শবে বরাআতের রাতে বর্জনীয় আমল সমূহ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ২০ ২০১৯, ১৫:২৯

 

মুফতী বিনইয়ামিন আল আশয়া’রী

সর্বসম্মত ক্রমে আগামি ২১ তারিখের দিবাগত রাত্রীতে বাংলাদেশে শাবানের ১৪ তম রাত্রী অর্থাৎ শবে বরাত পালন করবে। মুলতো সহিহ হাদিস সমুহের বর্ননা দ্বারা এত সত্যতা অকাট্টভাবে পাওয়া যায়। আমি আগামিকাল রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে আরো কিছু লেখার চেষ্টা করবো। বিশেষ করে শবে বরাতের ফজিলত সমূহ বর্ননা করবো ও কিভাবে আমরা সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করবো সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। তার আগে আমাদের দেশে শবে বরাতের নামে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার নীতিরীতি পালন করা হয় যেগুলি শরিয়তে সম্পুর্ন হারাম
, সেসব বিষয়ে আমি সামান্য কয়েকটি কথা বলবো।

যেমন —-

হালুয়া-রুটি খাওয়া: শবে বরাত উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে হালওয়া-রুটি খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। শুধু তাই নয় বরং সে দিন গরীব মানুষও টাকা হাওলত করে হলেও এক বেলা গোস্ত কিনে খায়। কারণ, সে দিন যদি ভাল খাবার খাওয়া যায় তাহলে নাকি সারা বছর ভাল খাবার খাওয়া যাবে। আর হালওয়া-রুটি খাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহুদ যুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গার পর শক্ত খাবার খেতে পারেন নি। তাই তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যে এ দিন ঘটা করে হালওয়া রুটি খাওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? প্রথমত: আমরা জানি ওহুদের এক রক্তক্ষয়ী ও অসম যুদ্ধে কাফেরদের আঘাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁত ভেঙ্গে দিয়ে ছিল। কিন্তু তা শাবান মাসে তো ওহুদ যুদ্ধ হয় নি। বরং তা হয়েছিল ৩য় হিজরী শাওয়াল মাসের সাত তারিখে। তাহলে এ সমবেদনা শাবান মাসের পনের তারিখে কি কিভাবে করা হয়?

২য়ত: হল, তিনি নরম খাবার কি শুধু একদিন খেয়ে ছিলেন? তাহলে এ কেমন ভালবাসা? আপনি শাবান মাসের পনের তারিখে কিছু হালওয়া-রুটি খেলেন আবার কিছুক্ষণ পর গরুর গোস্ত তো ঠিকই চাবিয়ে চাবিয়ে ভক্ষণ করতে থাকেন??

৩য়ত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কাফেরদের সাথে এক কঠিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীরে মত যুদ্ধ করে তার পবিত্র দাঁত হারিয়েছেন কিন’ আমাদের এসব নবী ভক্তের অধিকাংশের অবস্থা হল, আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া সাধারণ সুন্নতগুলোও পালন করে না। অনেকে তো ফরজ নামাযই ঠিকমত আদায় করে না। এটাই হল এদের তথাকথিত ভালবাসার নুমনা।
৩) ছবি ও মূর্তি তৈরি: শবে বরাত উপলক্ষ্যে দেখা যায় নানা রং বেরঙ্গের ছবি ও মূর্তি তৈরি কৃত মিষ্টান্নতে বাজার ছেয়ে যায়। অথচ ছবি ও মূর্তি-প্রকৃতি ইত্যাদি তৈরি করা ইসলামে হারাম। আবার আল্লাহর দেয়া রিযিক নিয়ে এভাবে খেল-তামাশা?!

৪) মীলাদ ও যিকির: শবে বরাত উপলক্ষ্যে মসজিদ, খানকাহ ও দরগায় সমূহে শুরু হয় মীলাদ মাহফিল। চলে মিষ্টি খওয়ার ধুম। চলতে থাকে বিদআতী পন্থায় গরম যিকিরের মজলিশ। এ সব কাজ দ্বীনের মধ্যে বিদআত ছাড়া কিছু নয়।

৫) কবর যিয়ারত: এক শ্রেণীর মানুষ এ রাতে গোরস্থান বা মাযার জিয়ারতে বের হয়। এমনকি কোথাও কোথাও এ প্রথাও দেখা যায় যে, একদল মানুষ এ রাতে ধারাবাহিকভাবে এলাকার সকল কবর যিয়ারত করে থাকে। এদের দলীল হল, শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাকী গোরস্থা যিয়ারতের হাদীস অথচ মুহাদ্দসিগণ উক্ত হাদীসটি জাল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করেছি।

৬) আলোক সজ্জা করা এবং আতশবাজী করা : শবে বরাত উপলক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হয়। সে রাতে আশ্চর্য জনকভাবে চলতে থাকে আতশবাজী বা পটকা ফুটানো। মূলত: এসব কাজের মাধ্যমে একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু অপচয় করা হয় না বরং এগুলো অগ্নি পুজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

৭) মৃতদের আত্মার দুনিয়াতের পূণরাগমনের বিশ্বাস: এ উপলক্ষ্যে দেখা যায় মহিলাগণ ঘর-বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে আতর সুগন্ধি লাগিয়ে পরিপাটি করে রাখে। বিশেষ করে বিধবা মহিলাগণ এমনটি করেন। এমনকি তারা কিছু খাবার একটুকরো কাপড়ে পুরে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। কারণ, তাদের বিশ্বাস হল, তাদের মৃত স্বামী-স্বজনদের আত্মা এ রাতে ছাড়া পেয়ে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে। এটা যে কতবড় মূর্খতা তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।মানুষ মারা গেলে তাদের আত্মা বছরের কোন একটি সময় আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা মুসলমানদের আকীদাহ নয়। বরং অনেকটা তা হিন্দুয়ানী আকীদার সাথে সাঞ্জস্যপূর্ণ।

[1] মুদ্দীন কিতাবে উল্লেখ করেছেন। দেখুন: ১ম খন্ড ২০৩ পৃষ্ঠা।
[2] আল মাউযূআত ২য় খন্ড ১২৭-১৩০ পৃষ্ঠা।
[3] আত্ ত্বারতুশী রচিত আত্তাহযীর মিনাল বিদা। পৃষ্টা: ১২১ ও ১২২।