সাদপন্থীদের হামলায় মুক্তিযোদ্ধা প্রায় পঙ্গু
একুশে জার্নাল
ডিসেম্বর ০৭ ২০১৮, ০৯:৫৮
একুশে জার্নাল ডেস্ক: উলামায়ে কেরামকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের বিরুধিতা করার জন্য মাওলানা সাদের অনুসারীরা যেরকম নির্জলা মিথ্যাচার করে আসছে বিরোধের সূচনা লগ্ন থেকে, তা আমাদের কারোই অজানা নেই ৷
প্রশ্নবিদ্ধ করবার জন্য এরা যে পন্থাগুলো অবলম্বন করছিলো, তার মাঝে অন্যতম ছিলো জমহুর উলামায়ে কেরামের এ বৃহৎ অংশের পিঠে ‘রাজাকার’ তকমা এবং উলামাদের এ কাজকে ‘স্বদেশবিরোধী’ বলে চালিয়ে দেয়া৷ প্রায়শই মিডিয়ার সামনে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এইরকম প্রোপাগান্ডা তারা চালিয়ে আসছিলো৷ গত কয়েকদিন আগে সাদপন্থী মাওলানা আশরাফ আলী এক টকশোতে এরকম আলাপ তুলে এনেছেন বলেও শুনলাম।
কিন্তু আসলে বাস্তবতা কী— এ নিয়েই আজকের আলাপ।
গত পহেলা ডিসেম্বর টঙ্গীর ময়দানে সাদপন্থীদের হামলায় আহতদের খোঁজখবর নেয়ার জন্যে আমরা হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখছিলাম। পঙ্গুতেও গেলাম। অনেক আহত এখানে৷ এরই মাঝে অস্ত্রোপচার কক্ষের বারান্দায় এক বৃদ্ধকে দেখে এগিয়ে গেলাম। মাথা ফেটে গেছে। পায়ের হাড্ডি ভেঙে গেছে৷ শুয়ে আছেন। বৃদ্ধ আমাদেরকে দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। কাছে গিয়ে বসলাম। মাথায় হাত রেখে অনেক কথা শুনলাম।
ওয়াল্লাহি, উলামায়ে কেরামের প্রতি এমন শ্রদ্ধাবোধ একজন আমের কাছ থেকে আমার কল্পনায়ই ছিলোনা। এমনকি নিজের হাত পা ভেঙ্গে যাওয়ার দুঃখে তাকে একবারও আমি কাঁদতে দেখিনি৷ বারবার বলতে শুনেছি ‘আমার সন্তানদেরকে যেভাবে মারছে এ পশুরা, আল্লাহ তুমি দেখছো’। বারেবারেই এসব বলে বলে তিনি কেঁদে উঠতেন।
আমাদেরকে দেখলেই বলতেন আপনারা মানুষ না, আল্লাহ আপনাদেরকে ফেরেশতারূপে আমাকে দেখার জন্য পাঠিয়েছেন। জান্নাতে যাওয়ার সময় আমাকে স্মরণ রাখবেন তো? আল্লাহু আকবার৷
কিন্তু আজকে তার উলামাপ্রীতির কথা রেখে যেটা বলতে চাই, এই বৃদ্ধ— যিনি ষাটোর্ধ্ব এক থরথরে মানুষ, মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সশস্ত্র ‘মুক্তিযোদ্ধা’ তিনি। যার মুখে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে ‘আমি যুবক বয়সে দেশের জন্যে জান কুরবান করার প্রয়াসে যেমনি মাঠে এসেছিলাম, আজকের বৃদ্ধ বয়সেও ইসলামকে রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমে আসলাম, কিন্তু আল্লাহ আমার দু’ফোটা রক্ত এই ময়দানে ঝরাবার সুযোগ দিলেও আমাকে শহীদের মর্যাদা তিনি দেননি’।
এসব শোনার পর আমি একটুও স্থির থাকতে পারিনি। কী এক আজিব খেলা খোদার।
আর হ্যাঁ, তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন। মিরপুর বারো’র মুসলিম বাজারের তাবলীগের সাথী ৷ পঙ্গু হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ডিসি ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বেডে তিনি আছেন৷ তার পা ভেঙে গেছে৷ হাড্ডি দুভাগ হয়ে গেছে এতায়াতী হায়েনাদের আক্রমণে।
পাশাপাশি তার মুক্তিযোদ্ধা সনদের অনেক কাগজপত্রই আছে তার কাছে৷ মিডিয়ার যে কেউ যাচাই করতে চাইলে, তা করতে পারবে। তার সঙ্গেই এগুলো রাখা আছে।