সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রেখে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না: রানা দাশগুপ্ত
একুশে জার্নাল ডটকম
নভেম্বর ০৬ ২০২২, ১৮:৫৭
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধুয়া তুলে রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে জিইয়ে রেখে আর যা–ই হোক, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গত ১৩ বছর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের সরকারের অবস্থানে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাঙালি জাতি মননে-মানসিকতায় ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। এর করুণ পরিণতি আজ মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী সব নাগরিক হতাশায় ও বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করছে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‘আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ’৭২-এর বঙ্গবন্ধুর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, গণফোরাম একাংশের সাধারণ সম্পাদত সুব্রত চৌধুরী, ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, নাট্যজন মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রধর্ম বিল উত্থাপনের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সি আর দত্তের নেতৃত্বে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গঠিত হয়।১৯৮৮ সালের ২২ মে এই বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে তৎকালীন স্পিকার শামসুল হুদা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল এ সংগঠন। সেই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছিল, এ বিল পাস করা হলে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্র থেকে কালক্রমে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেশ আজ ওই দিকেই ছুটছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ—এই দুই জেনারেল অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকে জায়েজ করার জন্য ইসলামকে ব্যবহার করেছেন। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই করা হয়। বাহাত্তর সালের সংবিধানের কথা বলে যেতে হবে। বারবার বলতে হবে। এই আন্দোলন থেমে থাকার নয়। আন্দোলন ছাড়া কোনো কিছুই আমরা ফিরে পাব না।’
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একটি ধর্মকে সামনে এনে জাতিকে বিভাজিত করতে সংবিধানের মাথায় তুলে দেওয়া হয়েছিল ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। পঞ্চদশ সংশোধনীতে স্বাধীনতার পক্ষের দল সেটাকে আরও সুন্দর করে লেখল, ‘দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে’, তার সঙ্গে যোগ করল ‘পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে তারা জাতিকে কেন বিভাজন করল, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রতিটি মানুষ এ দেশের। তিনি সাক্ষর না নিরক্ষর, গ্রামে থাকেন না শহরে, হিন্দু না মুসলমান, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান, সমতলের নাকি পাহাড়ের অধিবাসী—এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না। এটিই আমাদের সংবিধানের মূল চেতনা।