রাজশাহীর দুর্গাপুরে ৫ লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে মাদক মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ডিবি পুলিশ
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ৩১ ২০২২, ১০:৪৪
দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুরে দাবি করা ঘুষের ৫ লাখ টাকা না পেয়ে হেরোইন ও ইয়াবাসহ স্বামী স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিরুদ্ধে। জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের কলিমউদ্দিনের ছেলে সাহাবুল ইসলাম (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী শাহানারা বেগম (৪০)। গ্রেপ্তারকৃতদের শয়ন ঘর থেকে ইয়াবা ও হেরোইন উদ্ধার করা হলেও থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে এবং জব্দ তালিকায় বাড়ির পাশের গোয়াল ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা রীতিমত রহস্যজনক।
গ্রেপ্তারকৃত সাহাবুলের মেয়ে জামাই রিমন অভিযোগ করেন, শনিবার বেলা ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ তাঁর শ্বশুরের বাসায় যায়। বাড়িতে ঢুকেই তারা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। শয়ন ঘর ও বাড়ির আশেপাশে তল্লাসি চালিয়ে কোনো কিছু না পেলেও পরে নাটক সাঁজান ডিবি পুলিশ। শয়ন ঘর থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে নারী কনস্টেবল আছমা খাতুনকে ঘরে ঢুকিয়ে দেন জেলা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার। একটু পরে ওই নারী কনস্টেবল চিৎকার করে বলেন ‘স্যার পেয়েছি’। পরে সবাই ঘরে ঢুকে বিছানার তোষকের নিচ থেকে একটা নীল রংয়ের প্যাকেট বের করেন। তবে ওই প্যাকেটের ভিতর কি ছিলো উপস্থিত কাউকে দেখায়নি পুলিশ।
রিমন আরও বলেন, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার আমার শ্বশুরের কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এই টাকা দেয়া হলে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমার শ্বশুর টাকা দিতে অস্বীকার করলে এক লাখ টাকা কমিয়ে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। আমার শ্বশুর তাতেও রাজি না হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে টানা হেচড়া করে গাড়িতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যান। পরে আমার শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের কাছ থেকে ইয়াবা ও হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
সাহাবুলের ভাতিজা তারিকুল ইসলাম তপু অভিযোগ করেন, ডিবি পুলিশ শয়ন ঘরে ঢুকে তল্লাসির নামে সবকিছু তছনছ করেন। এমনকি ওয়ারড্রব ও আলমারির তালা ভেংগে ফেলেন। তাৎক্ষনিক কিছু না পেলেও হয়রানির উদ্দেশ্যে ইয়াবা ও হেরোইন উদ্ধারের মিথ্যা নাটক মঞ্চস্থ করে পুলিশ।
জানা গেছে, এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম সরকার বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেছেন। শয়ন ঘর থেকে উদ্ধার করলেও রহস্যজনক কারনে জব্দ তালিকায় বাড়ির পাশের গোয়াল ঘর দেখানো হয়েছে। ঘটনার সময় স্থানীয় অনেক মানুষ জমায়েত হলেও কাউকে কিছু দেখায়নি পুলিশ। থানায় নেয়ার পরে পুণরায় ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। ২ লাখ টাকা দেয়া হলে চাচাকে রেখে আমার চাচীকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমরা তাতেও রাজি না হলে মিথ্যা মামলা দেন ডিবি পুলিশ।
জানতে চাইলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবির কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে এর আগেও মাদকব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে সাহাবুলের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় তাঁর বাড়ির পাশে গোয়াল ঘর তল্লাশি করে ৫৬ গ্রাম হেরোইন ও ৫০পিস ইয়াবাসহ তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম সরকার দুর্গাপুর থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করেন। আসামীদের ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। রোববার তাদের আদালতে হাজির করা হবে।