হাকালুকি হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন: ধান কর্তন শুরু
একুশে জার্নাল ডটকম
এপ্রিল ২২ ২০২২, ১৮:০৩
জহিরুল ইসলাম সরকার, জুড়ী: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বিস্তৃত শস্যভান্ডার খ্যাত দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওর। এ হাওরের পাশাপাশি পুরো উপজেলাই বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ অঞ্চলে কৃষি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে বোরো ধান কৃষকদের অন্যতম ভরসা। হাকালুকি হাওর পাড়ে বোরো ধান কাটায় বেড়েছে কৃষকদের ব্যস্ততা। হাওর এলাকা জুড়ে এখন বোরো ধান কাটা ও মাড়াইর কাজ চলছে পুরোদমে।
এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন অতিরিক্ত খরা ও ছত্রাক জনিত রোগের কারণে ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। ধানে চিটা দেখা দিলেও এতে মূল লক্ষ্য মাত্রায় কোন প্রভাব পরবে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
সরজমিনে, শুক্রবার হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন অংশে কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো ধানের ফলন বেশ ভালো হলেও ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢল আসার আগেই হাওরের ধান ঘরে উঠানো সম্ভব হবে বলে তারা জানান। এ সময় তারা আরো বলেন, আর এক সপ্তাহ সময় পেলে পুরো হাওরের ধান ঘরে তোলা যাবে। এদিকে ধানের ফলন ভালো হলেও ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারির মাধ্যমে বোরো ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।
হাওর এলাকা ঘুরে আরোও দেখা যায়, হাকালুকি হাওরের বুকে ধান আর ধান। যে দিকে দু-চোখ যায় শুধু পাকা ধানের সমাহার। মিষ্টি রোদের হালকা বাতাসে দুল খাচ্ছে কৃষকদের সোনার ফসল। বিস্তৃর্ণ মাঠের সোনালি ফসল কৃষকেরা কাচি হাতে কাঁটতে শুরু করেছেন। তবে অকাল ঢলের ভয়ে কৃষকের মনে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। তাইতো কাল বিলম্ব না করে ধান কাঁটা ও মাড়াইয়ের পর শুকানো, সেই সাথে তা ঘরে উঠাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। শ্রমিকদের পাশাপাশি কৃষকরা কম্বাইন হারভেষ্টার ব্যবহার করে অতি সহজেই ধান কাটছে। কম্বাইন হারভেষ্টারের মাধ্যমে অল্প সময় ও কম খরচে ধান সংগ্রহ করতে পারছেন কৃষকরা।
হাওরপাড়ের কৃষক ইমরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আরও অন্তত এক সপ্তাহ সময় পেলে হাওরের পুরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে যাবে। এ সময় তিনি বলেন, ধান কাটা শুরু হলেও ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে সবাই চিন্তিত ও হতাশায় রয়েছেন। রাতদিন পরিশ্রম করে ধানের আবাদ করতে হয়। ধান লাগানোর পর নিয়মিত পরিচর্যাও করতে হয়। তেল-সারের দাম বৃদ্ধিতে গতবারের চেয়ে এবছর খরচটা বেশি হচ্ছে। ন্যায্য দাম না পেলে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই সরকারের কাছে বোরো ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকাতে এ বছর হাওরে বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। আশা ছিলো ধানের বাম্পার ফলনের। কিন্তু ধানগাছে ধান আসার আগেই টানা খরার কারণে অনেক চিটা দেখা দিয়েছে।
জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মোট ৫৮০০হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত-SL8H, টিয়া, রুপালী, উফশী, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান ২৮, ব্রিধান ৮৯, বিআর১৪, বিআর ৯২ জাতের ধানসহ অন্যান্য জাতের ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, বোরো ধান চাষে কৃষকদের সকল ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইতিমধ্যে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। উন্নত কৃষি যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকরা সহজেই ধান ঘরে তুলতে পারছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলনের ফলে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। জেলার বোরো চাষীদের প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় বীজ ও সার সহ সব ধরনের সরকারি সহায়তা করা হয়েছে। খরা আর ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের উপস্থিতির কারণে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও এতে মূল লক্ষ্য মাত্রায় কোন প্রভাব পরবে না।