স্বাধীনতার পর এই প্রথম জনশূন্য বেনাপোল চেকপোস্ট
একুশে জার্নাল ডটকম
মার্চ ২১ ২০২০, ১৩:০৩

যশোর জেলা প্রতিনিধি
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকার গত ১৩ মার্চ বিকেল থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি ভিসা স্থগিত করার পর ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন ট্রেন সার্ভিসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এ চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতে যাত্রীদের যাতায়াত নেই বললেই চলে। স্বাধীনতার পর চেকপোস্ট এমন জনশূন্য আর কখনো দেখা যায়নি বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, বন্দর, বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার, চেকপোস্টের ব্যাংক বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনসহ আনসার সদস্যরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কুলিদের কোনো হাঁকডাক নেই। সর্বত্র নীরব সুনসান। এ যেন অচেনা এক চেকপোস্ট। স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে এক ঘণ্টার জন্যও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়নি। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এক মাসের জন্য ভারতে ভ্রমণ ও ভিসা স্থগিত ঘোষণার পর রোগী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
ভারতের বনগাঁ শহরে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ায় বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশি কোনো যাত্রী ভারতে প্রবেশ করতে না পারলেও ১৩ মার্চের পর এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে ফিরে গেছে এবং ভারত থেকে এক হাজার ৪০০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী এসেছে। গত ১৪ মার্চ সকালে তিনজন বাংলাদেশি রোগী ভারতে যাওয়ার জন্য চেকপোস্টে এলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। তবে গতকাল বুধবার খবর নিয়ে জানা গেছে, এখন দুই দেশ থেকেই যাতায়াত একেবারে কমে গেছে।
হঠাৎ বাংলাদেশি ভিসায় ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারিতে বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এক মাস ভারতে প্রবেশ বন্ধ থাকলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে।
যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করে থাকে। তা ছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য ভারত থেকে আমদানি করছে। বিপরীতে ভারতে রপ্তানি হয় ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমদানি পণ্য থেকে ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।
এদিকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক গতিতে চলছে। তবে যেকোনো সময় এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল আনসারের প্লাটুন কমান্ডার সাকিবুল হাসান বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষ করোনা আতঙ্কে ভুগছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ যাতে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয় এবং করোনা প্রতিরোধ সম্পর্কে বুঝতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা সচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করছি। সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে সাহসও জোগাচ্ছি।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। আবার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়ে যেতে পারে। বাণিজ্যিক বিষয়ে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীকে ভারতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তেমনি ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীদেরও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
চেকপোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আজিম উদ্দিন বলেন, বেনাপোল চেকপোস্টে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।