তাদের কূৎসিত ও অশালিন মন্তব্য পড়ে কেউ নিরব বসে থাকতে পারে না। ঈমানদার মাত্রই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠবে।

    নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি নিয়েই রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের আহব্বান করেন যুগশ্রেষ্ট বুজুর্গ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতি শাহ আহমদ শফি দা.বা.।

    আল্লাহ ও রাসুলকে নিয়ে কটুক্তিকারী ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে এক মঞ্চে এসেছিলেন দেশের হক্কানী আলেম সমাজ।
    জালিম সরকারের এই পাহাড়সম বাধা পেরিয়ে হাতে তাসবিহ ও জায়নামাজ নিয়ে মুখে নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাহর জিকিরে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ জনতা।

    হেফাজতে ইসলাম’র আমীর আল্লামা আহমদ শফী


    ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টায় তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। দেশবরেণ্য পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামাসহ শীর্ষ ইসলামী রাজনীবিদদের বক্তৃতা-বিবৃতি ও বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্য দিয়ে বিকাল পৌনে ৫টায় মহাসমাবেশ শেষ হয় ।

    হেফাজতে ইসলাম’র মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী

    তপ্ত রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বিক্ষোব্ধ মানুষের অবস্থান ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খলাপূর্ণ।
    এই লংমার্চে হেফাজতের আমীর আল্লামা শফী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি ও ব্লাসফেমি আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের সরকারকে আলটিমেটাম দেন।
    সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি ঘোষণাসহ বিভিন্ন কর্মসুচি ঘোষণা করেন মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকায় আগত লংমার্চ কাফেলাকে প্রাণের ভালবাসা দিয়ে সেবা দিয়েছিলেন ঢাকাবাসী।

    হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক একটি সংগঠন,যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ইসলামের স্বার্থ রক্ষায় লক্ষ্যে আন্দোলন করে আসছে আসছে।

    হেফাজতে ইসলাম এর অফিসিয়াল লগো