সমকামিতা বৈধতা যুক্তির গোমরফাঁক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ০৭ ২০১৮, ২০:০৭

ইফতেখার জামিল: ভারতের আদালত সমকামিতাকে বৈধতা দেবার পেছনে অধিকারের যুক্তি দেখিয়েছে। বাংলাদেশের সেকুলাররাও এই যুক্তি দেখিয়ে সমর্থন করছেন। ফলে এই বিষয়ে আলাপ তুলা জরুরী হয়ে উঠেছে।

আজকাল যে সাংবিধানিক ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকারের কথা বলা হয়, সেটা মূলত আমেরিকান স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে সংগৃহীত।
সেই ঘোষণার শুরুতেই একটি বাক্য এমন, We hold these truths to be self-evident, that all men are created equal, that they are endowed by their Creator with certain unalienable Rights, that among these are Life, Liberty and the pursuit of Happiness.

এখানে Liberty ও Happiness শব্দদুটির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কমবেশি সবাই স্বাধীনতা ও সুখ অর্জনের পক্ষে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই শব্দদুটি কোথা থেকে এসেছে, এই প্রশ্নটা থেকে যায়। এতে আলোকায়িত আমলের দার্শনিকরা তো বটেই, প্রাচীন দার্শনিকদের ভূমিকাও আছে।

মূলত এই লেখাটি তৈরি করেছেন, Thomas Jefferson । এবং তিনি দার্শনিকভাবে নিজেকে ইবকুরী ( Epicurean ) হিসেবে দাবী করতেন এবং এই দর্শনে সুখ-স্বাধীনতাকে বিশেষ ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যায়িত করে।

তাদের মতে ধর্মীয় নৈতিকতা আইনের ভিত্তি হতে পারে না এবং জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে, নৈতিক ভোগ। নৈতিক ভোগ মানে কি, এর ব্যাখ্যা বুঝাটা জরুরী। আমাদের একজন শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, এর অর্থ নিছক দৈহিক ভোগ না, বাকী নিঃস্পৃহতার সাথে স্বার্থ ও ভোগ অর্জন করাই এই দর্শন মতে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। ফলে আমরা যখন স্বাধীনতা ও ব্যক্তির ভোগের কথা বলি, তখন যাতে এই ঐতিহাসিক বিকাশের কথা মাথায় রেখেই বলি।

এখানে লক্ষণীয় যে, absolute নৈতিকতার সঙ্কট থেকে বাঁচতে স্বাধীনতাকে আইনের ভিত্তি বানানো হচ্ছে, যা নিজেই পর্যায়ে absolute এ রুপান্তরিত হয়ে যায় এবং এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালত স্বাধীনতা absolute নয়, এই মর্মে রায় দিতেও বাধ্য হয়েছে। ( দেখুন, Schenck v. United States ১৯১৯ ) কীভাবে নৈতিকতার সঙ্কট থেকে বাঁচার চেষ্টা পুনরায় সেই একই সঙ্কটের দিকে নিয়ে যায়, সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং।

এসব বিবেচনায় আধুনিক অধিকার ও স্বাধীনতা ধারণায় খোদ বেশ কিছু সঙ্কট আছে। ফলে এর ভিত্তিতে আইন তৈরির মানেই সেই সঙ্কটের পুনরুৎপাদন করা।
ইসলামে অধিকার বা হক ধারণায়, এই সঙ্কট থেকে বাঁচার জন্য দুটি ভাগ করা হয়েছে। হুকুকুল্লাহ ও হুকুকুল ইবাদ। সামাজিক অধিকার ও ব্যক্তিগত অধিকার। খুন করার পর নিহত ব্যক্তির পরিবার ক্ষমা করে দিলে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। কেননা এটা ব্যক্তির অধিকার। কিন্তু ধর্ষণের পর ধর্ষিতা ক্ষমা করলেও ধর্ষকের কোন ক্ষমা নাই। সম্মতিতে অবৈধ যৌনতা করলে তারও ক্ষমা নাই। কেননা এটা সামাজিক অধিকার। এর সাথে দশজনের অধিকার জড়িত। ফলে এটা ব্যক্তিগত নয়।

এখানে একটা কিন্তু আছে। কিন্তুটা হচ্ছে, ইসলামে আইনের ধারণা সামাজিক, রাষ্ট্রীয় না। অর্থাৎ মুসলিম সমাজ ও হিন্দু সমাজের জন্য ইসলামী আইন এক না। মুসলমানরা কখনোই মদ বা শুকর খেতে পারবে না, কিন্তু হিন্দুরা পারবে। বাকী অমুসলিমরা তাদের অনৈতিকতা এমনভাবে প্র্যাকটিস করতে পারবে না, যাতে সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে যায়, এর পরিমাপ সেই সময়ের দায়িত্বশীলরা ঠিক করবেন।

আমরা কি বুঝলাম এর থেকে? সেকুলার আইন রাষ্ট্রীয় ও absolute
হবার কারণে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা বিষয়ক আইনও স্বৈরাচারী আইনে রুপান্তরিত হয়ে যায়। পাশাপাশি সেকুলার আইন প্রণয়নে আদালতের বিশাল প্রভাব থাকে। যারা অনির্বাচিত। এইটা একটা বিশাল সমস্যা। এ কারণেই মুসলিম বিশ্বে সেকুলারিকরণের ধারাটা মূলত উচ্চ আদালতের মাধ্যমেই শুরু হয় এবং ধর্মীয় নৈতিক সত্য থেকে বাঁচার জন্য সেকুলার রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বাধীনতার কথা বলে রাষ্ট্রীয় absolute আইন তৈরি করে, যে নিজেই অধিকার বিরোধী।