শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে কী ভাবছে ছাত্র সংগঠনগুলো

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ৩১ ২০২০, ০৮:২০

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলা নিয়ে বাংলাদেশে চলছে জল্পনা। চলছে পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি পাল্টা যুক্তি। আবার ট্রলিং ও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সামাজিক মিডিয়াতে। ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের দাবিদার বাংলাদেশে প্রচুর ডান ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠন রয়েছে। অনেকেই ছাত্রদের বিষয়টি নিয়ে এখনও নিরব। তবে নিরাপদ পরিবেশ না ফেরা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলার পক্ষে ইসলামী ছাত্র মজলিস। এই বিষয়ে ফেইসবুকে নিজেদের চিন্তা ও মনোভাব পরিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনসুরুল আলম মনসুর। তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো।

মনসুরুল আলম মনসুর

কবি’র সেই বিখ্যাত কবিতার কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে- ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়?’

গার্মেন্টস যদি খুলে দেয়া যায় তবে স্কুল-কলেজ কেন বন্ধ থাকবে, অফিস-আদালত যদি খুলে দেয়া হয় তাহলে মাদরাসা-মকতব কেন বন্ধ রাখা হবে, ইসকনের মন্দির যদি খোলা থাকে তবে মসজিদ কেন বন্ধ থাকবে? আপনাদের এইসব প্রশ্ন যৌক্তিক তবে বাস্তবতা বিবর্জিত!

আপনারা অফিস-আদালত আর গার্মেন্টসের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তুলনা করছেন কেন? গোটাকয়েক স্বার্থপর-বুর্জোয়া ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষায় বাধ্য হয়ে সরকার গার্মেন্টস-গণপরিবহন খুলে দিচ্ছে। জেনেশুনে দরিদ্র মানুষ ও পোশাক শ্রমিকদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বলে আপনারাও আপনাদের সন্তানদেরকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন?

আপনারা আপনাদের সরকার ও জনপ্রতিনিধিদেরকে চিনেন না? এরা তো তারাই, যারা মানুষের দুর্যোগের সময়েও ত্রাণের চাল ও তেল চুরিতে ব্যস্ত ছিল! যারা জনগণের দুঃসময়ে নিজেদের আখের গোছাতে মত্ত থাকে।

আপনাদের কি মনে হয়, আপনার সন্তান বা আপনার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে শাসকগোষ্ঠীর কেউ আপনার পাশে দাঁড়াবে? আপনি কি নিশ্চিত আপনার কোন প্রিয়জন অসুস্থ হলে এই দেশে সুচিকিৎসা পাবেন??

জ্বি, স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসা বন্ধ থাকলে আপনার সন্তানের পড়ালেখা নষ্ট হবে। আপনার সন্তানের ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যায় তখন কি হবে? যদি আক্রান্ত হয়ে সুচিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় তখন কি হবে?

অতএব পেরেশান না হয়ে আগে সন্তানদেরকে বাঁচতে দিন। বেঁচে থাকলে অনেক পড়তে পারবে! স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গল্পের ফানুস উড়িয়ে লাভ নেই। এদেশে যারা আইন প্রনয়ণ করে, সবার আগে তারাই আইন ভঙ্গ করে! অন্তত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা আইনের কাগজেই মানায়, বাস্তবে নয়।

প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নিজেদের ব্যবসা রক্ষায় নানাবিধ গল্পের ফাঁদ পাততে পারে। ছলেবলে আপনাদেরকে ভোলানোর চেষ্টা করবে। ভুলেও সেগুলো কানে তুলবেন না। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার আগে কোনভাবেই সন্তানদেরকে ঘরের বাহিরে বের করবেন না।

বিশেষত এদেশের কওমি মাদরাসাগুলোর অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সীমিত। শিক্ষার্থীদের তুলনায় আবাসন ব্যবস্থাও অনেক কম। খালেস-মুখলিস শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে কোনমতে মানিয়ে নেয়। অতএব পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে মাদরাসাগুলো।

কাজেই তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। ছয়মাস-একবছর জীবন থেকে চলে গেলেও শিক্ষিত হওয়া থেমে থাকবে না। অন্তত বেঁচে থাকা তো যাবে। এই এক বছর না হয় বাবা-মায়ের সাথেই পার করুক সন্তানেরা।

হায়াত-মউতের মালিক আল্লাহ! তাই বলে জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে নিজেকে ঠেলে দেয়া কিন্তু আত্মহত্যার শামিল। অতএব নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে হেফাজতের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে।

আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- এই রাষ্ট্র ও সরকার কখনো আপনার পাশে দাঁড়াবে না। এদের সিদ্ধান্তহীনতা, খামখেয়ালী ও অব্যবস্থাপনার জন্যই আজকের এই পরিণতি। এই অথর্ব, অদক্ষ-অযোগ্যরা আপনার কোন উপকারে আসবে না।

নিজে নিরাপদ থাকুন। পরিবারকে নিরাপদ রাখুন। বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস