স্কুল-কোচিংয়ের রেজাল্ট ভালো করাতে এসএসসির প্রশ্নফাঁস
একুশে জার্নাল ডটকম
অক্টোবর ০৮ ২০২২, ১২:২০
কুড়িগ্রামে চলমান এসএসসি পরীক্ষার ফাঁস হওয়া ছয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানসহ পাঁচ শিক্ষক এবং এক সহায়ক কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিন শিক্ষককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সরকারের এত সতর্কতা ও কঠোর ব্যবস্থাপনার পরও কীভাবে ও কেন প্রশ্নফাঁস হলো, অভিযুক্ত শিক্ষকদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তদন্ত কমিটি কি প্রশ্নফাঁসের কারণ জানতে পেরেছে, এসব নিয়ে চলছে আলোচনা।
যে কারণে প্রশ্নফাঁসে জড়ালেন শিক্ষকরা
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রেফতার প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে তিন দিনের এবং ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক জোবায়ের হোসেনকে দুই দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গ্রেফতারের আগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয় প্রশাসন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং জেলা শিক্ষা বিভাগ। ঘটনার পর শিক্ষা বোর্ড তদন্ত কমিটিও গঠন করে। ইতোমধ্যে কমিটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে।
তদন্তের সার্বিক দিক নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ শিক্ষক বাড়তি উপার্জন এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলের জন্য প্রশ্নফাঁস চক্র তৈরি করেন। বিগত বছরগুলোতেও তারা একই পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস করেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শিক্ষকদের থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের গ্যারান্টি দিতেন প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান। মূলত প্রশ্নফাঁস করে অন্য শিক্ষকদের সহায়তায় সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করা হতো। এতে তাদের দুই দিকে লাভ হতো। প্রথমত, তাদের বাড়তি উপার্জন হতো। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হওয়ায় স্কুলের সুনাম বাড়তো। এতে ওই স্কুলে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘স্কুলের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির চার জন সহকারী শিক্ষক দুটি কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রশ্নফাঁস চক্রে সক্রিয় থেকে কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদেরও প্রশ্ন সরবরাহ করতেন। এতে কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের রেজাল্টও ভালো হতো। তাদের কোচিং ব্যবসাও ভালো চলতো।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তারা শুধু তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতো বলে দাবি করেছেন। কিন্তু এই প্রশ্নপত্র অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছেও পৌঁছাতো কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কি জানা গেলো
ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। বিষয়গুলো আমরা প্রতিবেদন আকারে আদালতে জমা দেবো।’
শিক্ষকরা কেন প্রশ্নফাঁসে জড়ালেন, জিজ্ঞাসাবাদে তার কোনও জবাব পাওয়া গেছে কিনা, এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘তারা (গ্রেফতারকৃত শিক্ষকরা) জানিয়েছেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ভালো করাতেই তারা এমন কৌশল নিয়েছিলেন। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত শিক্ষকরা স্কুলের পাশে কোচিং ব্যবসা করতেন। সেখানে তারা এসব প্রশ্ন বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করতেন।’