হাটহাজারী মাদ্রাসায় ইংরেজি ভাষার বুনিয়াদি কোর্স উদ্বোধন
একুশে জার্নাল ডটকম
জানুয়ারি ১৪ ২০২২, ১৫:৫৯

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার উচ্চতর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আওতায় ইংরেজী ভাষার উপর এক বিশেষ বুনিয়াদী কোর্স চালু হয়েছে।
আজ (১৪ জানুয়ারী) শুক্রবার সকাল ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কোর্সের উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (দা.বা.)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুঈনে মুহতামিম হযরত আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.)।
দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ জাহিদ হোসাইন (হাফি.)এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রেখেছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক হযরত মাওলানা হাফেজ মুঈনুদ্দীন চৌধুরী (হাফি.)। কোর্সের উদ্দেশ্য ও রূপরেখা নিয়ে বিশেষ বক্তব্য রেখেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক এবং কোর্স পরিচালক হযরত মাওলানা হাসান মুরাদ (হাফি.)। আরো বক্তব্য রেখেছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক হযরত মাওলানা নিজাম সাঈদ (হাফি.)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (দা.বা.) বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা কারিকুলামে পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইসলামের মৌলিক জ্ঞান আহরণ ও গবেষণার জন্য আরবী ভাষা আয়ত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি একজন আলেমকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক এবং জাতীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও ভূমিকা রাখার প্রয়োজনে বিশুদ্ধ মাতৃভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ইংরেজী, ফার্সি ও উর্দূ ভাষা শিক্ষাও কওমি সিলেবাসে রয়েছে। জেনারেল শিক্ষায় বাংলা ও ইংরেজী মিলে দুটি ভাষা শেখানো হয়। অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসায় আরবী, বাংলা, উর্দূ, ফার্সি ও ইংরেজী মিলে মোট চার ভাষা শেখানো হয়। দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম বিশ্বজনীন চিন্তায় কতটা অগ্রসরমান, এতেই প্রমাণিত হয়।
আল্লামা ইয়াহইয়া (দা.বা.) বলেন, ইংরেজী ভাষাজ্ঞানে দুর্বল ছাত্রদের জন্য বুনিয়াদী ইংরেজী শেখানোর উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মাওলানা হাসান মুরাদকে কিছু দিন আগে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালুর উদ্যোগ নিতে বলেছি। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি অল্প সময়েই সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আজ চালু করেছেন। আমি তাকে এ জন্য মোবারকবাদ জানাই। আমি আশাবাদি, সপ্তাহের ছুটির দিন জুমাবার দিনের শুরুতে দুই ঘণ্টার কোর্সটিতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ইংরেজী ভাষাজ্ঞানের উপর প্রয়োজনীয় পারদর্শীতা অর্জনে সক্ষম হবেন। এতে আলেমদের কাজের পরিধি ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান আরো বিস্তৃত হবে বলে আমি পূর্ণ আশাবাদি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হযরত আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.) বলেন, একজন আলেম ও দ্বীনের দায়ীর জন্য ভাষাজ্ঞান আয়ত্ব করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাজ্ঞানে দক্ষতার ফলে যেমন জ্ঞানের অনুশীলন ও আহরণের দুয়ার আরো বিস্তৃত হয়, তেমনি দাওয়াতে তাবলীগের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে অনায়াসে ভাব বিনিময় করা যায়। সাধারণ শিক্ষিত সমাজে নিজেকে আরো বেশি গুরুত্ববহ করে তোলা যায়।
আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.) আরো বলেন, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) ভাষাজ্ঞান আয়ত্ব ও গবেষণার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ তরুণ আলেমদের জন্য গবেষণামূলক আরো কয়েকটি বিভাগের পাশাপাশি আরবী সাহিত্য এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ নামে পৃথক দু’টি বিভাগ চালু করেছেন। হযরতের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বায়ন ও ইন্টারনেটের যুগে একজন আলেমের জন্য আরবী, বাংলা, উর্দু, ফার্সির পাশাপাশি ইংরেজী ভাষাজ্ঞান আয়ত্বও অত্যন্ত জরুরী। এতে সমাজিকভাবেই শুধু মর্যাদা বাড়বে না, বরং বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপন এবং জ্ঞান-গবেষণার কাজও সহজতর হবে। আমি আশাবাদি, ইংরেজী ভাষা শেখার বুনিয়াদী এই কোর্সের মাধ্যমে অনেক ছাত্র উপকৃত হওয়ার সুযোগ পাবে।
কোর্সের উদ্দেশ্য ও রূপরেখা নিয়ে মাওলানা হাসান মুরাদ (হাফি.) বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হলেও ইংরেজী শেখাও যে কোন শিক্ষিতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান যুগ জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটভিত্তিক বৈশ্বিক যোগাযোগের যুগ। এখানে ইংরেজি ভাষাজ্ঞান প্রয়োগ করেই আমাদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। বিদেশে কর্মসংস্থান, গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি সেক্টরেই রয়েছে ইংরেজির গুরুত্ব। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে সু-দক্ষ, যোগ্য ও বিশ্বস্ত নাগরিক গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিশেষভাবে মাদ্রাসা কেন্দ্রিক দুর্বল শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে যারা ইংরেজি একেবারে পড়তে, লিখতে, বুঝতে ও বলতে পারে না, তাদের জন্যই হযরত মুহতামিম সাহেব হুজুরের নির্দেশে ইংরেজী শেখার বুনিয়াদী এই কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোর্সের সময় প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা, মোট তিন মাসে ১২ ক্লাস হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা মূল পড়াশোনার বাইরে ছুটির দিনে সহজেই এতে অংশ নিতে পারেন। এই কোর্সে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ইংরেজির সঠিক উচ্চারণ, বানান পদ্ধতি, পঠন এবং হাতের লেখার অনুশীলন করানো হবে। কোর্সে ইংরেজী ভাষা শেখানোর প্রয়োজনে মাতৃভাষা ব্যবহারের সময়ও বাংলা ভাষার সহজ-সরল ও বিশুদ্ধ পাঠের অনুশীলন করানো হবে। আমি পূর্ণ আশাবাদি, এই কোর্স সম্পাদন করার পর একজন শিক্ষার্থীর ইংরেজী অনর্গল পড়ার, লেখার ও বলতে পারার যোগ্যতা অর্জিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
উদ্বোধনী ক্লাসে প্রায় দুই শত শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।সবশেষে সভাপতি মুহাম্মদ জাহিদ হোসাইনের সমাপনী বক্তব্য ও দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হয়।