সিলেটে বাড়ি বানানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না এরশাদের
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ১৬ ২০১৯, ২২:১৩
সিলেটকে দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবেই বলতেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সুসময়ে-দু:সময়ে তিনি ছুটে আসতেন এই পূণ্যভূমিতে। দোয়া নিয়ে যেতেন হযরত শাহজালালের (রহ.)। সিলেটের মানুষের প্রতি ছিল তার অগাধ সম্মান ও ভালোবাসা।
এরশাদের স্বপ্ন ছিল সিলেটে একটি বাড়ি করার। সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার। তার সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য জাতীয় পার্টির এক নেতা বাড়ির জন্য জায়গাও দিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে সেখানে আর বাড়ি বানানো হয়নি। পূরণ হয়নি সেই স্বপ্ন। এ নিয়ে সিলেটের নেতাকর্মীদেরও আফসোসের শেষ নেই।
১৯৯১ সালে কারান্তরিণ অবস্থায় যখন নির্বাচন করেন তখন সারাদেশে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ৩৫টি আসন। এর মধ্যে বৃহত্তর রংপুরে পেয়েছিল ২২টি। বাকি ১৩টির মধ্যে ৮টি আসনই ছিল সিলেট বিভাগের। ওই সময় ‘স্বৈরাচার’ তকমা লাগানো কারান্তরীণ এরশাদই ছিলেন সিলেটের মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয়। কারামুক্ত হওয়ার পর সিলেটে যতবার এসেছেন ততবারই সিলেটবাসীর এই ঋণের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
সিলেটবাসীর ঋণ স্বীকার করে এরশাদ বলতেন, ‘ওই সময় সিলেটের মানুষ আমাকে ৮টি আসন উপহার না দিলে আমাকে হয়তো জেলে মরতে হতো। তারা আমাকে শুধু কারামুক্ত হতে সাহায্য করেনি, আমাকে নতুন করে জীবন দিয়েছে।’
শুধু ঋণ স্বীকার নয়, এরশাদ যখনই কোন রাজনৈতিক সংকটে পড়েছেন তখনই ছুটে আসতেন সিলেটে। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করে তাদের দোয়া নিতেন। সিলেটের প্রবাসীদের সাথেও ছিল তার গভীর আন্তরিকতা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের দুই প্রবাসী নেতাকে তিনি মনোনয়ন দিয়ে সাংসদও করেছিলেন।
রংপুরকে প্রথম ও সিলেটকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে মনে করতেন এরশাদ। সিলেটে যখনই কোন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গেছেন, তখনই তিনি সিলেটে একটি বাড়ি করার স্বপ্নের কথা জানাতেন তিনি। অবসর সময় যাতে তিনি সিলেটে কাটাতে পারেন সেজন্য সেখানে একটি বাড়ি করতে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক জেলা সভাপতি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন। ৫-৬ বছর পূর্বে তিনি খাদিমপাড়ার বাহুবলে নিজের একখন্ড জায়গা এরশাদকে বাড়ি নির্মাণের জন্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরশাদ সেই জায়গা দেখেও এসেছিলেন। টিলা আকৃতির ওই জায়গাও পছন্দ হয়েছিল তার। কিন্তু সিলেটে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্বের কারণে বাড়ি বানানো হয়নি এরশাদের।
এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন জানান, সিলেটের মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন এরশাদ। তাই সুযোগ পেলেই তিনি সিলেটে ছুটে আসতেন। সিলেটের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে তিনি খেটে খাওয়া মানুষের কল্যানে কাজ করার কথা বলতেন। সিলেটে বাড়ি করতে পারলে এখানে থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নয়নে তিনি কাজ করার কথা বলতেন।