রিফাত হত্যার প্রতিবাদে কোটা আন্দোলনকারীদের মানববন্ধন আজ
একুশে জার্নাল
জুন ২৮ ২০১৯, ১২:০৯
বরগুনা শহরে রিফাত শরীফকে স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত শাস্তির দাবি আজ মানববন্ধন করবেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। আজ বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এ মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।
এজন্য ফেসবুকে একটি ইভেন্টও (দেখতে এখানে ক্লিক করুন) হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘রিফাত হত্যার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। বিকালঃ ৪টা স্থানঃ রাজু ভাস্কর্য, ঢাবি। রাষ্ট্র যদি বিশ্বজিতের খুনীদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে পারতো, তাহলে হয়তো আর কোন রিফাতকে খুন হতে হতো না। খুনীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে একটা কঠোর বার্তা পৌঁছাতে পারলে, হয়তো আজকে এই পরিণত আমাদের দেখতে হতো না।
কিন্তু? সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন কৌশলে রক্ষা করা হচ্ছে, যেকারণে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর কত? আসুন আমরা জেগে উঠি।বিশ্বজিৎ গেলো রিফাত গেলো! এরপর হয়তো আমি কিংবা আপনি……..!! এই রাষ্ট্রে আমরা কেউ নিরাপদ নয়। আসুন আমরা প্রতিবাদ করতে শিখি, সকলে একতাবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের রুখে দিই। চলে আসুন মানববন্ধনে, সন্ত্রাসীদের প্রতিহতে করতে আমরা সাধারণ জনগণ রাজপথে নেমে তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলি।’
রিফাতকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত নয়নসহ বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছে। বুধবার নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রিফাত শরীফ বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরো দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দৃর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যলিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এর ভিডিওচিত্র ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্রী। তাকে বিয়ে করা নিয়ে নয়নের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব চলছিল। এজন্য প্রতিদিন আয়েশাকে কলেজে পৌঁছে দিতেন রিফাত। স্ত্রীকে কলেজে দিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হন রিফাত শরীফ।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে তাঁর ছেলে বরগুনা পুলিশ লাইনস এলাকার আয়েশা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। এর পর থেকে আয়েশাকে নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামের এক তরুণ তাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। একপর্যায়ে নয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করতে থাকে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে নয়নের বিরোধ হয়। এর জের ধরে নয়ন ও তার বন্ধু রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও রাব্বি আকন ফরাজীসহ কয়েকজন মিলে রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রিফাতের বুকে, ঘাড়ে ও পিঠে গুরুতর আঘাত থাকায় প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল পাঠানো হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে হাসপাতালে আনার পর দ্রুত তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
বরগুনার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। নয়নকে গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশ ও ডিবি সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছে। নয়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক মামলা আছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।