সম্মানিত ইমাম-খতিব ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ সমীপে- মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী
একুশে জার্নাল
এপ্রিল ০৯ ২০২০, ০৯:১৫
কী কঠিন সময়! পুরো বিশ্ব প্রায় অচল, স্থবির। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র করোনাভাইরাস বিস্তৃত হচ্ছে পৃথিবীর সকল দিক-দিগন্তে।আক্রমণ করছে অসংখ্য মানুষকে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চৌদ্দ লক্ষ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন সত্তর হাজারের অধিক মানুষ। এ মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। কোথায় গিয়ে এবং কখন এটির ইতি ঘটবে, প্রযুক্তির উর্বর যুগে নিশ্চিত করে কিছু বলা আদৌও সম্ভব হচ্ছেনা।
বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত এ বিষয়ে কারোও কিছু জানা নেই। বিশ্ব
পরিস্থিতি বলছে, সহসাই থামছে না এ মহামারী। সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে দেশে দেশে চলছে লকডাউন কিংবা কারফিউ। এমনকি নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন দেশের মসজিদসমূহে নামাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে কিংবা সীমিত পরিসরে আদায় করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, কিভাবে এ মহামারীর প্রকোপ থেকে স্বদেশ ও জাতিকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখা যায়। ব্যতিক্রম নয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও। বলা বাহুল্য, এতে আমাদের জীবনযাত্রার অনেক অনেক ক্ষতি হলেও মূলত বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যেই তা করা হচ্ছে। আমাদের সকলের সুন্দর, নিরাপদ আগামী দিনের জন্য আজকের লকডাউন বা গৃহে অবস্থান।
সচেতন ব্যক্তি মাত্র অজানা থাকার কথা নয়- জনগণ ব্যতিত, এককভাবে সরকারের পক্ষে কোনো কাজে সফলতা অর্জন প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে সকল কর্তাব্যক্তি ও সর্বস্তরের জনগণের গুরুদায়িত্ব হচ্ছে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা- সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা। নির্দেশিত বিষয়ের ওপর চলতে একে অপরকে উৎসাহিত করা, ক্ষেত্রবিশেষ চাপ সৃষ্টি করা। দেশ ও জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকা এবং যে কোনো প্রকার ক্ষতি, অকল্যাণ রোধে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত থাকা।
ইতোপূর্বে আমাদের দেশে ধর্ম মন্ত্রণালয় এর পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে মতবিনিময় করে সীমিত পরিসরে, স্বল্প সময়ের মধ্যে সালাত আদায়, খুতবা প্রদানের নির্দেশনা দেয় হয়েছিল। ৫ এপ্রিল আবার ধর্ম মন্ত্রণালয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ ৫ জন এবং জুময়ার নামাজে ১০ এর অধিক অংশ নেয়া যাবে না বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বিষয়টি আমাদের সকলের জানা থাকলেও মফস্বল অঞ্চলে এটির বাস্তবায়ন একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য।
মুহতারাম ইমাম-খতিবগণ, আপনারা জাতির বিবেক, সমাজের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। বৈশ্বিক কঠিন এ পরিস্থিতিতে, আপনাদের পরামর্শ, নির্দেশনা, কাজকর্ম হোক- সুচিন্তিত, সময়োপযোগী, এবং বিচক্ষণতায় পরিপূর্ণ। আপনাদের সামগ্রিক ভূমিকা হোক- ত্রাণকর্তার মতো। আমাদেরকে বাস্তবতা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং সর্বস্তরের মানুষকে তা অবগত করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। কোরআন-হাদিসের আলোকে, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে এ কথা বুঝাতে হবে যে, এ নির্দেশনা ইসলামের সাথে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক নয় বরং ইসলামসম্মত এবং আমাদের
কল্যাণের স্বার্থেই করা হয়েছে। নিজের প্রাণরক্ষা, দেশ ও জাতির সুরক্ষা এবং কল্যাণ সাধনে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান ও
শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ আমাদের যা যা করণীয়, সবই করতে হবে এবং এর সাথে ইসলামের কোনোও বৈপরিত্য নেই।
এক্ষেত্রে প্রতিটি মসজিদ কমিটি বা কর্তৃপক্ষকেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে মানুষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না ঘটে এবং সকলের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সুরক্ষা করুন। বিশ্ববাসীকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ করুন।