সিলেটে নগর জুড়ে সিসি ক্যামেরা অপরাধ করে রেহাই পাচ্ছে না অপরাধীরা
একুশে জার্নাল
মার্চ ১০ ২০২০, ১০:৪৪
সিলেট শহরে অপরাধ করে রেহাই পাচ্ছে না অপরাধীরা। অপরাধের ২০ মিনিটের মাথায়ও ধরা পড়েছে অপরাধী। আর এটি সম্ভব হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তায়। নগরীর বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের সনাক্ত করে আটক করা হচ্ছে দ্রুত, এমনটি জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা। তিনি বলছেন, সারা নগর জুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হলে অপরাধ জিরো টলারেন্সে নেমে আসবে।
সিলেটে বিগত কয়েকদিনে যেসব ছোটবড় অপরাধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে তাদের প্রায় সবকটি সম্ভব হয়েছে সিসি ক্যামেরা দেখে সনাক্তের মাধ্যমেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে ডাকাত, ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে মাদক কারবারী পর্যন্ত। বাদ যায়নি ছোটখাটো চোরও।
সর্বশেষ শহরতলীর খাদিমপাড়ায় একটি বাসার তালা ভেঙ্গে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় গত শুক্রবার ঘটনার সাথে জড়িত দুই চোরকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, আশপাশের বেশ কয়েকটি ক্যামেরা দেখে চোরদের সনাক্ত করে অভিযানে নামে তারা।
ঘটনার ৩ দিনের মাথায় চুরির সাথে জড়িত দুই চোরকে আটক করতে করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
২৩ ফেব্রুয়ারি: ওই দিন রাতে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের তৎপরতা ছিল নগরবাসীর চোখে পড়ার মত। নয়াসড়ক এলাকায় রায়হান মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে তার মালিকানাধীন (মেট্রো-খ ১১-০০৭০) একটি প্রাইভেটকার ছিনতাই হয়। কোতোয়ালী থানা পুলিশ খবর পেয়ে সাথে সাথে নামে এ্যাকশনে।
প্রাইভেটকার ছিনতাই করে পালানোর ২০ মিনিটের মধ্যে ছিনতাই হওয়া প্রাইভেটকারসহ হাবিবুর রহমান (২৭) নামে এক ছিনতাইকারীকে রিকাবীবাজার থেকে আটক করেছে পুলিশ।
২৪ ফেব্রুয়ারি: ১৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে নগরীর কুয়ারপাড়ের নিরাপদ দাশ পিংকুর একটি প্রাভেটকার চুরি হয়। ছাই রংয়ের এই প্রাইভেটকার (রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-গ- ১৩-৭৭৮৫) চুরি হওয়ার পর পিংকু বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার পরপরই পুলিশ নামে গাড়ী উদ্ধার অভিযানে। একদল চৌকশ পুলিশ বিশেষ অভিযান করে ২ চোরসহ গাড়ীটি শ্রীমঙ্গলের লছনা বাজার সংলগ্ন সাতগাঁও চা বাগানের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়।
১৫ ফেব্রুয়ারি: নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এই ছিতাইকারীদের অবস্থান সনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
১৬ ফেব্রুয়ারি: ছিনতাইয়ের ৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ২ চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরী থেকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ এ সময় ছিনতাই হওয়া ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটোরিক্সা ও ১টি ছুরি উদ্ধার করেছে তাদের কাছ থেকে।
ওই দিন দুপুর ১ টার দিকে ধোপাদিঘীরপাড়স্থ ওসমানী স্মৃতি জাদুঘরের বিপরীতে আছমা হোটেলের সামনে মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হন। ঘটনার পরপরই কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সেলিম মিঞার নির্দেশনায় একদল ফোর্স শহরের একাধিক স্থানে অভিযান চালায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় নগরীর রায়নগর এলাকা থেকে ২ ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়।
৩০ জানুয়ারি: পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযানে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়। ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের বাসিন্দা আব্দুল বাছিত ডাচ্ বাংলা ব্যাংক আম্বরখানা শাখা হতে ৫৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে তার ভাইয়ের ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডস্থ দোকানে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে ৬ জন ছিনতাইকারী একটি সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে ছুরি, রামদা ও পিস্তল দেখিয়ে এবং পিস্তল দিয়ে মাথায় আঘাত করে বাছিতের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
পরে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে।
২৮ জানুয়ারি: শাহপরান (র.)থানা পুলিশ ৩ ছিনতাইকারীকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করেছে।
স্কলার্সহোম কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মাহফুজ ইসলাম খাঁন সজীব এমসি কলেজস্থ মন্দির টিলার উপর বেড়াতে গেলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দেখিয়ে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে দু’টি মোবাইল ও নগদ আড়াই হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি মোবাইলের দাম ৪৬ হাজার টাকা ও অপরটির দাম ১৩ হাজার টাকা।
পরে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ও টাকা নিয়ে শ্যামলী আবাসিক এলাকার দিকে চলে যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে শাহপরাণ থানা পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে মেজরটিলার নূরপুর আবাসিক এলাকা থেকে ছিনতাইকারীদের আটক করতে সক্ষম হয়।
১১০ ক্যামেরা: নগরীর নিরাপত্তা জোরদারে বসানো হচ্ছে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ক্যামেরা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১১০টি আইপি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। আইপি ক্যামেরা মূলত ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে কাজ করে। এসব সিসি ক্যামেরা অপরাধীর ছবি ডিটেক্ট (চিহ্নিত) করে সিগন্যাল দিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে এসব ক্যামেরা নিজের সার্ভারে থাকা তথ্যের সহায়তা নেয়। আবার পুলিশও ছবি দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে অপরাধী সনাক্ত করতে পারবে।
তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এবং সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) সমন্বিত উদ্যোগে সিলেট নগরীতে ১১০টি আইপি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের আওতায় এসব ক্যামেরা বসছে নগরীতে।
১১০টি আইপি ক্যামেরার মধ্যে কিছু সংখ্যক বসানো হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বসানোর কাজ চলছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রায় পুরো নগরীই কাভার দেয়া সম্ভব।
এসব ক্যামেরা বসানোর কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে সিলেট নগরীতে কোন অপরাধী পার পাবে না। অপরাধীদের সহজেই পুলিশ ধরতে পারবে বলে জানিয়েছে।
বর্তমানে নগরীতে ব্যক্তি উদ্যোগে বাসাবাড়ি, ব্যবসায়িক অফিস, বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের বসানো ক্যামেরা, শিক্ষা প্রতিষ্টান ও মার্কেটে বসানো ক্যামেরা দেখে পুলিশ সাথে সাথেই শুরু করে একশন। যার ফলে অপরাধীরা বেশি সময় ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকতে পারে না।
নগরবাসী বলছেন, ১১০টি আইপি ক্যামেরা বসানোর কাজ দ্রুত শেষ করতে। যাতে অপরাধ করে কেউ যাতে পার পেয়ে না যায়।