লকডাউনে টিউশনি বন্ধ থাকায় বিপাকে জবি শিক্ষার্থীরা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ৩০ ২০২০, ১২:৫০

জবি প্রতিনিধি;

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার রাজত্ব। পৃথিবী আজ যেন মানবশূন্য! চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। কোটি কোটি মানুষের আর্তনাদে প্রকম্পিত বিশ্বের প্রতিটি জনপদ। কিছুটা অস্বাভাবিকতার ছোঁয়ায় সব কিছুই এলোমেলো মনে হচ্ছে। মহামারি করোনাভাইরাস মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে ধস নামিয়ে দিয়েছে। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তরা হয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্ত! আর নিম্নবিত্তবানরা যে কি হচ্ছে তা সবার বুঝার বাকি নেই! এমন অবস্থায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সম্পূর্ণ অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থীরা।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের পড়াশুনার খরচ থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়া, হাত খরচ সবই চলে টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরি করে। কিন্তু সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় তাদের এই উপার্জনের পথ। ফলে দেশের এই সংকটকালে বিপাকে পড়েন এসব শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ থেকে নিজ পরিবারের সঙ্গে গ্রামে অবস্থান করছি। আমাদের পরিবার সবাই গ্রামের সাধারণ কৃষক। পড়াশোনা খরচ চালানোর একমাত্র উৎস কৃষি কাজ। পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করে নিজের খরচ চালাই। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশে সকলেই ঘরবন্দী হয়ে আছি। এরই মধ্যে বাসার মালিক গত কয়েক মাসের বাসা ভাড়ার জন্য আমার ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। পরিবারের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি সবাই। সেখানে এই বাসা ভাড়ার টাকা বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাবুব বলেন, ‘সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন বন্ধ আছে। আবার কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে সেটিও এখন নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই টিউশন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন আমাদের টিউশন ও নাই যার কারণে বাসা ভাড়া দিতে রীতিমত কষ্ট সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ইমন মিত্র বলেন, ছোট বেলায় থেকেই টিউশন করিয়ে নিজের লেখাপড়া চালাচ্ছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ঢাকায় ভালোই টিউশনি করছিলাম। যা দিয়ে নিজের থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনার খরচ চালানোর পাশাপাশি ছোট বোনের পড়াশুনাটাও চালাচ্ছিলাম। মাস শেষে মায়ের হাতেও কিছু টাকা দিতাম, যা দিয়ে পরিবারের খরচ ভালোই চলছিলো।কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে তার টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হয়। লকডাউনে টিউশন বন্ধ থাকায় মেস ভাড়া, নিজ পরিবারের খরচ চালানো হয়ে উঠেছে দুষ্কর।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয় বলেন, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে উপার্জন না থাকায় নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও যেসব বাসায় পড়াতেন, সেসব বাসায় আবার যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কারণ এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ধনীরা খুব বেশি সচেতনতা মেনে চলছেন। কীভাবে আবার সবকিছু ঠিক হবে এ নিয়ে খুব শঙ্কায় আছেন তিনি। শুধু এই শিক্ষার্থীই নন, বিভিন্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়া আরো অনেকে এই সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন তাহলে খুবই উপকৃত হবেন তারা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যারা টিউশনি করে পড়াশুনার খরচ চালায় এমন শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করতে পারে এবং সাহায্য করতে পারে।

‘করোনা মোকাবেলায় জবিয়ানের পাশে জবিয়ান’ ফান্ডের সেচ্ছাসেবক সুবর্ণ আসসাইফ বলেন, ফান্ডের উপহারের জন্য যেসব শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করছিলেন, তাদের অধিকাংশই ঢাকাতে টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের পাশেও দাঁড়াতো। কিন্তু টিউশন বন্ধ থাকায়,পরিবার নিয়ে তারা বিপদে পড়েছে। লকডাউন উঠিয়ে নিলেও এসমস্ত শিক্ষার্থীদের ও তাদের পরিবারের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কেননা এদের আয়ের উৎস টিউশন।

উল্লেখ্য যে, করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে সরকার কয়েক দফায় ছুটি বৃদ্ধি করেছে। সর্বশেষ এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয় এবং ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্রিফিং অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির মেয়াদকাল, যা শিক্ষার্থীদের ওপর সৃষ্টি করছে বাড়তি চাপ। তাই খুব দ্রুতই স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরার প্রত্যাশা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের।