সরকার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ধ্বংস করার চেষ্টা করছে
একুশে জার্নাল ডটকম
মে ৩১ ২০২২, ১৬:৩০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ একাংশের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, বিগত ১৩ বছর ধরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার। নিজেদের ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে তারা দেশকে মেধাহীন করার সকল ধরনের ব্যবস্থা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম পত্রিকায় উঠে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে। জাতির মননের কারিগর শিক্ষকদের দল দাসে পরিণত করা হয়েছে। যে সকল সন্মানিত শিক্ষকগণ নিরপেক্ষভাবে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষাদানের চেষ্টা করছেন তাদের বিভিন্ন ভাবে লাঞ্চিত করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) সকাল সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে “শিক্ষা বাঁচাও, শিক্ষাঙ্গণ বাঁচাও” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম অংশ লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যের বাইরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালের ডাকসুর নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা হয়েছিল। তার আগে ৭ মার্চ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করা হয়েছিল। এই সরকার জনবিরোধী সরকারের পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশ পাঠ করেন ডাকসুর সাবেক দুই বারের ভিপি এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারি দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনকে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তে পরিণত করেছে। ১৩ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান তো দূরের কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না। সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন চর দখলের মতো দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছে। সর্বশেষ গত ২৪ এবং ২৬ মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
কাপুরুষিতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্য ভিসি ঘটনার বিষয়ে জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এই ঘটনায় হামলার শিকার ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে দায়ী করেছেন এমনকি মামলাও করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মতো হামলার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করেছেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গণকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দেশের সকল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত সাবেক এবং বর্তমান ছাত্র সংসদ নেতৃবৃন্দ, সাবেক এবং বর্তমান ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যের বাইরে তিনি বলেন, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রমোশনের চিন্তা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
এই সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কে পাহারা দিচ্ছে।তাই এখন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যের আগে স্বাগত বক্তব্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, ছাত্রদলের পুরুষ কর্মীদের উপর হামলার পাশাপাশি নেত্রী মানসুরা আলম, তুলি, তিন্বিসহ অসংখ্য নারী নেত্রীর উপর হামলা করা হয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসী মুক্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দের আন্দোলন চলবে।
লিখিত বক্তব্যের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি এবং গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেছেন, সবার সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম সংস্কৃতি ও গেস্ট রুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে হবে।
এ সময় ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব, সাবেক এমপি, ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, সাবেক এজিএস এবং সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে গত নির্বাচনে নির্বাচিত সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন।
এ সময় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।