হাসপাতাল পরিদর্শনে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার
একুশে জার্নাল ডটকম
আগস্ট ২১ ২০১৯, ১৭:৩০
হোসাইন আহমদ। বাহুবল প্রতিনিধি:
ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন ভাই সম্প্রতি তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু থাকলে আজ এতো অসঙ্গতি নিয়ে লাইভে আসতে হতো না।
তিনি তাঁর বার্তায় কি বুঝিয়েছিলেন?
তিনি বুঝিয়েছিলেন রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকেরা যখন দায়িত্বে অবহেলা করেন, তখন তাদেরকে উজ্জীবিত করার জন্য এক জাগ্রত রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন হয়।
প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে ঘুরে ঘুরে দেখতে হয়, প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্বশীলরা দায়িত্ব পালনে কতটা যত্নবান?
বাংলাদেশের ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি নাকি বলতেন,
বাংলাদেশ একজন শাসক আছেন, যিনি ইসলামিক নেতৃত্ব হাতে নিলে, হতে পারতেন হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর উদাহরণ।
তিনি কেন এমনটা বলতেন?
একটাই কারণ। তদারকি। রাষ্ট্রের জনগণ কে, কোথায়, অসহায়ত্ব বোধ করছে? কার, কোন, সমস্যা? তা জানার জন্য এবং সমস্যার সমাধানের জন্য হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু ঘুরে বেড়াতেন রাতের অন্ধকারে, এমন বহু কাহিনী ইসলামের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে।
জনাব আয়েশা হকবাহুবল উপজেলায় উপজেলা নির্বাহি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা উপলব্ধি করতে পারছি, কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? কি অবকাঠামো উন্নয়ন? কি স্বাস্থ্য খাত সকল ডিপার্টমেন্ট তিনি তদারক করছেন। বিগত ১৬ই আগস্ট সন্ধ্যার পর বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত এই উপজেলার উপজেলা নির্বাহি অফিসার জনাব আয়েশা হক।
তিনি ঘুরে ঘুরে হসপিটাল এর প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তদারক করছিলেন। কোন রোগীর কিভাবে রোগী হলো? তাও খবর নিয়েছিলেন। এমনকি দেখতে পেলাম একজন রোগী তাঁর প্রতিবেশীর আঘাতে অসুস্থ হয়েছেন।
তিনি তাকে চিকিৎসা সেবা নেয়ার পর বিচারপ্রার্থী হয়ে উপজেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য বলে যান। বলেন, আপনি মামলা করবেন। আপনাকে যত সহযোগিতা লাগে আমি করব।
ওয়ার্ডগুলো ঘুরে ঘুরে তিনি যখন তিনি বারান্দায় চলে আসলেন, বাহিরে আঙ্গিনায় বাতি মিট মিট করছিল। তিনি তার পরিদর্শন উত্তর মুগ্ধতা প্রকাশ করছিলেন। আমাকে বললেন দেখুন, হাসপাতালে বাহিরটা কত সুন্দর লাগে? পরিবেশটা খুব ভালোই দেখলাম।
আমি প্রশ্ন করলাম, কিছুক্ষণ আগে আমি হাসপাতলে এসেছি। ভর্তিরোগীর জন্য কর্তব্যরত নার্স আমাকে ইনজেকশন এর সাথে সিপ্রোফ্লক্সাসিনও লিখে, বাহির থেকে নিয়ে আসতে বললেন।
আমি বললাম, বহুল ব্যবহৃত এই ঔষধটা নাই কেন? তিনি জানালেন দীর্ঘ কয়েক দিন ধরেই এই ওষুধ টা আমাদের স্টকে নেই। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
উপজেলা নির্বাহি অফিসার উত্তর দিলেন,
এমন অভিযোগ এর আগে বাহুবলে আমি শুনি নাই। ঔষধ আছে অথচ দেননি, এমনটা হয় নাই। স্টক শেষ হলে ভিন্ন কথা।
আসলে আমাদের সরকারেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। ঔষধ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে আসে। একসময় তা শেষ হয়ে যায়। আবার আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে যখন রোগীর চাপ বেড়ে যায়।
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আর তিনি বলেই যাচ্ছেন,
তাঁর সাথে পায়চারিরত হাসপাতাল প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা একটা কাজ করেন, আগামীতে ঔষধের প্রস্তাব করার সময় বেশি করে প্রস্তাব করবেন। ফর এক্সাম্পল আগে যে ওষুধটা ১০প্যাকেট এর প্রস্তাব করতেন। এবার থেকে ১৫ প্যাকেট এর প্রস্তাব করবেন। আশা করি ঔষধের অপ্রতুলতা কমে যাবে। আমি আনন্দ বোধ করলাম।
সাথে সাথে তিনি বললেন, আপনি দেখছেন এখানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হসপিটাল। কিন্তু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। দেখছেন বাহিরে অনেক রোগী। খাট বিহীন নিচে বিছানা করে রোগীকে জায়গা করে দিতে হচ্ছে।
এই সীমাবদ্ধতা ও অপ্রতুলতার নিউজ আপনারা করুন। যাতে ঊর্ধ্বতন মহল এই অবস্থা অবগত হয়ে রোগীর পরিমাণে হসপিটাল এর শয্যা বৃদ্ধি, জনবল বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নে আরো আগ্রহী হন।
যাতে করে সকল জনগণকে সেবা দেওয়া যায় সমান হারে। জনকল্যাণে তার এই চিন্তা চেতনা দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে আপ্লুত করেছে।
আরো যে বিষয়টি ভালো লেগেছে, তা হলো উপজেলা নির্বাহি অফিসার এর আগমনের খবর হয়তো সকল ওয়ার্ডে পৌঁছে গিয়েছিল। ডাক্তার-নার্সদের কেউই আর চেয়ার বসা ছিলেন না। সকলেই যার যার দায়িত্বে একনিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন।
অফিসের দায়িত্বশীলদেরকে কর্তব্যমুখী করতে এমন তদারকির আজ বড়ই প্রয়োজন।
এই তদারকির অভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অফিস আছে, জনবল আছে, সার্ভিস নেই। সরকারের টাকা ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছেন না, এরকম বহু অসংগতি নিয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ভাইকে লাইভ করতে হচ্ছে।
আমাদের উপজেলা নির্বাহি অফিসারের এই তদারকি অভিযান চলমান থাকলে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ভাইয়ের লাইভ আমাদের বাহুবলে প্রয়োজন পড়বে না।



