একুশে জার্নাল অনলাইন ডেস্ক:
পঞ্চগড়ের বোদায় রীনা বেগম নামে এক প্রসূতিকে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার পর হাসপাতালের গাছের নিচে সন্তান প্রসব করেছেন তিনি। শনিবার দুপুরে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রোগীসহ স্থানীয়দের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

রোগীর স্বজনরা জানান, শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের বালাভিড় গোয়ালপাড়া বাসিন্দা রীনা বেগমের প্রসব বেদনা উঠে। শনিবার সকাল আটটায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ইতোপূর্বে রীনার একটি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের কথা শুনে দুপুরের দিকে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে পঞ্চগড় অথবা ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্মরত নার্স সাবানা বেগম। এ সময় প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম টাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করছিলেন।
ছাড়পত্র দেওয়ার পরও রোগী হাসপাতাল ত্যাগ না করায় তাদেরকে চাপ দিতে থাকেন নার্স সাবানা বেগম। কিন্তু স্বামী ফিরে আসার অপেক্ষায় বসেছিলেন ওই প্রসূতি। এক পর্যায়ে ওই নার্স তাদের হাসপাতাল থেকে তাকে বের করে দেন।
টিকতে না পেরে প্রসূতি তার ননদ রেজিনাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হাসপাতালের সামনের একটি গাছের নিচে অপেক্ষা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর সেখানেই একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেন তিনি।

এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্থানীয়রা।
মুহূর্তে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আফরোজা বেগম রীনা ও বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান প্রসূতিকে দেখতে যান। এ ঘটনায় প্রসূতির পরিবারসহ স্থানীয়রা দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।

প্রসূতি রীনার স্বামী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক। আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে আর কোন প্রসূতি মাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়।’

অভিযোগ অস্বীকার করে মিডওয়াইফ নার্স সাবানা বেগম বলেন, ‘রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া প্রসূতিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।’

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসআইএম রাজিউল করিম রাজু বলেন, ‘এ ঘটনায় মিডওয়াইফ নার্স সাবানা বেগমকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার কারণ জানতে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জাহিদ হাসানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।