সিয়ানাহ ট্রাস্টের মুহাররাম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৪ ২০২৪, ২২:২৮

পরিত্রাণ, বিশুদ্ধতা, কল্যাণ ও মানবসেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত গবেষণামূলক সংগঠন সিয়ানাহ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে মুহাররাম কনফারেন্স ২০২৪ গতকাল (১৩ জুলাই, শনিবার) সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুফতি জিয়াউর রাহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টের উপদেষ্টা, সিলেটের কাজিরবাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, সিয়ানাহ ট্রাস্টের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সিয়ানাহ যেন ইসলাম, দেশ এবং জাতির কল্যাণে কাজ করে। সিয়ানাহ’র প্রত্যেক সদস্য যেন উম্মাহ’র প্রতি নিবেদিত থাকে এই ব্যাপারে তিনি উৎসাহ দেন।

অর্থসচিব আসআদ বিন সিরাজের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রধান করেন ট্রাস্টের সেক্রেটারি প্রভাষক মাওলানা সাদিকুর রাহমান। স্বাগত বক্তব্যে মাওলানা সাদিকুর রাহমান বলেন, সিয়ানাহ ট্রাস্ট একটি গবেষণামূলক সংগঠন। দ্বীন এবং জাতির সেবায় নিবেদিত একঝাঁক মেধাবী আলেমদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই সংগঠনের প্রত্যেক সহকর্মীকে ইসলাম ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে গবেষণা করতে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

মুহাররাম কনফারেন্সে মোট পাঁচটি বিষয়ের উপর বক্তারা আলোচনা প্রদান করেন। ‘মুহাররাম, আশুরা এবং হিজরি সন’ শিরোনামে আলোচনা করেন ট্রাস্টের শুরা সদস্য মুফতি দানিয়াল মাহমুদ তাক্বওয়া। তিনি বলেন, হিজরি বর্ষপঞ্জি মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র ক্যালেন্ডার। নবিজির ঐতিহাসিক হিজরতের উপর ভিত্তি করে এই ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করেছিলেন দ্বিতীয় খলিফা উমর রাযি.। মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্য এবং স্বকীয়তা রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ট্রাস্টের সহকারী অর্থসচিব মাওলানা আব্দুল্লাহ মানসুর তার নির্ধারিত বিষয় ‘ঈদে গাদিরে খুম’ এর শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, নবিজির ভাষায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মুসলমানদের জন্য দুইটি ঈদের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইসলামের শাশ্বত শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিম সমাজে আরেকটি ‘ঈদ’ নামক উৎসবের আয়োজন করা মানে মুসলিম জাতির সামনে বিভ্রান্তির জাল বুনন করার নামান্তর। ইসলামে দিবস ও উৎসব নির্ধারিত৷ ইসলামে নেই এমন মনগড়া দিবস বা উৎসব আবিষ্কার করা হারাম গর্বিত কাজ৷ তিনি আরও বলেন, ঈদে গাদিরে খুম’ নামক এই উৎসবটি মুসলিম সমাজে আরেকটি বিদয়াত তথা গর্হিত কাজের সূচনা করবে৷ মুসলিম উম্মাহকে তিনি সতর্ক থাকতে আহবান করেন।

কারবালা ও আহলে বাইত সম্পর্কে আলোচনা প্রদান করেন ট্রাস্টের শুরা সদস্য মুফতি সায়েম ক্বাসিমী। তিনি আহলে বাইত তথা নবিজির পরিবার সম্পর্কে কুরআনুল কারীম এবং বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নবিজির পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তাঁর সন্তানাদিগণও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। শিয়া মতাবলম্বীরা যে শুধুমাত্র পাঁচজনকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে- তা সঠিক নয়৷ সূরায়ে আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে নবীপত্নীগণকে আহলে বাইত বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

কুরআন কারীম যেহেতু রাসূল ﷺ এর স্ত্রীগণকে আহলে বাইত বলে সম্বোধন করেছে। কিন্তু সন্তান সন্তুতিদের আহলে বাইত বলে নি। তখন হয়তো কারো ধারণা হতে পারে যে, রাসূল ﷺ-এর সন্তানগণ আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

এ কারণে যখন উক্ত আয়াতে কারীমা নাজিল হয়, তখন রাসূল ﷺ হযরত উম্মে সালমা রাযি. এর গৃহে ছিলেন। তখন মানুষের এ গলদ ধারণা দূর করার জন্য নিজের চাদরের নিচে হযরত ফাতিমা রাযি, হযরত হাসান রাযি, হযরত হুসাইন রাযি, এবং হযরত আলী রাযি, কে নিয়ে বললেন, এরাও আমার আহলে বাইত। তাদের থেকেও আল্লাহ তাআলা অপবিত্রতা দূর করে পরিপূর্ণ পুত-পবিত্র করতে চান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৪২৪)

শিয়া সম্প্রদায়ের আকিদা এবং বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করেন ট্রাস্টের শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ নোমান। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান যুগের শিয়ারা হচ্ছে ইয়াহুদী মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার উত্তরসূরী। মধ্যপ্রাচ্যে তারা তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া। তাদের আকিদা-বিশ্বাস মারাত্মকভাবে বিভ্রান্তিকর। এজন্য শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান করেন।

আরও বক্তব্য প্রদান করেন ট্রাস্টের সদস্য মাওলানা জহির উদ্দিন ক্বাসেমী। তিনি তার বক্তব্যে ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা সাহাবায়ে কেরামের চরম শত্রু। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিশ্বস্ত সহচর হযরত আবু বকর সিদ্দিক এবং উমর ইবনে খাত্তাব রাযি.সহ কাউকেই তারা কাফির বলতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। অথচ আবু বকর রাযি.এমন ব্যক্তিত্ব, যার সাহাবী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলে সে আর মুসলিম থাকে না৷ কেননা স্বয়ং কুরআনে আবু বকর রাযি.র সাহাবী হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে৷ মুসলিম উম্মাহ’র জন্য মারাত্মক বিভেদ সৃষ্টিকারী এই গোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে৷

সমাপনী বক্তব্যে সিয়ানাহ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুফতি জিয়াউর রহমান বলেন, সাহাবায়ে কেরামের জামা’আত হচ্ছে একটি আদর্শিক কাফেলা। বিশ্বনবী ﷺ-এর আদর্শের ঝান্ডাধারী এই মোবারক জামা’আতকে নিয়ে সমালোচনা করা কোনো সত্যিকার মুসলমানের কাজ হতে পারেনা। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, সাহাবায়ে কেরামের এই জামা’আতের মাধ্যমেই আমাদের নিকট দ্বীন পৌঁছেছে। কুরআন পৌঁছেছে৷ তাঁদের প্রতি বিদ্বেষের আঙুল তোলা মানে নিজের দ্বীনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা।

বিশেষ করে মাজলুম সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রাযি.র প্রশংসা করে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন ওহী লেখক৷ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত৷ যাঁর সঙ্গে রাসূলের আত্মীয়তার সম্পর্ক৷ কোনো সাহাবীকে গালাগাল করা কিংবা কটাক্ষ করা কোনো প্র‍্যাক্টিসিং মুসলিমের পরিচায়ক হতে পারে না। গবেষণার নাম করে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সাহাবীকে গালাগাল করাকে তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষপাতিত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কনফারেন্সে আগত সকল ডেলিগেটদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন