শবে কদরের ফজিলত সহজে অর্জন হবে যেভাবে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ১৬ ২০২০, ১৪:৪৭

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী;

একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে অপার মহিমার রমজান। চলে যাচ্ছে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো। যে রাতসমূহের কোনোও একটিতে রয়েছে মহিমান্বিত শবে কদর। কোরআন-হাদিসে ভাষায় যেটিকে বলা হয়েছে লাইলাতুল কদর।

আমরা অনেকেই মনে করি শবে কদর সাতাশ রমজানের রাতে হয়ে থাকে। এ ধারণাটি আমাদের দেশেও অধিক প্রচলিত। অথচ তা নির্দিষ্ট নয়। সুনানু আবু দাউদের একটি হাদিসে ২৭ রমজানের কথা উল্লেখ থাকলেও এ সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহের কোনও একরাতে হয়ে থাকে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর।’ (বুখারি : ২০১৭)

এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছ। অন্য কোনও রাতের বেলায় এ রাতের মতো ফজিলত ও মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়নি। পূর্ন একটি সূরায় আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মহিমা ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আর আপনাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী ?

লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে জিবরাইল (আ.) ও ফেরেসতাগণ অবতরণ করেন তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময় সে রাত, ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত। (সুরা কদর)

এ রাতে আল্লাহ তায়ালা লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল করেছেন এবং এ রাতকে হাজার মাস থেকেও উত্তমরূপে মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। এক হাজার মাসে তিরাশি বছর চারমাস হয়। আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ওই একটি মাত্র রাত ইবাদাতে ব্যয় করার সৌভাগ্য পেলে ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতের পূণ্য লাভ করবেন। কী অভাবনীয় সুসংবাদ ও প্রতিদান! একটি রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়েও অধিক মর্যাদার। ক্যালকুলেশন করলে ৮৩ বছর ৪ মাসে হয় ৩০৪১৫ দিন। তার মানে- এ রাতে ১ টি টাকা দান করে ৩০৪১৫ টাকা দানের সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়! ৫ টাকা দন করে ১৫২০৭৫ টাকা দানের পুণ্য অর্জন করা যায়! আমাদের কার পক্ষে সম্ভব- একাধারে ৮৩ বছর ইবাদত করা আর দান-সদকা করা? আমাদের জীবনই বা কত দিনের?

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি : ১৬৬৬)

আসুন, আমরা এ মহিমান্বিত রাতের সন্ধান লাভে সচেষ্ট হই। বিজোড় রাতগুলো জাগ্রত থেকে থেকে অধিক পরিমাণে ইবাদত-আরাধনা, দান-সদকা করি। শবে কদর যেহেতু নির্দিষ্ট নয়, তাই আমরা যদি প্রতিরাতে নিজ নিজ সামর্থ্যের আলোকে কিছু টাকা দানের নিয়তে একটা ঝুড়ি বা বক্সে রাখি কিংবা পৃথক করে রাখি, তাহলে আশা করা যায়, এ পদ্ধতিতে আমাদের জন্য সহজেই শবে কদরে দান করার ফজিলত অর্জন হয়ে যাবে ইনশ-আল্লাহ। পাশাপাশি

সকল প্রকার পাপাচার থেকে পবিত্র থেকে তাহাজ্জুদ, তিলাওয়াত, জিকির, ইত্যাদি পুণ্যকাজের মাধ্যমে জীবনকে জ্যোতির্ময় করে তুলি। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন। আমিন।