শতভাগ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ২৮ ২০২০, ২৩:২৯

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জনসাধারণের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে এবং বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। কিন্তু মাতৃমৃত্যু এখনও অন্যতম চিন্তার কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞানুযায়ী, একজন নারীর গর্ভাবস্থা, প্রসবাবস্থা কিংবা প্রসবোত্তর ৪২ দিনের মধ্যে শারীরিক জটিলতার কারণে বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার, স্ট্রোক, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস কিংবা দুর্ঘটনাব্যতীত মৃত্যু ঘটলে, তাকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ অসচেতনতা। গর্ভকালীন অবস্থায় মা‌ ও পরিবারের সচেতনতা মা ও শিশুর নিরাপদ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহরের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলে অসচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তুলনামূলক অনুন্নত। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় (চর, হাওড়, পাহাড়ি এলাকা) পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারণে সহজে গর্ভকালীন সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিহীনতা, প্রসবকালীন সংক্রমণ,অনিরাপদ গর্ভপাত , অনিরাপদ সন্তান প্রসব ইত্যাদি মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাল্যবিবাহ মাতৃমৃত্যু রোধের অন্যতম অন্তরায়। বাল্যবিবাহের কারণে অল্প বয়সেই একজন নারীকে গর্ভধারণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ এর রিপোর্ট বলছে , বিয়ের পর কিশোরী বয়সে মা হচ্ছেন ২৮ ভাগ নারী। কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যা মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গর্ভাবস্থায় তথা সন্তান জন্ম দেয়ার পূর্বে একজন নারীকে অন্তত আটবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিজের শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে। এর ফলে গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অর্থাৎ নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৭২৪ জনের বিপরীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে মাত্র একজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিকের অদক্ষ চিকিৎসা কর্মীর শরণাপন্ন হচ্ছে ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসার অভাবে ঘটছে দুর্ঘটনা।এছাড়া গর্ভধারণকালে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে মাতৃত্বকালীন সেবা না নেওয়ার কারণেও অনেক মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাতৃ মৃত্যুর আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে দারিদ্রতা। দারিদ্রতার কারণে জরুরী চিকিৎসার অভাবেও মাতৃমৃত্যু ঘটছে। মাতৃমৃত্যু রোধে মা, পরিবার ও সমাজের সকল স্তরের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে হবে সেই সাথে দক্ষ চিকিৎসা কর্মীর অভাব পূরণ করতে। বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইউএনএফপিএর মতে, মাতৃ মৃত্যুর প্রতিরোধের জন্য চারটি উপাদান অপরিহার্য। প্রথমত, জন্মপূর্ব যত্ন।কোনো মহিলা সন্তানসম্ভ্যভা হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিরীক্ষণের জন্য মায়েদের কমপক্ষে চারটি প্রসবকালীন চেক করতে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, এই সময় ডাক্তার, সেবিকা এবং ধাত্রীদের জরুরি অবস্থা যেনো উপস্থিতি থাকে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা করার এবং অনযনয জটিলতার সনাক্ত করা। তৃতীয়, মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণগুলি মোকাবেলার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা ও যত্নশীল হতে হবে যেমন রক্তক্ষরণ, ক্ষত, অনিরাপদ গর্ভপাত, উচ্চ রক্তচাপ রোগ এইসব সমস্যা হলেও যেন দ্রুত্ব বাবস্থা নেওয়া যায়। অবশেষে, প্রসবের পর ছয় সপ্তাহ জন্মোত্তর যত্ন। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ এর তথ্য অনুযায়ী মাত্র ১৮ শতাংশের কম গর্ভবতী নারী মানসম্পন্ন সেবা পেয়ে থাকেন। মানসম্পন্ন চিকিৎসার অভাবে মায়ের পাশাপাশি শিশুর জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। এই ঝুঁকি নিরসনে যথাসম্ভব সকল গর্ভবতী নারীকে মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনতে হবে। এর জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি গর্ভকালীন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে ।

মাতৃমৃত্যুর বিভিন্ন কারণ সমূহ চিহ্নিত করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি একটু সচেতন হলেই প্রায় শতভাগ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

শাহরিয়ার কবির রিমন
শিক্ষার্থী,
আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
মোবাইল: ০১৮৬২৬৩৪০৩৪
Email: [email protected]