হাটহাজারী থেকে নতুন শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা: মিশ্র প্রতিক্রিয়া
একুশে জার্নাল ডটকম
অক্টোবর ২৭ ২০২৪, ১৫:১৫
চট্টগ্রামের দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক নতুন শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী এই বোর্ড প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসাকে বেফাক বা হাইয়া কর্তৃক বিমাতাসুলভ আচরণ, অবহেলা ও অবজ্ঞার ফল বলে ইঙ্গিত করেছেন।
মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “হাটহাজারী মাদরাসা দেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ দ্বীনী দরসগাহ, মাকবুল এদারা এবং বাংলাদেশের উম্মুল মাদারিস। হাটহাজারী মাদরাসার লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ভক্ত দেশ-বিদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং বিভিন্নভাবে দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। হাটহাজারী মাদরাসার সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ, অবহেলা, অবজ্ঞা কোনোভাবে কাম্য নয়।”
তিনি আরো লিখেন, “হাটহাজারী মাদরাসার তত্ত্বাবধানে—
”رابطة المدارس الدينية المركزية بنغلاديش“
“রাবেতাতুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়্যাহ আল-মারকাযিয়্যাহ বাংলাদেশ” নামে একটি নতুন বোর্ড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আজ ২৭.১০.’২৪ ঈ. রবিবার সকাল ১০:০০ টায় হাটহাজারী মাদরাসা মিলনায়তনে উক্ত বোর্ডের প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি উক্ত প্রতিনিধি সম্মেলনের কামিয়াবি এবং বোর্ডের সার্বিক সফলতা উন্নতি অগ্রগতি কামনা করছি।”
মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমাদ এক পোস্টে লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, চলছে উম্মুল মাদারিস জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত “রাবেতাতুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়্যাহ আল-মারকাজিয়্যাহ বাংলাদেশ”-এর প্রতিনিধি সম্মেলন… আজ ২৭ অক্টোবর ২০২৪ইং রবিবার সকাল ১০টায় হাটহাজারী মাদরাসা মিলনায়তনে উক্ত বোর্ডের প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সর্বসম্মিতক্রমে “রাবেতাতুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়্যাহ আল-মারকাজিয়্যাহ” বোর্ড গঠন এবং এর কমিটি অনুমোদন করা হয়।
নতুন বোর্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। শত শত মন্তব্য থেকে বাছাইকৃত কিছু মন্তব্য এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
ব্লু ভেরিফাইড আইডি থেকে মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব লিখেছেন, এই বোর্ডের নামকরণ করা হয় গত বছর শাওয়াল মাসে হাটহাজারী মাদ্রাসায়। সেই মিটিংয়ে আমি ছিলাম। সেখানে হাটহাজারী ও মেথল মাদ্রাসা সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেব ও নাজিমে তালিমাতগণ উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে এই বোর্ডের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আশা করি এই বোর্ড যে মাকসাদ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এ দেশের কওমি আলেমদের কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে।
হাবিবুল্লাহ আশরাফী লিখেছেন, হাটহাজারী মাদরাসাকে উম্মুল মাদারিস হিসেবে মূল্যায়ণ করা উচিত ছিল। বেফাকের মরহুম মহাসচিব জাহানাবাদী রহ. বিষয়টি মাথায় রেখেই গুরুত্ব দিয়ে ছিলেন। বর্তমান বেফাক কর্তৃপক্ষ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মাদরাসাকে গুরুত্ব দেয়া দরকার। বেফাকের একগুঁয়েমির কারনে আজ আরেকটি বোর্ডের জন্ম হচ্ছে। বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ড হাজার হাজার মাদরাসার প্রতিনিধিত্ব করছে। বেফাকের উচিত হাটহাজারী মাদরাসা সহ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের মূল্যায়ন করা। বোর্ডের কিছু দায়িত্বশীল এ বিষয়ে এগিয়ে আসা দরকার। আর কত বিভাজন হবে? গাছ থেকে ছিংলা (কঞ্চি) বড় হয়ে গেলে সমস্যা। যোগ্যতার ভিত্তিতে বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হলে আজ এযন বিভাজনের সূর উঠতো না। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে এক ও নেক বানিয়ে দিন । আমিন।
তায়্যিব আহমাদ লিখেছেন, বিভক্তি কাম্য নয়। কুরআন শিক্ষা বোর্ডকে বিলুপ্ত করে হাইয়া ও বেফাককে শক্তিশালী করার আহ্বান জানাই।
মোঃ শুয়াইব লিখেছেন, বোর্ড বেশি হলে পড়াশোনার মান বাড়বে তা কখনোই নয়, তবে একটা জিনিস ফুটে উঠেছে, নেতৃত্ব আর কৃতিত্বের বেড়াজালে আলেম ওলামা এটাই।
“হাটহাজারীর সাথে কখন কোথায় বৈষম্য হয়েছে?” আব্দুস সামাদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির বিন নূর লিখেছেন, হাটহাজারীর মুহতামিমকে পদাধিকার বলেও খাস কমিটিতে রাখার কথা ছিল। অথচ রাখা হচ্ছে না। কো চেয়ারম্যান করা দরকার।
এম আল আমিন ফয়জী লিখেছেন, বেফাক বিরোধী আল্লামাকে বেফাকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার ফলাফল।
মাওলানা জাবের কাসেমী লিখেছেন, যতদিন খাস কমিটির নামে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ বন্ধ না হবে ততদিন নতুন নতুন বোর্ড ও দল তৈরি হতে থাকবে।
মোঃ আব্দুল মুকিত লিখেছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে নতুন করে বোর্ড প্রতিষ্ঠা, যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নাকি ফেতনার সুচনা, বুঝতে হলে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। তাই মন্তব্য করছি না।
মেখল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান লিখেছেন, হাটহাজারীতে নতুন বোর্ডের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে “তাহাফফুজে নেসাবে ক্বাদিমাহ”। আসুন না বুঝে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি।