অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর কর্মময় জীবন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ০৮ ২০২৩, ১৩:১৭

জন্ম: ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা রোডস্থ বাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা খলীফায়ে ক্বায়িদুল উলামা শায়খে কৈড়িয়া মাওলানা আব্দুন নূর শায়খে ইন্দেশ্বরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি একজন প্রখ্যাত বুযুর্গ আলেম ছিলেন।

শিক্ষাজীবন: পিতার প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজার শহরস্থ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুমে ১৯৬৬ইং সনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৬৭ সনেঢাকার প্রাচীনতম মাদরাসা আশরাফুল উলুম বড়কাটারায় এক বছর পড়ালেখা করেন। ১৯৬৮ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে পড়ার পর বছরেরই শেষ দিকে সিলেটে চলে যান। ১৯৬৯-৭০ সালে জামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরের সানাবিয়্যাহ ২য় ও ফযীলত ১ম সমাপ্ত করেন। ১৯৭১-৭২ সালে মৌলভীবাজারের সুপ্রসিদ্ধ জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুণায় মেশকাত এবং দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন: ১৯৭৩ সাল নেত্রকোনার মউ মাদরাসায় হাদীসের দরস প্রদানের মাধ্যমে জীবনের প্রথম শিক্ষকতার করেন। এক বছর পর সেখান থেকে আবার ফিরে যান নিজ জেলা মৌলভীবাজারে। ১৯৭৪ সালে দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া রায়পুরে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ই নভেম্বর মৌলভীবাজার ডিগ্রী কলেজে ইসলামিয়াত ও ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সেখানে কৃতিত্বের সাথে ১৯৭৮ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৯-৮০ সালে সিলেটের জামেয়া মদিনাতুল উলুম দারুস সালাম খাসদবীরে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন।১৯৮১-৮৩ এর মাঝামাঝি জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুণায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে দ্বীনী শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে যখন জামিয়া শারঈয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা দাওরায়ে হাদীস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তখন থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেখানে দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষক এবং পাশাপশি জামেয়ার প্রথম ভাইস প্রিন্সিপালেরর মহান দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও ১৯৮৩-৮৫’র আগস্ট পর্যন্ত সাবেক কুষ্টিয়া ইউনিভার্সিটির ভাইস চান্সেলরের গাইডেন্স ইসলামিক তাফসির প্রজেক্টের তাফসিরে মাতুরীদী (ইমাম মাতুরীদী)-এর একমাত্র গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষের অনুবাদক ও নিবন্ধকার ছিলেন। এই সময়ে তিনি তারযুমানুস সুন্নাহ দ্বিতীয় খন্ডের অনুবাদ করেন। ১৯৮৫ সালের ২২শে আগস্ট বৃটেন চলে যান এবং ১৯৮৭সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২বছর সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি হ্যাম্পশায়ারের সাঊদাম্পটন সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষে মনোনীত বিশেষ কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর দেশে ফিরে আসেন।

১৯৮৮-৯০ এই তিন বছর রাজনগর উপজেলার জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম গড়গাঁও-এ সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে শিক্ষাদান করেন। ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার শহরস্থ জামেয়া দ্বীনিয়া প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন এবং প্রায় তিন বছরকাল সেখানে বোখারী ও মুসলিম শরীফের খেদমত আঞ্জাম দেন। ১৯৯৩-৯৫ এই তিন বছর আবার ২য় বারের মতো জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম গড়গাঁও-এ সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তারপর মৌলভীবাজার শহরস্থ তাঁর নিজ এলাকা বর্ষিজোড়ায় হাজিরিয়া মদিনাতুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০০৮ সালের শুরু থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাত বছরেরও অধিককাল কমলগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস মুন্সিবাজারের শায়খুল হাদীস হিসেবে খেদমত আঞ্জাম দেন।

বেফাকে যোগদান: ২০১৪ সাল মুতাবেক ১৪৩৬হিজরী হতে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারী মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর থেকে বেফাকের মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর বেফাকের মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে তারাবো বিশ্বরোড জামিয়া ক্বাওমিয়া আরাবিয়ার শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বেফাকের আমেলা সদস্যও।

উল্লেখযোগ্য ছাত্র: বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের প্রয়াত যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা ইসহাক ফরিদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, আহকামে জিন্দেগিসহ বহু গ্রন্থপ্রণেতা মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন, জামিয়াতুন নূর কাসেমিয়া উত্তরার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের মুহাদ্দিস আবু সাবের আব্দুল্লাহ, জামিয়া আযমিয়া দারুল উলূম বনশ্রীর মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ প্রমুখ।

রাজনৈতিক জীবন: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিসে শুরার সদস্য হন। এর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনেরও জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। ২০০৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১০ সাল থেকে বেফাকের যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। বেফাক থেকে চলে আসার পর ফের নায়েবে আমীর হন। ২০২১-২০২২ সেশনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর হন। এরপর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের আমীর নির্বাচিত হন।