সিলেট ২ আসন; ভাবার এখনো সময় আছে
একুশে জার্নাল
ডিসেম্বর ২৮ ২০১৮, ১৮:৪৫
জুবের আহমদ: প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সিলেট২ আসনের সকল রাজনীতিবীদদের , যারা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। আমাদের এলাকা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ। এখানে প্রতিহিংসার রাজনীতি চোখে পড়েনি। যে যার মতো করে আনন্দ-উল্লাসে ক্যাম্পেইন করেছেন। অন্যান্য এলাকার মতো আমাদের এলাকায় ছিলো না ধরপাকর কিংবা হামলা-মামলা। এর জন্য ক্ষমতাশীন দলের রাজনীতিবীদদের ভুমিকা ছিলো অপরিসীম।
বিগত উপজেলা নির্বাচনেও অন্যান্য এলাকায় যখন, প্রচন্ড দাংগা হাংগামা ছিলো তখন আমাদের এলাকায় নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ। এ জন্য আমাদের এলাকার প্রত্যেক রাজনীতিবীদ এবং কর্মীরা ধন্যবাদ পাবার দাবিদার। আমি অন্তরের অন্তস্হল থেকে ধন্যবাদ জানাই সবাইকে।
এখন আসি আমার মূল আলোচনায়।
জনাব মুহিবুর রহমান। আমাদের এলাকায় আলোচিত নাম। ডাব প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। লন্ডন থেকে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন আনওয়ারুজ্জামান চৌধুরির জন্য কাজ করতে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগে তিনি আনওয়ারুজ্জামান চৌধুরির পক্ষে বিভিন্ন জায়গায় গনসংযোগ করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট থেকে আনওয়ারুজ্জামান চৌধুরি নমিনেশন না পাওয়ায় উনার ভাগ্য খুলে যায়। নির্বাচন পাগল মুহিবুর রহমান পেলেন সুবর্ন সুযোগ। শুরু করলেন মহাজোট প্রার্থী এহিয়া চৌধুরী খেদাও আন্দোলন। এমনিতেই আনয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাহেবের অনুসারীরা মহাজোট প্রার্থীর উপর ক্ষেপা তার উপর মুহিবুর রহমানের এই ঘোসনা। অত্যন্ত বিচক্ষন মানুষ মুহিবুর রহমান। আনওয়ারুজ্জামান চৌধুরির অনুসারিদের অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে এখন তিনি, প্রায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগের আরেক নেতা শফিকুর রহমান কিন্তু মুহিবুর রহমানকে সমর্থন দেননি। যতোটুকু জানা যায়, তার সমর্থকেরা সিংহ প্রতিককে সমর্থন জানিয়েছেন। এখন কথা হলো, কেনো শফিকুর রহমান চৌধুরি এবং তার অনুসারিরা মুহিবুর রহমানের বদলে সিংহ প্রতিক কে সমর্থন জানালো? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি যেটা পেয়েছি তা হলো, শফিকুর রহমান চান না তার এলাকায় আওয়ামীলীগ থেকে ভবিষ্যতে নির্বাচনের জন্য আরো বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হোক।
এমনিতেই আনওয়ারুজ্জামান চৌধুরির জন্য উনার অবস্হান নড়বড়ে, তার উপরে যদি মুহিবুর রহমান স্বতন্ত্র থেকে পাশ করেন,তাহলে উনার জন্য ভবিষ্যতে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বেশ কস্টকর হবে। তাছাড়া নিজ এলাকায় মুহিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে নেত্রীকে একটা বার্তাও দেওয়া হবে। এই ব্যাপারটা শফিকুর রহমান চৌধুরি এবং তার অনুসারীরা বুজলেও আনওয়ারুজ্জামান চৌধুরির অনুসারিরা বুজেননি। তারা এহিয়া চৌধুরিকে বিতারিত করার জন্য স্বয়ং খাল কেটে কুমির আনছেন। আপতত এহিয়া চৌধুরি বিতারিত হতে পারেন এবং মুহিবুর রহমান ও পাশ করতে পারেন। কিন্তু ভবিষ্যতে আনওয়ারুজ্জামান চোধুরি এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে নমিনেশনের জন্য কঠিন চ্যলেন্জের মুখে পড়তে পারেন। আগে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো শুধু শফিকুর রহমান চৌধুরি। ভবিষ্যতে হবেন আরেকজন মুহিবুর রহমান।
পক্ষান্তরে সিলেট -২ আসনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব ইলিয়াস আলির সহধর্মীনির নমিনেশন বাতিল হওয়ায় তিনি এবং তার পরিবার এলাকায় অপরিচিত জনাব মুকাব্বির খানকে সমর্থন জানিয়েছেন। অথচ এই আসনে ২৩ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল খেলাফত মজলিসের একজন প্রার্থী ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই মিসেস ইলিয়াস আলীর নমিনেশন বাতিল হওয়ায় এই এলাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সাপোর্ট পাওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিলেন খেলাফত মজলিসের জনাব মুনতাসির আলি। কিন্তু এতে বাধ সাধেন নিঁখোজ ইলিয়াস আলী সাহেবের পরিবার।
ইলিয়াস আলি সাহেবের পরিবার বাধ সাধার পিছনে মুলতো দুটি কারন; একটি হলো-কিছু দালাল অনলাইন পোর্টাল নিউজ করে বসলো যে, মিসেস ইলিয়াস আলিকে সরানোর পিছনে নাকি মুনতাসির আলি সাহেবের হাত আছে। অথচ উনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মহাজোট প্রার্থী জনাব এহিয়া চৌধুরি। এখানে মুনতাসির আলী সাহেবের কোনো হাত থাকার প্রশ্নই আসেনা। তাছাড়া মুনতাসির আলি ঘৃন্য রাজনীতি পছন্দ করেন না। উনি এইসব অনলাইন পোর্টালের নিউজের বিরুদ্বে প্রতিবাদও করেছেন এবং নিজের অবস্হানও পরিস্কার করেছিলেন।
দ্বিতীয় কারন হলো, যদি মুনতাসির আলি এই আসন থেকে পাশ করেন তাহলে ভবিষ্যতে মিসেস ইলিয়াস আলি অথবা তার পরিবারের জন্য এই আসন থেকে নমিনেশন পাওয়া চ্যলেন্জ হতে পারে। এই দুটি কারনের কোনোটাই আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। কেননা, সিলেট ২ আসনের মাটি ও মানুষের নেতা জনাব ইলিয়াস আলীর পরিবার থেকে যে কেউ এই আসনে দাড়ালে তার পাশ করার চান্স শতোভাগ। সুতরাং জনাব মুনতাসির আলিকে ভয় পাওয়ার কিছুই ছিলো না। এখন যেহেতু মিসেস ইলিয়াস আলি নমিনেশন পান নি, এবং তাদের শরীক দল খেলাফত মজলিসের প্রার্থীকে রেখে এলাকায় অপরিচিত মুকাব্বির খানকে সমর্থন দিয়েছেন, সুতরাং দেখা যাক ভোটের মাটে কি হয়?
মনে রাখতে হবে, বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে হলে আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে উঠে, এমন কাউকে নমিনেশন কিংবা সমর্থন দেওয়া উচিত যাহাকে দিয়ে পাশ করার সম্ভাবনা শতোভাগ ছিলো। মুকাব্বির খানকে দিয়ে এই আসন ধরে রাখা অসম্ভব। সুতরাং এখনো সময় আছে, বিএনপি এবং তার অনুসারীরা একটু ভাববেন কি ? আমি মোটেই অবাক হবো না, যদি আওয়ামীলীগের সবাই শেষ মুহু্রতে মাইন্ড্ চেইন্জ করে ডাবের পরিবর্তে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেয় এবং বিএনপিও তাদের মুকাব্বিরের পরিবর্তে জোটের প্রতি শ্রদ্বা রেখে মুনতাসির আলি কে সমর্থন দেয়। তাহলেই হয়তো আসতে পারে সাফল্য। ততক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষা।