৪ মাস বেতনহীন ইফা’র লক্ষাধিক শিক্ষক: মানবেতর জীবনযাপন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ২২ ২০২০, ০০:১৭

মো. সাখাওয়াত হোসেন: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা বিশ্ব এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশ‌‌ও এর ব্যতিক্রম নয়। দুর্বিষহ কষ্টে চলছে মানুষের জীবন। এদিকে আরো বেশি কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন মউশিক প্রকল্পের শিক্ষক জনগোষ্ঠী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (মউশিক) মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক, কেন্দ্র শিক্ষক, সাধারণ কেয়ারটেকার, মডেল কেয়ারটেকারসহ অন্যান্য কর্মচারিগণ এহেন (করোনা) পরিস্থিতিতে প্রায় (৪) চার মাস যাবত বেতন-ভাতা (সম্মানী) না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট (ইফার) কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন না পাওয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, “করোনা ভাইরাসের কারণে মউশিক প্রকল্প পাস হতে বিলম্ব হচ্ছে। যার ফলে মউশিক প্রকল্পের দারুল আরকামের ২০২০ জন শিক্ষকবৃন্দ সহ অন্যান্য শিক্ষকগণও প্রায় ৪মাস যাবত বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আমরা জানতে পেরেছি। প্রকল্প পাশ হলেই তারা বেতন পাবেন।”

‘একুশে জার্নাল’-এর সাথে কথা হয় বিভিন্ন জেলার দারুল আরকাম মাদ্রাসায় কর্মরত কয়েকজন — মোঃ আনাছ মাহমুদ, মোঃ ফয়সাল খান, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, মামুন আব্দুল্লাহ, হাবিবুর রাহমান, মোঃ আল আমিন প্রমুখ শিক্ষকদের সাথে।

তাদের মধ্যে আলোচনার মূল কথাগুলো হল, “করোনার প্রাদুর্ভাবে খুবই কষ্টে দিন-যাপন করছি। এর পরে আবার প্রায় ৪মাস যাবত বেতন (সম্মানী) না পেয়ে আমারা হতাশায় ভুগছি। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং মউশিক প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল নেতৃবৃন্দ ও উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দের নিকট আমাদের আবেদন এই যে, মউশিক প্রকল্প পাশে আর বিলম্ব না করে মানবিক কারণে শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সকল দারুল আরকাম শিক্ষক মউশিক সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষক এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত মডেল ও সাধারণ কেয়ারটেকার অন্যান্য কর্মচারী সহ সকলের বেতন-বনাস (সম্মানী) চালুকরণে কার্যত ব্যবস্থা গ্রহণে বিনীত অনুরোধ করছি।”

কথা হয় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় কর্মরত (এফএস) ফিল্ড সুপারভাইজার জনাব মোঃ রেজাউল করিমের সাথে। তিনি বলেন, “আশা করি মানবিক কারণে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি (প্রকল্প পাশে) দ্রুত সমাধান করবেন।

আরো কথা হয় দারুল আরকাম মাদরাসা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির যুগ্ন সদস্য সচিব মোঃ ফয়সাল খান এর সাথে। তিনি জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাদরাসায় নিয়মিত পাঠদানের পাশা-পাশি সরকারি বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। বর্তমান দেশের সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষকরা বেতন না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্দিনের মধ্যে দিন যাপন করছেন।’

‘একুশে জার্নাল’-এর প্রতিবেদক এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলার দারুল আরকাম মাদরাসা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির (দাশিকস) শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জনাব মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আর তাঁরই সুযোগ্য মমতাময়ী কন্যা, শিক্ষাবান্ধব সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদরাসা (যা যুগোপযোগী আধুনিক আরবী ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) শিক্ষক, প্রাক-প্রাথমিক, সহজ কুরআন শিক্ষা, বয়স্ক, মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক, অন্যান্য কর্মচারিসহ প্রায় আশি থেকে পঁচাশি হাজার শিক্ষক-কর্মচারি এবং তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তারা না পারেন কারো কাছে হাত পাততে, না পারেন কারো কাছে কিছু বলতে। জাতির মেরুদন্ড, মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের এই দুরবস্থা সমাধান করতে পারেন একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা করি তিঁনি খুব দ্রুত সমাধান করে শিক্ষকসহ সকলের মুখে হাসি ফুটাবেন।”