শতাধিক সংগঠনকে নিয়ে বিডি আর্তসেবার বর্ষপূর্তি উদযাপন
একুশে জার্নাল
আগস্ট ০৩ ২০১৯, ১৩:৫৩
তামীম হুসাইন শাওন: আর্তসেবা ফাউন্ডেশনের ২য় বর্ষপূর্তি উপলখ্যে দোসরা আগষ্ট শুক্রবার বিভিন্ন সংগঠনের সেচ্ছাসেবিদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ শিশু কল্যান পরিষদ মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় শুরু হয়। শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মাওঃ আসাদ জামিল এবং বিডিকে নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন আবু মোহাম্মাদ জুনাইদ। শতাধিক সেচ্ছাসেবি সংগঠনের সংগঠকগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফরিপোর্টার শামিম আহমেদ, হাফেজ মাওঃ ডাঃ হুসাইন মোহাম্মাদ, বিডি সমাচারের স্টাফরিপোর্টার তাহসান হোসেন, ঘাসফুল সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সালেহ উদ্দিন, রান ফর বেটার বাংলাদেশের সভাপতি মিঠুন দেবনাথসহ আরো অনেকে। আলোচনা সভায় সকল সংগঠকগণ অনুভতি প্রকাশ করেন এবং মতামত ব্যক্ত করেন। প্রত্যেকেই বিডি আর্তসেবা ফাউন্ডেশনের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন। এসময় আলোচকগণ সকল সেচ্ছাসেবি সংগঠনের কাজকে বেগবান করার কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিডি আর্তসেবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজি আব্দুল হাকিম, সহ-সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজু, সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের ইসলাম, অর্থ সম্পাদক ফেরদাউস আহমাদ আবির ও জয়েন সেক্রেটারি ইমরান হোসেনসহ সংগঠনটির কার্যনির্বাহি সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির মন্ত্রমুগ্ধ সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সহকারী প্রচার সম্পাদক তাহসান ইসলাম হান্নান। পুরো অনুষ্ঠানটির ভিডিও চিত্র ও স্থিরচিত্র ধারণ করেন তামীম হুসাইন শাওন।
তাদের কার্যক্রমঃ
জরুরী রক্তের প্রয়োজনে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সদা আর্তের পাশে বিডি আর্তসেবা ফাউন্ডেশন। সমাজের অসহায় ও দুর্বল মানুষের জন্যে সবসময়ই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া একদল মানবসেবীর সংগঠন বিডি আর্তসেবা ফাউন্ডেশন।
২০১৭ ইং সালের ২৭ জুলাই ক’জন দেশপ্রেমী উদ্যোমী তরুণের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে সংগঠনটির। তারপর থেকে ধীরেধীরে সমাজের বিভিন্ন স্থরে অধিকার বঞ্চিত মানুষ ও মানবতার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে তারা। মুমূর্ষ রোগীর জরুরী রক্তের প্রয়োজনে রাত-বিরাতে মেডিকেলে দৌড়-ঝাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের ধারেধারে, ঈদের আমেজে যখন পৃথিবী হাসে আর তা দেখেদেখে হতদরিদ্রতাই আজন্ম পাপ বলে মেনে নেওয়া শিশুরা চুপ মেরে থাকে তখন তাদের মুখে হাসি ফুটাতে ছুটে যায় নিজের শপিংয়ের টাকা বাচিয়ে তাদের আনন্দটা ব্যাগভর্তি করে, তীব্র শীতের রাতেও খোলা আসমান যাদের উষ্ণতার একমাত্র সম্বল হয় তাদের জন্যে সারারাত ব্যাপী ফুটপাতে ঘুরেঘুরে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করে যায় যারা তাদের নিয়েই আজকের ৩য় বর্ষবরণ ও ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন হয়।
শীতবস্ত্র বিতরণঃ
শীতবস্ত্র। শব্দটা শুনার সাথেসাথেই চোখের সামনে ভেসে উঠে উষ্ণড্রেস, কনকনে শীত, আগুন পোহানো একদল শীতার্থের চেহারা। যারা ঢাকায় থাকেননা বা থাকলেও রাতের ঢাকার সাথে পরিচিত না, তারা শীতেররাতে ঢাকার ফুটপাতের কি অবস্থা তা অনুমানও করতে পারবেননা। যাই হোক কনকনে শীতে যখন আমরা লেপ কম্বলের নীচে থেকেও কাঁপাকাপি করি তখন ঢাকার ফুটপাতে আমাদের মতই রক্তেমাংসের বহু আদমসন্তান লেপ-কম্বল ছাড়াই খোলা আকাশের নীচে তারা রাত্রি যাপন করে যাচ্ছে। যেন আর্থিক সংকটই তাদের জীবনের বড় অভিশাপ। বিডি আর্তসেবা ফাউন্ডেশন এই ধরণের মানুষদের ধারেধারে ঘুরে প্রকৃত অসহায় এবং দুর্বলদের মাঝে প্রতি বছর কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
পুষ্পমেলা ইশকুলঃ
আমাদের অনেক পুরানো পরিকল্পনাধীন এবং সদ্য বাস্তবায়িত একটি স্বপ্নের নাম ‘পুষ্পমেলা ইশকুল ’। সামাজিক জীবনে শিক্ষাঅধিকার বঞ্চিত অসহায় অবহেলিত একটি সমাজ হচ্ছে- পথশিশু। সংসারে দুমুঠো ভাত জুটেনা যাদের তাদের আবার কিসের স্কুল আর কিসের পড়াশোনা! অভাবের তাড়নায় তাদের চিন্তায় মননে বেড়ে উঠে ‘পড়াশুনা করে কি হবে? তারচে বরং টোকাইয়ে পয়সা মিলবে ঢের!’ পড়াশোনা হয়ে উঠুক সকলের। বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার বাড়াতে- স্বাক্ষরতায় বাংলাদেশ শ্লোগান নিয়ে গত ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে শুরু করি পুষ্পমেলা ইশকুল। আশা করি এখান থেকে গড়ে উঠবে আমাদের ভবিষ্যৎ।
সেই সাথে মেধাবীমুখদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সাংস্কৃতিক আয়োজনঃ
আমাদের সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সমূহে আমরা বিভিন্ন জ্ঞানমূলক কুইজ প্রতিযোগিতা এবং ভ্রাম্যমাণ রক্তের গ্রুপ টেস্টসহ রক্তদানের ক্যাম্পেইন করে আসছি।
ইফতার বিতরণঃ
সারাদিন রোযার পর দিনশেষে যখন ক্লান্ত রোজাদার সাধারণ যাত্রীরা চলা-ফেরা করে গণপরিবহণে যাদের কাছে একবোতল পানি কিনে খাওয়াই মনে হয় বিরাট সৌখিনতা, তাদের মাঝে ইফতারি বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছি আমরা।
কাফন-দাফন সাপোর্টঃ
‘কাফন-দাফন সাপোর্ট’ নামে একটি প্রকল্প চালু আছে আমাদের সংগঠনে। প্রায়শই দেখা যায় অনেক মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনে বিলম্ব হচ্ছে। অর্থনৈতিক অভাবের কারণে এসবের খরচভার নিতে পারেনা মৃতের পরিবার। এমন পরিবারকে কাফন-দাফনে সাপোর্ট করে যাচ্ছি আমরা।
এমনসব আলোচনা এবং সংগঠনটির পরিচালিত কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা শেষে সামাজিক কাজে বিশেষ অবদান রাখায় ৭০ টি সংগঠনকে সম্মাননা ক্রেস্ট, সর্বোচ্চ রক্তদাতাদেরকে মেডেল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এবং বিডি আর্তসেবা ফাউন্ডেশনকেও অনেকগুলো সংগঠন থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।





