হবিগঞ্জ সিলেট বিরতিহীন বাসে বাড়তি ভাড়া চাইলে কেউ দিবেন না, শফিকুর রহমান চৌধুরী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৭ ২০১৯, ০২:২৫

বাহুবল প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ সিলেট বিরতিহীন বাসে বাড়তি ভাড়া চাইলে কেউ দিবেন না, এমনকি ঈদের দিনেও না। যারা বাড়তি ভাড়া চাইবে তাদের বাসের নাম্বারসহ আমাদেরকে লিখিতভাবে জানাবেন। আমরা কি ব্যবস্থা নিয়েছি আপনাকে জানাবো।

ঈদের দিনে বাড়তি ভাড়া আদায় সম্পর্কে অনুমতি অথবা অবগতি আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি জনাব শফিকুর রহমান চৌধুরী কথাগুলো বলেন।

১২ ই আগস্ট সোমবার। ঈদ উল আযহার দিন। বিকেল তিনটার দিকে মৌলভীবাজার থেকে মিরপুর এর উদ্দেশে হবিগঞ্জ বিরতিহীন বাসে চড়ি। ভাড়া নেয়ার সময় হেলপারদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা দেখতে লাগলাম। আমার কাছে যখন আসলো একশত টাকার নোট ধরিয়ে দিলাম। আমাকে ২০ টাকা ফেরত দিল‌। বললাম নিয়মিত ভাড়া ৬০ টাকা। আমার কাছ থেকে ২০ টাকা অতিরিক্ত নিবেন? সে বলল দিতে হবে। আজ ঈদের দিন। আমি বললাম ১০ টাকা বেশি নিন। সে বলল না। ২০ টাকাই দিতে হবে। ভাবলাম তর্ক করে লাভ নেই। ওরা ঈদে কিছুটা বেশিই নেয়।

তবে শালীন ভাষায় নেয়। সুন্দর করে বলে, আজ ঈদের দিন, আমরা রাস্তায় নেমে এসেছি। আমরা কি দশ টাকা নিতে পারি না? এরকম বললে মনটা গলে যায়, ১০ টাকা আর ২০ টাকার কোন প্রশ্ন থাকে না।

কিন্তু আজ তাদের ভাষা নরম ছিল না। বড় কর্কশ ও কঠিন ভাষা প্রয়োগ করছিল। বলছিল, যেতে হলে দিতে হবে। তবুও ঈদের দিন বলে কথা বাড়ালাম না।

কিন্তু না। দেখলাম শুধু বিশ টাকাতেই সীমিত থাকছে না। আরেকজনের কাছ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিল। এক বৃদ্ধ মুরব্বির কাছ থেকে ৫০ টাকা বেশি চাইল। তিনি যাবেন মৌলভীবাজার থেকে হবিগঞ্জ। নিয়মিত ভাড়া ৯০ টাকা। দিলেন একশত টাকা। সে বলল, আরো ৪০ টাকা চাই। মুরুব্বী বললেন, ৯০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা দিলাম আমি। আর নাই রে বাবা। সে বলল হবে না। আপনাকে আরো ৪০ টাকা দিতে হবে। মুরুব্বী বললেন, আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দাও। যদি এই ১০০ টাকায় আমাকে বাড়িতে না নাও তাহলে আমি আজ বাড়ি যেতে পারব না। আমার কাছে আর কোন টাকা নেই। সে বলল, আপনি শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত যাবেন এর পরে অন্য গাড়িতে যাবেন।

আমার বিবেক নাড়া দিল। হচ্ছেটা কি! ফোন দিলাম হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি জনাব শফিকুর রহমান চৌধুরী সাহেবের কাছে। তিনি সব শুনে বললেন, যারা বাড়তি ভাড়া চায় তাদের সাথে আমার কথা বলিয়ে দিন। আমি ফোন দিলাম হেলপারের কাছে। সে কথা বলতে রাজি নয়। কন্ট্রাক্টর কথা বলতে রাজি নয়। ড্রাইভারের সাথে কথা বলার পর আমাদের তিনজনকে ভাড়া ফেরত দিল। বাকিদের কাছ থেকে ভাড়া যা নিয়েছিল কাউকে ফেরত দেয়নি। বুঝিয়েছি অনেক, কিন্তু ওরা বুঝ মানেনি।

তখনই ঠিক করেছিলাম এই অসঙ্গতি নিয়ে লিখব। তিন দিন অপেক্ষা করলাম। ঈদের তিন দিন পর আবার ফোন দিলাম হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি জনাব শফিকুর রহমান চৌধুরী সাহেবের কাছে।

প্রথমে পরিচয় দিলাম। আমি একুশে জার্নাল নিউজরুম থেকে বলছি। বাহুবল প্রতিনিধি। তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। বললাম। এরপর জানতে চাইলেন কেন ফোন করেছি?
বললাম ঈদের দিন আপনাকে আমি ফোন করেছিলাম। আপনার যে হেলপাররা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছিল। আপনি তো বলেছিলেন এটা আপনাদের জানা নেই, অনুমোদন নেই, যারা আপনাকে না জানিয়ে অনুমোদনহীন ভাবে যাত্রীদেরকে হয়রানি করলো তাদের ব্যাপারে আপনারা আইনানুগ কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমরা লিখিত পাইনি বলে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। দয়া করে আপনি গাড়ির নাম্বারসহ একটা লিখিত দিন। আমি সাথে সাথে গাড়ির নাম্বার টা বললাম গাড়ির নাম্বার হচ্ছে, ঢাকা মেট্রো ব ১৫-০১৯২। তিনি বললেন পনের সিরিয়ালের আমাদের কোনো গাড়ি নেই। আমি বললাম হবিগঞ্জ সিলেট বিরতিহীন এই গাড়ি তাহলে কার?
তিনি বললেন, তবুও আপনি নম্বর লিখে একটা আবেদন লিখে, যে কোন গাড়িতে দিয়ে দিবেন। আমরা তদন্ত করব ওরা কারা ছিল?
আমি বললাম যারা এই বাড়াবাড়ি করছিল ড্রাইভার এবং হেলপারের ছবিসহ আপনার কাছে পাঠাচ্ছি। আপনি আপনার ইমেইল ঠিকানা দিন। তিনি বললেন আমি তো এন্ড্রয়েড সেট ব্যবহার করি না। আপনি কষ্ট করে একটি হার্ড কপি পাঠিয়ে দিবেন এবং অবশ্যই আপনি দেখতে পারবেন, আমরা কি ব্যবস্থা নিয়েছি আপনাকে জানাবো।

বাস মালিক সমিতির সভাপতির সাথে কথা বলে ভালই লাগলো! মনে হচ্ছিল তারা যাত্রীদেরকে উত্তম সেবা দানে বদ্ধপরিকর! কিন্তু যাত্রীরা সেবা পেয়ে থাকেন তাদের স্টাফদের জনবল থেকে।

স্টাফরা যদি ভালো না হন, তাহলে তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভালো সার্ভিস আশা করা যায় না।
এটা সব সময়। আবেদন হার্ডকপি পাঠাবার ইচ্ছা করেছি ৷ ততক্ষণ অপেক্ষায় থাকুন।

আর যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলব, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, এমনকি ঈদের দিন পর্যন্ত সমিতি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়। যেখানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য কেউ চেষ্টা করলে, আপনি প্রতিবাদ করুন! কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন!