সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১৯ ২০২০, ০০:৩৫

পবিত্র কুরআনের ১৮ নম্বার সূরা ‘সূরা কাহাফ’। এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ১১০। হজরত আনাস(রাঃ)হতে বর্ণিত, এ পুর্ণাঙ্গ সূরাটি এক সাথে অবতীর্ণ হয়েছে ও এর সাথে ৭০ হাজার ফেরেস্তা দুনিয়াতে আগমন করেছেন। এ সূরার কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-নামকরণ এ সূরায় “আসহাবে কাহাফ” তথা ওই সব মুমিন যুবক যারা দ্বীনকে সংরক্ষণের জন্য নিজেদের কোনো এক পাহাড়ের একটি গুহায় আত্মগোপনে রেখেছিলেন। তাদের ঘটনা বর্ণিত হওয়ায় এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে”সূরা কাহাফ।”

এ সূরার মধ্যে ৩টি ঘটনা রয়েছেঃ-

১. ওই সব যুবকের ঘটনা, যারা ঈমান আকিদা রক্ষা করার জন্য নিজেদের ওপর কুরবানি করে নিজেদের আবাস ছেড়ে কোনো পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে কাটানোর পর আল্লাহ তাআলা তাদের আবার জাগ্রত করেন।

২.হজরত মূসা ও খিজির আলাইহিস সালামের মাঝে সংঘটিত ঘটনা।

৩.বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা যিনি সারা বিশ্বের বাদশাহ ছিলেন এবং সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেন।

এ ঘটনাগুলোর জন্য উক্ত সূরাটি যেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তেমনি অনেক ফজিলতপূর্ণ।এ ব্যাপারে উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে।সূরা কাহাফ পাঠ করার ফজিলত ও মুখস্থ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ-

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ ‏”

مسلم (٢٦١ هـ)، صحيح مسلم ٨٠٩ •

আবুদ্‌ দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ- যে ব্যক্তি সূরা আল কাহ্‌ফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্হ করবে সে দাজ্জালের ফিত্‌নাহ্‌ থেকে নিরাপদ থাকবে। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮০৯।

হাদিসের মধ্যে এসেছেঃ-

[عن أبي سعيد:] من قرأ سورةَ الكهفِ في يومِ الجمعةِ، أضاء له من النورِ ما بين الجمُعتَينِ.

السيوطي (٩١١ هـ)، الجامع الصغير ٨٩١٠

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত:-নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্‌ফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে।”

হাদিসের মধ্যে এসেছেঃ-

[عن البراء بن عازب:] كانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُورَةَ الكَهْفِ، وإلى جانِبِهِ حِصانٌ مَرْبُوطٌ بشَطَنَيْنِ، فَتَغَشَّتْهُ سَحابَةٌ، فَجَعَلَتْ تَدْنُو وتَدْنُو وجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ، فَلَمّا أصْبَحَ أتى النبيَّ ﷺ فَذَكَرَ ذلكَ له فقالَ: تِلكَ السَّكِينَةُ تَنَزَّلَتْ بالقُرْآنِ. ، صحيح البخارى

বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, এক ব্যক্তি ‘সূরা কাহ্‌ফ’ তিলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার উপর ছায়া দান করল। মেঘখণ্ড ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফী শুরু করে দিল। সকাল বেলা যখন লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস্‌সাকিনা (প্রশান্তি), যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।বুখারী, হাদিস নং ৫০১১

রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- ইবনে হিব্বানের মধ্যে হাদিসটি এসেছেঃ-

[عن أبي الدرداء:] مَن قرَأ عَشْرَ آياتٍ مِن سورةِ الكهفِ عُصِم مِن فتنةِ الدَّجّالِ صحيح ابن حبان ٧٨٥

যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত পাঠ করবে তাকেও দাজ্জালের ফিৎনা থেকে মুক্তি দেয়া হবে।

অন্য বর্ণনায় তিন আয়াতের কথাও বলা হয়েছে।

হযরত আলি (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেৎনা থেকে মুক্ত থাকবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

তবে উল্লিখিত গুনাহের মাফ হওয়ার দ্বারায় ছোট গুনাহ উদ্দেশ্য।কারণ কবিরা গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ করা হবেনা।

অনেকেই প্রশ্ন করে যে এটি কখন পড়া উত্তম?

‘সূরা কাহাফ’ জুমার দিনে যে কোনো সময় তিলাওয়াত করা যাবে সমস্যা নেই।

হাদিসের মধ্যে জুমা’র দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে সময়টাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সময় বলা হয়েছে ঐ সময় দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।তাই আসরের সালাত আদায় করার পরে সূরাটি পাঠ করে দোয়া করলে আল্লাহ আমাদেরকে অধিক সাওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

আলোচনা ও হাদিসের আলোকে প্রমানিত হলো যে সূরা কাহাফ একটি শিক্ষনীয় ও ফজিলত পূর্ণ সূরা তাই আমরা জুমার দিনে এই সূরাটি পাঠ করবো ইন্শা আল্লাহ।

আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করার তাওফিক দান করুক, আমিন।

লিখেছেনঃ-মোহাম্মদ এমদাদ উল্যাহ।

শিক্ষার্থীঃ-আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,মিশর