সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবীতে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য অধিকার ফোরামের মানববন্দন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ৩১ ২০১৯, ১৫:২৮

 

রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়ায় শান্তি বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার বিচারের দাবীতে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, গুম খুন অপহরণ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন করার দাবীতে রাঙামাটি শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি নাজিম আল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছারের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সকাল ১০.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলার সহ-সভাপতি লোকমান হাকিম, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ দিদার, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি মোমিনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বাকি বিল্লাহ্, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নূর আলম, পৌর শাখার সদস্য সচিব সজীব আহম্মেদ প্রমুখ।

বক্তারা পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও খাগড়াছড়ি জেলার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের এজেন্ট বিশেষ মহল কর্তৃক মিথ্যা মামলার তিব্র নিন্দা জানান। বৃট্রিশ আমেরিকান টোবাকো কর্তৃক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা পত্যাহারের দাবী জানিয়ে হুশিয়ারি দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন জেএসএস ইউপিডিএফকে অস্ত্র কিনার জন্য তামাক কোম্পানি কোটি কোটি টাকা চাঁদা দেয়, এই টাকা আবার বিভিন্ন মহলও ভাগ পায়। বৃট্রিশ আমেরিকান টোবাকোর পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করায় বাঙালী সংগঠনের পিছনে লেগেছে। অবিলম্বে বাঙালী নেতৃবৃন্দদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলা পত্যাহারের দাবী জানান, অন্যথায় পার্বত্য অঞ্চলকে অচল করে দেওয়ার হুশিয়ার দেন রাঙামাটির নেতৃবৃন্দগণ এবং বৃট্রিশ আমেরিকান টোবাকোর কার্যক্রম পাহাড়ে পতিহত করা হবে বলে ঘোষনা দেন।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন চলমান হত্যাকান্ড, খুন, গুম, অপহরণ বন্ধে পাহাড়ে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুন:স্থাপন করা, পার্বত্য অঞ্চলে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, পাহাড়ের সন্ত্রাসী কর্তৃক সকল হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিতসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লিডারদের ফাঁসি দিতে হবে।

হাবিবুর রহমান হাবিব আরো বলেন ভূষণছড়া গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তম হত্যাকাণ্ড।৩১ মে, ভূষণছড়া গণহত্যা দিবস। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ এবং ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডটি হচ্ছে ভূষণছড়া গণহত্যা। ১৯৮৪ সালের এই দিনে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাঙালীরা এই নির্মম গণহত্যার শিকার হন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) -এর অঙ্গ সংগঠন শান্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্যবার পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালীরা গণহত্যার শিকার হয়েছে। শান্তিবাহিনীর হত্যাকাণ্ড গুলোর মধ্যে রাজনগর গণহত্যা, পাকুয়াখালী ট্রাজেডি, মাটিরাঙ্গা গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যা উল্লেখযোগ্য। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েক শত বছরের ইতিহাস ঘাটলেও ভূষণছড়া গণহত্যার মতো এত বড় ধ্বংসযজ্ঞের আর কোন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী পাষণ্ডরাও এখানে এমন জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দেয়নি। যে ঘটনার মাধ্যমে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময়ে হত্যা করা হয়েছে চার শতাধিক নিরস্ত্র নিরীহ মানুষ । এবং আহত করা হয়েছে আরও সহস্রাধিক মানুষ। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে একটি জনপদ।

১৯৮৪ সালের ৩০ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ৪টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা ৩০মিনিট পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ৩১ মে সংঘটিত পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ভূষণছড়া গণহত্যা।

‘‘কলা বন্যা, গোরস্থান, ভূষণছড়া, হরিণা হয়ে ঠেকামুখ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিরাট এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা থেকে আপতিত হয় ভয়াল নিস্তদ্ধতা। কুকুর শিয়ালেরও সাড়া শব্দ নেই। আর্মি, বিডিআর, ভিডিপি সদস্যরাও ক্যাম্পে বন্দি। অতর্কিত পূর্ব দিক থেকে প্রথম ধ্বনিত হয়ে উঠল একটি গুলির শব্দ। তৎপরই ঘটনাবলীর শুরু। চুতর্দিকে ঘর-বাড়ীতে আগুন লেলিহান হয়ে উঠতে লাগল। উত্থিত হতে লাগল আহত নিহত অনেক লোকের ভয়াল চিৎকার এবং তৎসঙ্গে গুলির আওয়াজ , জ্বলন্ত গৃহের বাঁশ ফোটার শব্দ, আর আক্রমণকারীদের উল্লাস মূখর হ্রেসা ধ্বনি।
এভাবে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, আর্তচিৎকার ও উল্লাসের ভিতর এক দীর্ঘ গজবি রাতের আগমন ও যাপনের শুরু। চিৎকার, আহাজারী ও মাতমের ভিতর সুর্যোদয়ে জেগে উঠলো পর্য্যুদস্তজনপদ। হতভাগা জীবিতরা আর্তনাদে ভরিয়ে তুললো গোটা পরিবেশ। অসংখ্য আহত ঘরে ও বাহিরে লাশে লাশে ভরে আছে পোড়া ভিটা। এতো লাশ, এতো রক্ত আর এতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এক অর্ধরাতের ভিতর এলাকাটি বিরান। অদৃষ্ট পূর্ব নৃশংসতা। অভাবিত নিষ্ঠুরতা।