সাইনুসাইটিস জনিত মাথা ব্যাথা : প্রতিকার ও চিকিৎসা
একুশে জার্নাল
সেপ্টেম্বর ০৪ ২০২০, ১২:৪৭
কোনো হাঁড়ের ভিতরের যদি কোনো গহ্বর থাকে বা বায়পূর্ণ কোনো খালি জায়গা থাকে তাকে সাইনাস বলা হয়ে থাকে।
মূলত নাকের আশেপাশের হাঁড় সমূহের ভিতরে কিছু গহ্বর রয়েছে যেই গহ্বরগুলো বাতাস দিয়ে পূর্ণ থাকে, এই গহ্বরগুলোকেই মূলত সাইনাস বলে। সাইনাসের কাজ হচ্ছে মাথার ওজনকে হালকা করা। সাইনাস থাকার কারণে আমাদের মাথার ওজন আমাদের অনুভব হয় না।
নাকের আশেপাশে ৪ টা সাইনাস রয়েছে।
সবচেয়ে বড় হচ্ছে ম্যাক্সিলারি সাইনাস। আরো রয়েছে স্পেনয়েড সাইনাস, ইথময়েড সাইনাস, ফ্রন্টাল সাইনাস।
এই সাইনাসসমূহ বায়ু দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। নাকের আশেপাশে থাকার কারণে এইগুলোকে প্যারানাসাল সাইনাস বলে।
সাইনুসাইটিস :
যদি প্যারানাসাল সাইনাসসমূহের টিস্যুসমূহে কোনো প্রদাহ হয়, তবে এইটাকে সাইনুসাইটিস বলে। সুস্থ প্যারানাসাল সাইনাসসমূহ বায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে, আর এই সাইনাস সমূহ যখন ফ্লুইড দিয়ে ব্লক হয় যায় তখন সেখানে প্রদাহ তৈরি হয় এবং জীবানু বংশবিস্তার করে, এই অবস্থাকে সাইনুসাইটিস বলে।
সাইনুসাইটিসের কারণ:
১. এলার্জিক রাইনাইটিস: নাকের মিউকাস মেমব্রেন এর প্রদাহ এবং ফুলে যাওয়াকে রাইনাইটিস বলে।এতে করে নাক ভারি হয়ে আসতে পারে, আবার ন্যাসাল সিক্রেশন হতে পারে। এলার্জেন দিয়ে হলে এলার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দিয়েও হতে পারে।
যখন রাইনাইটিস হয়, তখন নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তথা নাকের ভিতরের ভেইন, নাকের মিউকাস মেমব্রেন সব ফুলে গিয়ে নাক গহ্বরের অভ্যন্তরে ব্লকেজ তৈরি হয় এবং পর্যায়ক্রমে সাইনাসের অভ্যন্তরেও ব্লকেজ তৈরি হতে পারে। এতে করে প্রদাহ হয় এবং সাইনুসাইটিস হয়।
২. কমন কোল্ড বা সাধারন সর্দি।
৩. নাকের পলিপের কারণেও সাইনুসাইটিস হতে পারে।
৪. ডিএনএস (Deviated nasal septum ) এর কারণেও হতে পারে।।
কাদের বেশি হয়?
যাদের এলার্জি রয়েছে, যাদের বেশি বেশি কমন কোল্ড হয়, তাদের হবার চান্স বেশি।
উপসর্গ:
১। মাথা ব্যাথা, সামনের অংশে।
২। মুখে ব্যাথা, মুখ ভার ভার অনুভব হওয়া।
৩। নাক ভার হয়ে থাকা, কিংবা নাক দিয়ে পানি পড়া, অথবা নাক ব্লকেজ মনে হওয়া।
৪। সর্দি, জ্বর, কাশি হওয়া।
৫। গাঢ়, হলদে রং এর নাসাল ডিসচার্জ।
৬। ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস পাওয়া।
৭। নিঃশ্বাসের সময় ব্যতিক্রমী ঘ্রাণ পাওয়া (Bad breath)।
সাইনুসাইটিসের প্রকারভেদ:
একিউট সাইনুসাইটিস: উপসর্গ ২-৪ সপ্তাহ থাকে।
সাব একিউট সাইনুসাইটিস: উপসর্গ ৪-১২ সপ্তাহ থাকে।
ক্রনিক সাইনুসাইটিস: উপসর্গ যদি ১২ সপ্তাহের অধিক থাকে।
চিকিৎসা:
নাকের ভিতরের অংশ পরিস্কার রাখার জন্য নরমাল স্যালাইন দেয়া যেতে পারে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশী ব্যবহার হয়। হালকা গরম পানির বাস্প নেয়া যেতে পারে, এতে রোগী আরাম পাবে।
মূলত এর চিকিৎসায় ন্যাসাল ডিকনজেসটেন্ট ব্যাবহার করা হয়। এছাড়াও এন্টি হিস্টামিন, মিউকোলাইটি, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি প্রয়োজন অনুসারে পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
ডা. রিফাত আল মাজিদ
ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ
[email protected]