শ্রমিক সংকটে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে উলিপুরের কৃষক
একুশে জার্নাল ডটকম
মে ১১ ২০২২, ১৮:৩২
রোকন সরকার , কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।বিশেষ করে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে পানিতে লেপ্টে যাওয়া পাকা বোরো ধান অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে কাটিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না। এসব বোরো ধান কৃষকেরা নিজেরাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাটা-মাড়াই করছেন বলে দেখা গেছে।ফলে অতিরিক্ত মজুরি এবং শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো বোরো ধান কাটা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বোরো আবাদের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমি। অর্জিত হয়েছে ২২ হাজার ৩৫০ হেক্টর যার সম্ভাব্য উৎপাদন ৩.৫৪ মেট্রিক টন চাউল।তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো চাষ হয়েছে। বেশির ভাগ জমির ধান ২-১ সপ্তাহের মধ্যে কাটামাড়াই সম্ভব হবে।
সরেজমিনে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়ন ও তবকপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে পানিতে লেপ্টে গেছে পাকা বোরো ধান। কিন্তু সেগুলো সময়মত কাটাতে পারছেন না ধানচাষীরা।তারা জানান,প্রতিবছর এখান থেকে অনেক শ্রমিক বগুড়া, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ধানকাটার জন্য যায়।অপরদিকে এবার ঝড়ে ধান পানিতে পড়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিক থাকা ধানগুলো ৪০০ টাকা দরে মজুরিতে শ্রমিকরা কাটলেও অতিরিক্ত মজুরিতে পানিতে পড়া ধান কাটতে সহজেই রাজি হচ্ছেন না তারা।তাই কৃষকেরা নিজেরাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কাটা মাড়াই করছেন।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়া গ্রামের ধানচাষী বিপুল চন্দ্র অধিকারী বলেন, আমার ও কাকাদের মিলিয়ে চার একর জমিতে ধান আছে। ধান পেকেছে কিন্তু কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছি না। কারণ তারা অন্যদের ধান কাটায় ব্যস্ত। পানিতে পড়া ধান গুলো কাটার জন্য বেশী টাকা দিতে চাচ্ছি। তাতেও সায় মিলছে না।অবশ্য এর কারণটাও জানা,যারা ধান কাটে তাদের বেশীরভাগই বগুড়াসহ অন্য জায়গায় গিয়েছে। কামলা সহজে পাবো কই।
পৌরসভার নারিকেলবাড়ি এলাকার চাষি শাহ্ আলম মিয়া জানান, ১৫০ শতাংশ জমিতে তিনি হিরা-২ জাতের বোরোধান লাগিয়েছেন। বাতাসে কিছু ধান ধান নুয়ে পড়েছে এবং ভাইরাস ধরে কিছু ধান চিটা হয়েছে। প্রতি শতকে ধানচাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় তিনশত টাকা। বর্তমানে প্রতি শতাংশ ধান কাটতে শ্রমিকরা চাচ্ছে ১৫০ টাকা। উচ্চমূল্যে শ্রমিক নিয়ে ধান কাটা এবং মাড়াই করতে তার লোকসান গুনতে হবে। এতে করে বোরো ধান আবাদে যে খরচ, সব টাকা যদি ওদেরকেই দিতে হয়, তাহলে আমরা কী খাবো বলেন তিনি আক্ষেপ করেন।
তবে ধান কাটার শ্রমিকরা জানান, সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করে দিনে ৬০০/৭০০ টাকা পান। উচ্চমূল্যের বাজারে কৃষকরা এই পারিশ্রমিককে বেশি বললেও এ উপার্জনে তাদের সংসার চলে না।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমানে অর্থ দাবী করছেন। তাই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কৃষকদের সহযোগীর জন্য ৭টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার কাজ করছে। বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।