লকডাউন ভেঙে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ‘সালিশ’ অনুষ্ঠিত

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৪ ২০২০, ১৫:০৩

এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন,রংপুর;

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন সহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ “সংক্রামক রোগ” (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ধারা মোতাবেক রংপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মতাবেক, অবরুদ্ধ ঘোষণার গণবিজ্ঞপ্তি কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে,জনমানুষের ভীড়ে রাতের আধারে গ্রাম্য সালিশে বিচারের নামে প্রহসনের অভিযোগ উঠেছে মিঠাপুকুর উপজেলার “বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ” বিরুদ্ধে,এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হলে, মানবাধিকার অপরাধ লংঘন সহ, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহ,আইনি বিচারের দাবি জানিয়েছেন, সচেতন নাগরিক কমিটিসহ ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

বিশ্বব্যাপি মহামারি নোভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যখন সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন ঠিক সেই মূহুর্তে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস,আদালত জরুরী ভিত্তিতে ছুটি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি এই ভাইরাস থেকে বাঙ্গালী জাতিকে রক্ষা করতে জরুরী আইন গ্রহণ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন সরকার। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে লোকজনকে ঘরে ফিরে নিতে হাট-বাজার বন্ধ ঘোষনা করেন। ঔষধের দোকান ব্যাতিত বাকি সকল দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেন। এছাড়া যে স্থানে করোনা রোগীকে সনাক্ত করা হয়েছে সেই স্থানের আশেপাশের বাড়িকে “লকডাউন” করেছে প্রশাসন।

সরকারের এতো কিছু আইনকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে রাতের আধারে জনসমাগম করে বিচার করার অভিযোগ উঠেছে রংপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নে চৌকিদার বাবুল কর্তৃক সুকৌশলে ৯ই এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে মেয়েসহ এক পুলিশ কনস্টেবলকে নয়ারহাট বাজারে আটক করে। পরে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। জানা যায়-কাউনিয়ার টেপামধুপুর এলাকার রবিউল ইসলাম নামে দিনাজপুর পুলিশ লাইনে কর্মরত ঐ কনস্টেবেলকে জায়গীরহাট দূর্গাপুর এলাকার ভাড়া বাসার মেয়েসহ আটক করে। বিচারের নামে চলে নাটকীয় ঘটনা। ছেলের পরিবারের লোকজন আসলে বিয়ে দিবে বলে কাজী ডাকে চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান,কিন্তু মেয়ের অভিভাবকের সংকটে কালক্ষেপন করলে জরুরী প্রয়োজনে চেয়ারম্যান দায়িত্বভার দিয়ে যান ইউপি সদস্য মকবুল ও রশিদুল ইসলামকে। গ্রাম্যভাষায় ঝোপবুঝে কোপ মেরে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে সটকে পড়েন দুই মেম্বার। আর রাত সাড়ে ১০টা পযর্ন্ত অপেক্ষায় থাকার পর ন্যায্য বিচার না পেয়ে পরিষদে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন এতিম মেয়ে ও তার মা। পরে স্থানীয় যুবকরা মেয়ে ও মাকে অনেক বুঝিয়ে সুষ্ঠু বিচারের জন্য আদালতের কথা বলে বাসায় পাঠিয়ে দেন।

একই সপ্তাহে কোমরগঞ্জ বাজারে রাত সাড়ে বারোটার পর কাশেম মিয়ার চাতালে ইউনিয়নের আলীমোড় এলাকার “এক বধু দুই স্বামীর ” বিচার করেন চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান। বিচার জটিলতা দেখা দিলে এই বিচারের জন্য তিনি অযোগ্য বলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়ে বিচার ভেঙ্গে দেন।

পরের সপ্তাহে কোমরগঞ্জ বাজারে দক্ষিণ পাশে মুরারিপুর গ্রামে অবৈধ কাজ করতে গিয়ে একজন মুদি ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয় যুবরা। সারারাত ধরে বিচারে প্রথমে বিয়ের সিদ্ধান্ত হলে শেষ রাতে আট দিনের জন্য সময় নেন চেয়ারম্যান।

অপরদিকে একই উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মিঠাপুকুর উপজেলা শাখার আয়োজনে বিচারের নামে লোকজমায়েতের চাঞ্চল্যকর মধ্যরাতের ছবি দিয়ে নিজ ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করেন সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম ইমন। ছবির সতত্যতা খুজতে গিয়ে জানা যায়- উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এর বাসার সামনে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিচার করা হয়। সেখানে উপজেলা মানবাধিকার শাখার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান,অর্থ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম সোহাগ ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিধু চন্দ্র বর্মনকে দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক আশিকুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের ঐ বিচারে ডাকে সেই জন্য বিচারে তারা উপস্থিত হন। এই বিষয়ে জাকির হোসেন সরকার বলেন- মানবাধিকারের লোকের সাথে আমার কোন কথা হয় নাই তাদের ডাকার আমার প্রশ্নই আসে না। তবে আমার কাছে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আসছিলো-আমি তাদের শান্ত থাকতে বলেছি তবে কোন বিচার হয়নি। আর ছবির বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন এই ছবিটি সেই দিনের না এটা পুরনো কোন একটি ছবি দিয়েছে। ছবিতে থাকা একজন লোককে দেখিয়ে তিনি বলেন ওনি গত দিনে উপস্থিত ছিলেন না সুতরাং ছবিটি সংরক্ষিত থেকে পোষ্ট করা হয়েছে। লকডাউনে এই বিচার নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেছে অনেকে।

বিচারের এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ? আর সচেতন মহল বলছেন মিঠাপুকুরের প্রশাসন হলো-অবাক মিঠাপুকুরের নিরব দর্শক ।

পাশ্ববর্তী সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের চাড়ানীপাড়ায় বউয়ের দাবীতে তিন মাসের অন্তঃসত্তা ছেলেমেয়ের বিচারের নামে ঘটেছে প্রহসন। লকডাউনে রাতে আধারে বিচার করতে গিয়ে পুলিশে কর্মরত রোকনের বাড়ি ঘেড়াও করে এলাকাবাসী। জানা যায়- বিচারের এপর্যায়ে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গণপিটুনী শুরু করলে বাড়ির বাইরে থাকা লোকজন উত্তোজিত হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানায় খবর দেয় চেয়ারম্যান সোহেল রানা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় ছেলে ও মেয়েকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ফলে ছেলের নামে পৃথক পৃথক কয়েকটি মামলার বাদী হন ঐ মেয়ে। এ ঘটনায় ঐ এলাকায় উত্তোজনা বিরাজ করছে। এঘটনার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।